January 11, 2025, 5:48 pm

সংবাদ শিরোনাম

লক্ষিপুর গৃহবধুর অর্ধকোটি টাকার সম্পদ জবর দখল

মোহম্মদ হাছান,লক্ষিপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষিপুর  শহরের মাদাম শিশুপার্ক সড়কে সেলিনা বেগমনামের এক গৃহ বধুর অর্ধকোটি

টাকা মুল্যের জমি জবর দখল করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জমির পুনঃ
দখল পেতে ওই গৃহবধু তার স্বামীকে নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের
দুয়ারে দুয়ারে ঘুরলেও জবরদখলকারিরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী হওয়ায় কোন প্রতিকার
পাচ্ছেনা। অপর দিকে জবর দখলকারি ও তাদের লালিত সন্ত্রাসীদের প্রাণ নাশের হুমকী
ধমকীর কারণে ওই গৃহবধু ও তার স্বামী বর্তমানে জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন
বলে জানিয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়,লক্ষিপুর সদর এলজিইডির সার্ভেয়ার মোঃ শহীদুল ইসলামসহ
৪জন ব্যক্তি লক্ষিপুর শহরের মাদাম পৌর শিশুপার্ক সড়কের পার্শ্বে বাঞ্চানগর মৌজায়
অবস্থিত জেলা জরিপি ১৩৮৪ নং খতিয়ানভুক্ত ৮০৩৭ নং দাগের ২৬ শতাংশ জমি মুল
মালিকদের নিকট থেকে ২০০০ সালে খরিদ সুত্রে মালিক হন। পরবর্তীতে শহীদুল ইসলাম
তার মালিকানাধীন সাড়ে ৬ শতাংশ জমি ২০০১ সালে তার স্ত্রী সেলিনা বেগম এর নামে
হেবা দলীল মূলে দান করেন। সেলিনা বেগম উক্ত জমি ভোগ দখল করে আসছেন। বিগত
২০০৮ সালে জমা খারিজ খতিয়ান করে নেন এবং সরকারি খাজনাপাতি পরিশোধ সহ
উক্ত স্থানের ভুমি ভরাট করে বাউন্ডারী দেয়াল নির্মাণ করেন। অপর ক্রেতা মোঃ শাহজাহান,
খলিলুর রহমান ও তার স্ত্রী নিশাদ রহমান ও তাদের নামে কেনা জমি যথারীতি জমা খারিজ
খতিয়ান ও পরবর্তীতে রিভিশন জরিপে মালিকদের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। মালিকগন
খরিদকৃত উক্ত ভূমির উন্নয়ন সাধন করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে ভোগ দখল করে
আসছেন। তারা যথারীতি সরকারি ভূমি কর প্রদান করে যাচ্ছেন।
কিন্তু বিগত ২০১৪ সালে গোপনে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ও প্রাথমিক শিক্ষক
সমিতির সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার বশির মাষ্টার তার পুত্র ও কন্যাদের
নামে জনৈক খোকন ভুঁইয়া থেকে ৪টি দাগ উল্লেখ করে একটি দলিল সৃজন করে। উক্ত
দলিলে ৪টি পৃথক দাগ উল্লেখ থাকলেও সেলিনা বেগমের মালিকানাধীন জমিতে উদ্দেশ্য
মূলক ভাবে দখল দেখিয়ে লক্ষিপুর পৌর ভুমি অফিসের সহকারি ভুমি কর্মকর্তা জহির
উদ্দিনকে অবৈধ ভাবে ম্যানেজ করে জাল কাগজপত্র সৃজন করে ২০১৯ সালে একটি জমা
খারিজ খতিয়ান তৈরী করে। সম্প্রতি আবুল বাশার বশির মাষ্টার তার ছেলে ও তাদের লালিত
ক্যাডার বাহিনী নিয়ে উক্ত জমিতে ঘর তুলে জবর দখল করে নেয়। এ দিকে সেলিনা
বেগম তার মালিকানাধীন সাড়ে ৬ শতাংশ জমির রীতিমত ভুমি কর প্রদান করে
আসছেন। বিগত ১৪২৮ বাংলা সনের খাজনা পর্যন্ত পরিশোধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে সেলিনা বেগম নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করলেও
