ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
মাদ্রিদ ও কাতালুনিয়ার নেতারা নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকায় কাতালান সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের শীর্ষ নেতারা সমর্থকদের কাছে দেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করায় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। গত শতকের সত্তুরের দশকের শেষ দিকে গণতন্ত্র ফেরার পর এবারই প্রথম স্পেনের কোনো প্রধানমন্ত্রী স্বায়ত্তশাসিত একটি এলাকায় সরাসরি কেন্দ্রের শাসন চাপিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে কাতালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমন গত সপ্তাহে দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা প্রত্যাহার করে না নিলে কাতালুনিয়ায় সরাসরি শাসন চালুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন স্পেনীয় প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয়।
কিন্তু মাদ্রিদের এ হুমকিতে শঙ্কিত দেখাচ্ছে না কাতালান আঞ্চলিক সরকারকে। গত বুধবার রাতে পুজদেমন নিজ দল কাতালান ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মাদ্রিদের হুমকিতে পিছিয়ে না আসার ঘোষণা দিয়েছেন।
স্পেন যদি কাতালুনিয়ার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
কখন এবং কিভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হবে, আঞ্চলিক পার্লামেন্টের তাতে স্বীকৃতি থাকবে কি না তা নিশ্চিত না হলেও, স্বাধীনতাপন্থি আইন প্রণয়নকারীদের অনেকেই এই বিষয়ে কাতালান পার্লামেন্টে ভোট ডাকতে চাইছেন যেন স্বাধীনতার ঘোষণাটি আরও পোক্ত হয়।
কাতালুনিয়ার স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে হলে রাখয়কে ১৯৭৮ সালের সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালু করতে হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আঞ্চলিক সরকার আইন ভঙ্গ করছে এই কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুচ্ছেদটি চালু করলেও আগামি সপ্তাহের শুরুর দিকে স্পেন পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া সেটি পুরোপুরি কার্যকর করতে পারবেন না।
এ সময়ের মধ্যে সহজেই স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা দিতে পারে কাতালান স্বাধীনতাপন্থিরা।
রাজনৈতিক এই অস্থিরতায় ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ স্পেনের প্রবৃদ্ধির হার কমে আসবে বলে পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞদের; সঙ্কটের প্রভাব পড়ছে অভিন্ন মুদ্রা ইউরোতেও।
করে এই মাসের শুরুতে হওয়া গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ৯০ শতাংশের রায় পড়ে বলে ভাষ্য কাতালান সরকারের। স্পেন সরকারের বিরোধিতা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গণভোটের আয়োজন করা হয়। যদিও ব্যাপক পুলিশি বাধার মুখে সেদিন ৪৩ শতাংশের বেশি ভোট জমা পড়েনি।
ওই ফলাফলের ভিত্তিতেই গত সপ্তাহে কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ‘প্রতীকী ঘোষণা’ দেন পুজদেমন; মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে ঘোষণার কার্যকারিতা স্থগিত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী রাখয় স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান জানাতে এই সপ্তাহের সোমবার পর্যন্ত কাতালান নেতাকে সময় দেন। কাতালুনিয়ার অবস্থান যদি স্বাধীনতার পক্ষে হয়, তা হলে সিদ্ধান্ত বদলাতে দেওয়া হয় ‘আরও চারদিন’।
সময়সীমার প্রথম অংশের প্রত্যুত্তরে সোমবার এক চিঠিতে পুজদেমন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে স্পষ্ট কিছু না জানিয়ে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে স্পেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছার কথা জানান।
স্পেনিশ প্রধানমন্ত্রী ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কাতালান নেতার অবস্থান মাদ্রিদকে সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালুর কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে, যে অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পেন সরকার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শাসনে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
রয়টার্স বলছে, কাতালান সঙ্কটের জন্য মাসখানেক ধরেই একে অপরকে দায়ী করে আসছেন স্পেন ও কাতালুনিয়ার শীর্ষ দুই নেতা। দিন দিন তাদের অবস্থান আগের তুলনায় আরও কঠোর হয়েছে। অস্থিরতা কমাতে কোনো পক্ষকেই সুর নরম করতে দেখা যাচ্ছে না।
রাখয় বলছেন, অবৈধ গণভোট আয়োজন ও সেটার ফলের ভিত্তিতে স্বাধীনতার প্রতীকী ঘোষণা দিয়ে একের পর এক আইন ভঙ্গ করে যাচ্ছে কাতালান সরকার।
পুজদেমনের ভাষ্য, গণভোটের দিন মাদ্রিদের পাঠানোর পুলিশের সহিংস অবস্থান, আটক-গ্রেপ্তার এবং স্বাধীনতাপন্থি নেতাদের রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে কারাগারে পুরে স্পেন একটি কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
স্পেন সরকার সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালু করলেও তা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে বিশ্লেষকদের মধ্যেও। ওই অনুচ্ছেদ চালু করে মাদ্রিদ কাতালুনিয়ার স্থানীয় প্রশাসনকে বরখাস্ত করে নতুন একটি প্রশাসন বসাতে পারবে; অর্থনীতি ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে, ডাকতে পারবে নতুন নির্বাচনও। কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে দূর করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
কাতালান পার্লামেন্টের অনেক সদস্য সংবিধানের এই ব্যাখ্যার ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন; যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, স্পেন ও কাতালুনিয়ার এই মুখোমুখি অবস্থান আরও অনেকদূর গড়াবে।