September 17, 2024, 6:06 pm

সংবাদ শিরোনাম

নওগাঁয় আগাম শ্রম বিক্রয়ের ফাঁদে আটকে পড়েছে আদিবাসীদের জীবন

সপরিবারে মাঠে কাজ করেও ঘোঁচে না অভাব

নওগাঁয় আগাম শ্রম বিক্রয়ের ফাঁদে আটকে পড়েছে আদিবাসীদের জীবন

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

প্রযুক্তির বিকাশ, কর্মসংস্থানের বৈচিত্র্য আর বুদ্ধিমত্তার কারণে দেশের মুলধারার জনগোষ্ঠীর মানুষ যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তখন পেশা পরিবর্তনের বিকল্প সুযোগ না থাকায় কর্মহীন সময়ে আটকে পড়ছে সমতলের আদিবাসীদের জীবণ। বিকল্প পেশায় দক্ষতা না থাকা এবং বছরের অর্ধেকেরও বেশী সময় মাঠে কৃষিকাজ না থাকায় কঠিন শর্তে পানির দরে ভূ-স্বামীদের নিকট তাঁরা আগাম শ্রম বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ কারণে স্বামী-স্ম্রী-সন্তান-সন্ততিসহ পরিবারের সবাই মাঠে দিনমজুরীর কাজ করলেও তাদের পরিবারের অভাব কখনও দূর হয়না। ঋণের বেড়াজালে আটকে থাকতে হয় তাদের সারাবছর। সরেজমিনে নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে আদিবাসীদের সাথে কথা বলে আগাম শ্রম বিক্রয়ের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। পোরশা উপজেলা ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে পরিচিত। ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে এখানে ধান বা অন্যান্য শস্য উৎপাদনের সুযোগ কম থাকায় শস্য উৎপাদন প্রকৃতির বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে আমন ধান ছাড়া অন্যকোন ফসল এখানে তেমন একটা ফলেনা। বিভিন্ন গ্রামের আদিবাসীদের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, কৃষি ছাড়া অন্যকাজে তাদের দক্ষতা না থাকায় তাদের জীবণযাপন পুরোটাই কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ কারণে স্থানভেদে তাদের ৫ থেকে ৭মাস পর্যন্ত বেকার সময় কাটাতে হয়। কর্মহীন সময়ে কিছু কিছু আদিবাসী কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে গেলেও অধিকাংশ আদিবাসী পরিবার জীবণের তাগিদে স্থানীয় ভূ-স্বামীদের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে পানির দরে আগাম শ্রম বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হয়। যা তাদের দিন দিন প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং হতাশায় নিমজ্জিত করছে। সরেজমিনে এ বিষয়ে আলাপকালে পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নের মিছিরা গ্রামের নরেন পাহান, পূর্ণিমা পাহান ও সোনামনি পাহান জানান তাঁরা প্রত্যেকে কার্তিক মাসে স্থানীয় ভূস্বামীর নিকট হতে যথাক্রমে ৫বিঘা, ৩বিঘা ও ৬বিঘা জমির ধান কেটে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়ে এসেছেন আগাম শ্রম বিক্রয় করে। অগ্রহায়ন মাসে ধান কাটার সময় ৫/৬শত টাকা বিঘা হিসাবে তাদের ধান কেটে দিতে হবে। কিন্তু সে সময় বিঘা প্রতি ধান কাটার রেট উঠবে ৮শত টাকা থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাঠপুকুর গ্রামের শেফালি উরাও জানান, তিনি আগাম শ্রম বিক্রয় করে ৮শত টাকা নিয়েছেন এই শর্তে যে, ধান কাটার মৌসুমে তাকে প্রতিদিন ১শত টাকা মজুরীতে কাজ করতে হবে। অথচ সে সময় একজন মজুরের দৈনিক মজুরী হবে নূন্যতম ২শত টাকা। শুধু নরেন, পূর্ণিমা, সোনামুনি এবং শেফালিই নয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে পোরশার অধিকাংশ আদিবাসী পরিবারই স্থানীয় ভূ-স্বামীদের নিকট আগাম শ্রম বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। এ প্রক্রিয়ায় আগাম শ্রম বিক্রয়ের শিকার একটি আদিবাসী মজুরকে প্রতি বিঘায় ৪শত হতে ৫শত টাকা লোকসানের শিকার হতে হচ্ছে। আর এ কারণে কাজের মৌসুমে হলেও আদিবাসী পরিবারগুলো কাজ করেও নগদ টাকা ঘরে নিয়ে আসতে পারে না। এ বিষয়ে আদিবাসীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন বরেন্দ্রভূমি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (বিএসডিও’র) নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রউফ বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও অনুমান করা হয় নওগাঁয় প্রায় ২লাখ আদিবাসীর বাস। এর মধ্যে পোরশার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১৫হাজার আদিবাসীর বাস। শুধু পোরশা উপজেলায় নয়, আদিবাসীদের আগাম শ্রম বিক্রয়ের সমস্যা পুরো জেলা জুড়েই। আদিবাসী পরিবারের অসহাত্বের সুযোগ নিয়ে ভূ-স্বামীরা তাদের আগাম শ্রম বিক্রয়ের ফাঁদে ফেলে দেয়। যা সত্যিই অমানবিক। কর্মহীন সময়ে হতদরিদ্র আদিবাসীদের জীবিকায়নের জন্য সরকারি ভাবে বিশেষ খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে আদিবাসীরা এই অমানবিকতা থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে তিনি মতদেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর