December 11, 2024, 4:01 am

সংবাদ শিরোনাম

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলো বঙ্গবন্ধুর মার্চের ভাষণ

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

 

একাত্তরের মার্চ যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ভাষণবিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যহিসেবে ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা গত সোমবার প্যারিসে এই জাতিসংঘ সংস্থার কার্যালয়ে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান ৪৬ বছর আগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) স্বাধীনতাকামী কোটি মানুষকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রামএবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইউনেস্কো জানিয়েছে, তাদের মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি গত ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর প্যারিসে দ্বিবার্ষিক বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধুর মার্চের ভাষণসহ মোট ৭৮টি দলিলকেডকুমেন্টারি হেরিটেজহিসেবেমেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারেযুক্ত করার সুপারিশ দেয় এরপর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ওই সুপারিশে সম্মতি দিয়ে বিষয়টি ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদে পাঠিয়ে দেন এবং গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই তথ্য প্রকাশ করেন নিয়ম অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটির সুপারিশে মহাপরিচালকের সম্মতি পেলেই কোনো দলিলকে ওই তালিকায় যুক্ত করে নেওয়া হয় এবং পরে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ১৯৭১ সালের মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা সেদিন ছিল মিছিলের শহর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মানুষ পায়ে হেঁটে, বাসলঞ্চে কিংবা ট্রেনে চেপে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়েছিলেন ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল বিশাল ময়দান মুহুর্মুহু গর্জনে ফেটে পড়েছিলেন উত্থিত বাঁশের লাঠি হাতে সমবেত লাখ লাখ বিক্ষুব্ধ মানুষ বাতাসে উড়ছিল বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল সূর্যের অসংখ্য পতাকা বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সাদা পাজামাপাঞ্জাবি আর হাতাকাটা কালো কোট পরে বাঙালির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু সেদিন দৃপ্তপায়ে উঠে আসেন রেসকোর্সের মঞ্চে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশকাঁপানো স্লোগান আর মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান অপেক্ষমাণ জনসমুদ্রের উদ্দেশে তারপর শুরু হয় সেই ঐতিহাসিক ভাষণ তিনি বলে চলেন– … আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে বঙ্গবন্ধু বলেন, …সৈন্যরা, তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না কিন্তু আর আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না উত্তাল জনসমুদ্র যখন স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে উদগ্রীব, তখন এরপর বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেন তার চূড়ান্ত আদেশতোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রামএবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা মাত্র ১৯ মিনিটের সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে তুলে দেন অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় এতে সামরিক আইন প্রত্যাহার, সৈন্যবাহিনীর ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন, শহীদদের জন্য ক্ষতিপূরণ জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের চার দফা দাবি উত্থাপন করেন তিনি রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি প্রচারের সব আয়োজন ছিল ঢাকা বেতার কর্তৃপক্ষের প্রচার শুরুও হয়েছিল কিন্তু সামরিক কর্তৃপক্ষ প্রচার বন্ধ করে দিলে বেতারের সব বাঙালি কর্মচারী বেতার ভবন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের সম্প্রচার কার্যক্রম ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব গভীর রাতে অবশ্য সামরিক কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ ভাষণ সম্প্রচারের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর