সড়ক উন্নয়নে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয়েও পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
দেশের সড়ক উন্নয়নে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা মোতাবেক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সওজ গত অর্থবছরে ব্যয় করে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। চাহিদার কাছাকাছি অর্থ ব্যয় হলেও কমেনি ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ। সওজের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী, বন্যা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ আরো বেড়েছে। সড়কের অবস্থা নিয়ে প্রতি বছর জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগ (এইচডিএম)। সংস্থাটির সর্বশেষ ২০১৬ সালের জরিপে ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল জাতীয় সড়কের ২০ শতাংশ, আঞ্চলিক সড়কের ৩১ শতাংশ ও জেলা সড়কের ৪৭ শতাংশ। ওসব সড়কের মানোন্নয়নে ২০১৬–১৭ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার চাহিদা উল্লেখ করেছিল এইচডিএম। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সড়ক মেরামতে বরাদ্দ বাড়লেও সঠিক সময়ে তা না পাওয়াসহ নানা কারণে সড়কের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সড়কের মান বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করলেও বৃষ্টিপাত, বন্যা, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন, জনবল সংকট ও সঠিক সময়ে বরাদ্দ না পাওয়ায় সংস্কার বা মেরামতের কিছুদিন পরই সড়কগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঠিকাদার ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার ঘাটতিও কাজের গুণগত মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী ২০১৬–১৭ অর্থবছর সওজের আওতায় উন্নয়ন বাবদ ৫ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় উন্নয়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে আরো ৬ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন সড়ক ও সেতু উন্নয়ন, সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, নতুন সংযোগ সড়ক, নতুন সড়ক ও সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে এ অর্থ। তবে পরিকল্পনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হলেই কেবল ভাঙাচোরা সড়ক কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানায়, সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ার অন্যতম কারণ পানি জমে থাকা ও অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যান চলাচল। সড়কে পানি জমে যাওয়ার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা দায়ী। সড়কগুলোর ১০০ মিটারের মধ্যে প্রচুর অবকাঠামো বানানো হয়। যার কারণে সড়কগুলোর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাটাও ভাঙাচোরা সড়কের অন্যতম কারণ। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে সড়ক উন্নয়নে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও তার পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, রংপুর অঞ্চলের ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪৭৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধু বন্যায়। তার আগেও বিভিন্ন সড়কের ভাঙাচোরা দশা ছিল। সবমিলে রংপুর অঞ্চলের সড়কগুলো খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। রাজশাহী অঞ্চলের সড়কের মানোন্নয়নেও সর্বশেষ অর্থবছর ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করে সওজ। তারপরও উন্নতি হয়নি বগুড়া–রাজশাহী মহাসড়কসহ ওই অঞ্চলের সড়কগুলোর। এইচডিএম দুই বছর আগে রাজশাহীর সড়কগুলো সম্পর্কে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, বর্তমান অবস্থা এখনো প্রায় একই রকম। এর মধ্যে কিছু সংস্কার হয়েছে। যশোর অঞ্চলের বেশির ভাগ সড়কের অবস্থাই ভাঙাচোরা। যশোর–খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার, যশোর–বেনাপোল সড়কের ৩৮ কিলোমিটার, যশোর–ঝিনাইদহ সড়কের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটারই ভাঙাচোরা দশায়। একই অবস্থায় যশোর–মাগুরা সড়কের ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও যশোর–নড়াইল সড়কের ২০ কিলোমিটারও। তাছাড়া দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক। পর্যটন শহর কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামকে দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে মহাসড়কটি। কিন্তু বছরের পর বছর অবহেলিত থেকে গেছে সড়কটি। মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার বিজিসি ট্রাস্ট, বাগিচার হাট, দোহাজারী, সাতকানিয়া উপজেলার নয়াখাল, কেরানীহাট, চারা বটতল, মিঠাদীঘি, রাজঘাটা ও লোহাগাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া, চুনতি ফরেস্ট অফিসসহ ২০ স্পটে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে ছোট–বড় গর্ত। সড়কজুড়ে এসব খানাখন্দ ভোগান্তি বাড়াচ্ছে যান চালক ও যাত্রীদের। ছোট–বড় নানা দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন। আর গেল বর্ষায় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের শুধু কক্সবাজার অংশেই প্রায় ৩২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে কিছু এলাকা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। টাঙ্গাইলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ময়মনসিংহের সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ–টাঙ্গাইল জাতীয় মহাসড়ক। দুই বছর আগেও ভালো অবস্থায় ছিল মহাসড়কটি। বর্তমানে মহাসড়কটির মধুপুর–ময়মনসিংহ অংশের মুক্তাগাছা এলাকায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) সফিকুল ইসলাম জানান, সারা দেশের সড়কগুলো ভালো অবস্থায় রাখতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন মন্ত্রণালয় চেষ্টা করে তার পুরোটাই দিতে। তার পরও হয়তো কখনো কখনো তা পর্যাপ্ত হয় না। তবে কয়েক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে বরাদ্দ বেড়েছে।