স্থানীয় পৌর ভুমি অফিসার জবরদখরকারিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একটি কাল্পনিক
প্রতিবেদন প্রদান করলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। এ দিকে সেলিনা বেগম ও
তার স্বামী জমির দখল ফিরে পেতে লক্ষিপুর পৌর মেয়র, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে
লিখিত আবেদন করলেও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা। একই জমি দুই ব্যক্তির নামে
জমা খারিজ ও খাজনা আদায় এবং আদালতে প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যাপারে
জানতে চাইলে লক্ষিপুর পৌর ভুমি অফিসের সহকারি ভুমি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন
বলেন, আমি সেলিনা বেগমের দখলে থাকার কথা আমার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।
এই জমির পার্শ্বে বশির মাষ্টারের ছেলে সাজ্জাদ গংদের আরো জমি থাকায় এবং
বিবাদীদের সরবরাহকৃত কাগজ পত্রে দাগে জমির পরিমাণ বেশী দেখানোর ও তাদের নামে
জমা খারিজ থাকার কারণে আমি সেলিনা বেগমের দেড় শতাংশ জমি সাজ্জাদগংদের
নামে দেখিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছি। একই জমি দুই ব্যক্তির নামে জমা খারিজ ও ভুমি
কর আদায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বশির মাষ্টারের পুত্র জমির
মালিক সাজ্জাদ হোসেন জানান, তারা জমির মালিক খোকন ভুঁইয়া তাদের উক্ত জমি
বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভুমি অফিস তাদের নামে জমা খারিজ করে দিয়েছেন। তাই তারা
তাদের মালিকানাধীন জমিতে ঘর তুলে দখল করে নিয়েছেন। তারা কারো জমি জবর দখল
করেননি। এ দিকে সরোজমিনে গেলে আবুল বাশার বশির মাষ্টারের ছেলে আব্দুল্যাহ আল
ফাহাদ মঞ্জু জমির মালিক সেলিনা বেগম ও তার স্বামীকে উক্ত জমির মালিকানা দাবী
করে জমিতে গেলে তাদের মেরে লাশ বস্তায় ভরে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে বলে হুমকী প্রদান
করে। এ সময় সে উত্তেজিত হয়ে সেলিনা বেগমের স্বামী সদর উপজেলা এলজিইডির
সার্ভেয়ার সহিদুল ইসলামকে মোবাইলে ফোন করে হত্যা সহ নানা রকম হুমকী ধমকী ও
অশ্লীল ভাষায় গালাগাল এবং সাংবাদিকদের সাথে নানা অশালীন আচরণ করেন।
এ দিকে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বসির মাষ্টারের ছেলে আব্দুল্যাহ আল
ফাহাদ মঞ্জু তার অনুশারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে উক্ত জমিতে নির্মানাধীন ঘরে রীতিমত
মাদকের আড্ডা ও পাহারা দিয়ে চলছেন। তারা প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির হওয়ায়
কেউ ভয়ে তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা। উক্ত দাগের জমির আরেক
মালিক শাহজাহান জানান, তিনিও ভয়ে তার মালিকানাধীন জমিতে বশির মাষ্টার ও তার
ছেলেদের হুমকী ধমকীর কারণে ভয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেননা।এ দিকে দখলকৃত জমির
মালিক সেলিনা বেগম ও তার স্বামী শহীদুল ইসলাম জানান, জবরদখলকারিদের প্রাণ নাশ
সহ নানা হুমকী ধমকীর কারণে তারা আতংকিত অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। তারা
তাদের জমি উদ্ধারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর