November 16, 2025, 9:28 pm

সংবাদ শিরোনাম
ইয়াবা কারবারি ফ্যাসিস্ট সহযোগীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক গংগাচড়ায় গজঘন্টা ইউনিয়ন বিএনপি সেক্রেটারির অপতৎপরতায় দিনভর উত্তপ্ত আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা-মৌলভীবাজারের চার আসনেও মনোনয়ন চূড়ান্ত প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ নিতে সম্মত এনসিপি বৃষ্টি আর বাতাসে নুয়ে পড়েছে ধানক্ষেত, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা ঝিকরগাছায় নাতিজামাই এর হাতে নানা শ্বশুর খুন র‍্যাব-১৩ এর অভিযানে লালমনিরহাটে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য এস্কাফ (ESKuf) ও গাঁজাসহ ১ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রংপুরের মোবারক আলী হত্যা মামলার মূলহোতা গ্রেপ্তার নবীগঞ্জে বার বার মেয়ে প*রকিয়া**য় জড়িয়ে পরার কারণে নিজ হাতে খু*ন করলেন পিতা

অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হবে এ অর্জন জনগণের, : প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নশীল দেশের গৌরব অর্জনে সংবর্ধনা

মোঃ ইকবাল হাসান সরকারঃ

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিকে জনগণের প্রতি উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই অর্জন আমরা যারা সবাই একযোগে কাজ করেছি, যারা উন্নয়নে অবদান রেখেছে; সবার অর্জন। বাংলার জনগণের অর্জন। দেশের জনগণের কাছ থেকে যদি আমি সাড়া না পেতাম, তাদের সমর্থন যদি না পেতাম, তারা যদি ভোট দিয়ে আমাদের বিজয়ী না করত, তাহলে আমি ক্ষমতায়ও আসতে পারতাম না। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণে তাঁকে প্রদত্ত সংবর্ধনা এবং এই উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সাফল্য ধরে রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই অগ্রযাত্রাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে মর্যাদা পাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতিত্ব করেন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশপত্রের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এ ছাড়া একটি ৭০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন। পরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবীসহ নাগরিক বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী ঘোষণার পর ঢোলের বাদ্যে সূচনা হয় সপ্তাহব্যাপী উৎসবের। উৎসবের স্লোগান রাখা হয়েছে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৮ মিনিটের ভাষণে দেশ গঠনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে নিজের সংগ্রাম ও বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। পিতার কথা বলতে গিয়ে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, অগ্রযাত্রার পথ যেন থেমে না যায়। আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? অন্যের কাছে কেন হাত পেতে চলব? আমরা যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি সেটা তো আজকে প্রমাণ করেছি। বাবার (বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে তাঁর শেখা রাজনীতির মূল শিক্ষাই জনকল্যাণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করাই তাঁর লক্ষ্য। নিজের জন্য নয়, নিজের ভোগবিলাস নয়, জনগণ যাতে একটু ভালো থাকে, সুখে থাকে, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তাঁর নিরন্তর পথচলা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। সে কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বলেন, সেই বাঁচা যে কত বিষণ্নের, কত কষ্টের, সেটা যারা আপনজন হারিয়েছে, শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারবে। এই কষ্ট, দুঃখ, ব্যথা নিয়েও ছয়টি বছর আমাদেরকে রিফিউজির মতো বিদেশে কাটাতে হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি, আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আমার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি যারা আমার অবর্তমানেই ১৯৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সমর্থন যখন অর্জন করি, তখন সেই সময়ে সামরিক জান্তা শত বাধা দিয়েও আটকে রাখতে পারেনি, আমি দেশে ফিরে আসি। আজকের এই উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সেই কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের লক্ষ্য মধ্যম আয়ের দেশ, দেশকে যেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্তভাবে গড়ে তুলতে পারি। আর ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। আর সেই সময়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় তা আমরা উদ্‌যাপন করতে পারব। আজকের এই অর্জনের পেছনে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অর্জনের কথাগুলো যত সহজে তিনি বললেন সময় কিন্তু তত সহজে যায়নি। অনেক চড়াই-উতরাই যেমন পার হতে হয়েছে তেমনি গ্রেনেড হামলাসহ তার ওপর বারংবার হত্যা প্রচেষ্টাও করা হয়েছে। অনেক পথের কাঁটা পায়ে বিঁধিয়েও এগিয়ে যেতে হয়েছে। বার বার আঘাত এসেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি সেই গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে বার বার মৃত্যুকে দেখেছি, কিন্তু ভয় পাইনি কখনো। অনুষ্ঠানে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঠিক জানি না আমার ঠিক এটাই মনে হয়, আজকে যে বাংলাদেশের মানুষের অর্জন তিনি (বঙ্গবন্ধু) কি বেহেশত থেকে দেখতে পারেন? তিনি কি জানতে পারেন? এ কথা বলতে বলতে কেঁদে দেন শেখ হাসিনা। মাঝে কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে থাকেন উপরের দিকে। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এখানে আসার আগে আমার ছোট বোন রেহানার সঙ্গে কথা বলছিলাম। আব্বা যে চেয়েছিলেন, বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে। বাংলাদেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে আজকে তো সেই সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। আমরা একটা দুয়ার পেরিয়ে এগিয়ে গেছি। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশ অর্জনের এই দুয়ারে পৌঁছাতে পারত ১০ বছরের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক সময় লেগে গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন গত ১৭ মার্চ ছিল জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন। ওইদিন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের এই সুসংবাদটি পাই। জাতির পিতার জন্মদিনে আমাদের জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে! ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক আমাদের নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেয়। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সনদ পেল। তিনি বলেন, এতদিন অনেকেই আমাদের গরিব বলে উপহাস করেছে। একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কটাক্ষ করেছে। কিন্তু আজকে আমরা তাদের কাতারে উঠে এসেছি। এ অর্জন আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং আমাদের অবস্থান শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বল্পোন্নত বা গরিব বলে কেউ আর অবজ্ঞা করতে পারবে না। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ফজিতা ম্যানুয়েল কাতুয়া ইউতাউ কমন ও সরকারের ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজম বক্তৃতা করেন। ইউএনডিপি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আসিম স্টেইনারের একটি লিখিত বার্তাও পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন, স্পিকারের পক্ষে হুইপ মাহবুব আরা গিনি, প্রধান বিচারপতির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী; মন্ত্রিসভার পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল; জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ; ১৪ দলের পক্ষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া শিক্ষাবিদদের পক্ষে ড. আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, পেশাজীবীর পক্ষে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ক্রীড়াবিদদের পক্ষে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান নিজদের সহকর্মীদের নিয়ে ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া আইনজীবী সমাজ, ব্যবসায়ী সমাজ, সাংবাদিক সমাজ, কবি ও সাহিত্যিকগণ, শিল্পী সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, মহিলা সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধি দল, শিশু প্রতিনিধি দল (স্কাউট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি), প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি দল, শ্রমজীবী সংগঠন এবং মেধাবী তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

 

 

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৩মার্চ২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর