টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
রোহিঙ্গারা এক রাতেই ৭৫ একর সৃজিত সামাজিক বনায়নের চারাগাছ কর্তন করে ন্যাড়া করেছে সবুজ পাহাড়। এতে হতদরিদ্র উপকারভোগীদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি পরিবেশ মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়েছে। পাহাড় কেটে সমান্তরাল করলেও এখনো বেখবরে রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতির সম্মুখীন উপকারভোগীরা বার বার বাধা দিলেও রোহিঙ্গারা তোয়াক্কাই করছে না তাদের। কতিপয় কিছু এনজিও সংস্থা ও পুরাতন রোহিঙ্গাদের যোগসাজশে সৃজিত সামাজিক বাগান অবৈধভাবে জবর দখল করে বসতি স্থাপনের জন্য ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ২৬ নভেম্বর রবিবার উপকারভোগী ও বনবিভাগের সদস্যরা সকাল ৮ টার দিকে সৃজিত বাগান থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। রাতারাতি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা সেখানে টয়লেট, অফিস ঘর ও শেল্টার নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করলে তা বন্ধ করে দিয়েছে বন কর্তৃপক্ষ।
সরেজমি পরিদর্শন করে দেখা যায়, বনভুমির বিশাল এলাকা জুড়ে রোহিঙ্গারা অবস্থান করেছে। ঢালু পাহাড়ের মাটি কেটে সমান করছে, তিন থেকে চার ফুট দৈর্ঘের হাজার হাজার রোপিত চারাগাছগুলো কেটে সাবাড় করেছে। কেউ কেউ বাসা নির্মাণ কাজে ব্যস্থ রয়েছে। দেশি বিদেশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার লোকজনের ব্যাপক আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। শেল্টার নির্মানের জন্য বাঁশ, গাছসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছে। ব্র্যাক এনজিও সংস্থা লেট্রিন তৈরির কাজে রয়েছে। পুর্বপরিকল্পিতভাবে অবৈধভাবে বাগান দখল করে রাতারাতি এনজিও সংস্থা কর্তৃক শেড নির্মানের ব্যবস্থা করায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। এছাড়া এসব রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত ২৬ অক্টোবর বুছিডংয়ের পুঁইমালি থেকে এদেশে আশ্রয়ে আসা রোহিঙ্গা মোঃ জাকারিয়া জানান, মানবিক কারণে এদেশের সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এতোদিন তারা ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন ভাড়া বাসা ও পরের জমিতে অবস্থান করলেও তারা জানতে পারে যে নয়াপাড়ার এই বাগানটি সরকারি জমি। তাই তারা সেখানে আশ্রয়ে চলে আসেন।
মংডুর রইঙ্গাদংয়ের বদরুল ইসলাম জানান, কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসের পরিবেশ নেই। শুনেছি সেখানে শিশুদের ব্যাপর রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হাতির পাল এসে আক্রমণ করছে। এতো দিনে যে ত্রাণ পেয়েছি সেগুলো থেকে অর্ধেক বিক্রি করে জমির ভাড়া দিয়েছি। আর সম্ভব না হওয়ায় ২৫/৩০ হাজার রোহিঙ্গারা পরামর্শ করে সরকারি বনভূমিতে আমরা আশ্রয়ে চলে আসি।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী নয়াপাড়া এলাকার মোঃ জোবাইর বলেন, অনেক টাকা খরচ করে ৭৫ জন উপকারভোগী সামাজিক বনায়ন সৃজিত করছিলাম। অংশীদারে থাকা সকলে অনেক গরিব। কেউ মাটি কেটে ও শ্রমিক হয়ে বাগানটি সৃজিত ও রক্ষা করেছি। হঠাৎ করে অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে রাতের আঁধারে রোহিঙ্গারা এখানে বসতি স্থাপন করলো তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। এছাড়া উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
জানা যায়, টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন মোছনী বীটের নয়াপাড়ায় ২০০৩-০৪ সনের সামাজিক বনায়ন যা পরবর্তীতে ২০১৬-১৭ অর্থ সালে দ্বিতীয় আবর্তে জুন মাসে ৭৫ একর জমিতে ৮২ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপন করা হয়। এতে সরকারি বৃক্ষ রোপণ তহবীল থেকে ৪ লক্ষ টাকা এবং উপকারভোগী সদস্যদের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ের পাশাপাশি শ্রম ও পাহারা দিয়ে আসছিল।
হঠাৎ করে শনিবার গভীর রাতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার রোহিঙ্গা অবৈধভাবে সৃজিত বাগানটি অবৈধভাবে জবর দখল করে। খবর পেয়ে উপকারভোগী সামাজিক বনায়ন কমিটির সদস্যরা বিষয়টি টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা ও মোচনী বীট কর্মকর্তাকে অবহিত করলে বন বিভাগ, উপকারভোগী ও পাহারাদলের সদস্যরা ভোর ৫টার দিকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে। কিন্তু নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গারা মিলে মোবাইলের মাধ্যমে অদৃশ্য ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে সৃজিত বাগানের চারাগাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের পাশপাশি সেখানে অবস্থান ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। বর্তমানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সৃজিত বাগানে অবস্থান করছে। কেউ কেউ জমি দখল করে বাসা তৈরি ও মাটি কাটছে। যেকোন মুহূর্তে উপকারভোগী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে নয়াপাড়া সামাজিক বনায়ন কমিটির সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, অনেকবার চেষ্টা করেও উচ্ছেদ করা যাচ্ছেনা। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার চারাগাছ ক্ষতি ও নষ্ট করেছে ফেলেছে। হতদরিদ্র উপকারভোগীদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি পাহাড়ের মাটি কেটে ন্যাড়া করে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে রোহিঙ্গারা। শিগগিরই রোহিঙ্গাদের কর্তৃক অবৈধভাবে দখলকৃত বাগানটি উদ্ধার করে দরিদ্র জনগোষ্টির ক্ষতিসাধন থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
টেকনাফ উপজেলা রেঞ্জ বন কর্মকর্তা তাপস দেব জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশ পেলে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।