ডিটেকটিভ ডেস্কঃঃ
ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য ১৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
রোববার রাতে সম্রাটকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর তাকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) রাখা হয়েছে। ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সম্রাট মোটামুটি আছেন, তবে তার বিভিন্ন রকমের সমস্যা রয়েছে। তার হৃদপিণ্ডে ভাল্ব লাগানো হয়েছে, রয়েছে ‘রিদম ডিস্টার্বনেস’। তার চিকিৎসায় ১৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
হৃদরোগই সম্রাটের মূল সমস্যা জানিয়ে চিকিৎসরা জানান, সম্রাটের অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন বা অ্যারিদমিয়া সমস্যা। প্রতি মিনিটে স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের মাত্রা ৬০ থেকে ১০০, এর চেয়ে কম বা বেশি মাত্রায় হৃৎস্পন্দন হলে কিংবা দুটিই যদি ঘটে থাকে, তবে সেটি অ্যারিদমিয়ার লক্ষণ।
হাসপাতালের সহযোগী প্রফেসর ড. মহসিন আহমেদের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন সম্রাট।
এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম জানান, সম্রাটের অবস্থার অবনতি হলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ রোববার তাকে হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করেছে। তিনি এখন ওখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।
ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাবেক সভাপতি সম্রাট ক্যাসিনো মামলায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেফতার হয়। এর পর তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
রোববার রাতে রাজধানীর রমনা থানায় সম্রাটের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ বিষয়ে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি মিডিয়া) জিসানুল হক বলেন, কাকরাইলের বাসায় অবস্থান করে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত ১৯৫ কোটি টাকার সহযোগী যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক আরমানের সহায়তায় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করায় সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
মানিলন্ডারিং আইনে সিআইডির দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন ও কাকরাইল এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। তার উপার্জিত অবৈধ অর্থের মধ্যে ১৯৫ কোটি টাকা তিনি তার সহযোগী আসামি আরমানের সহায়তায় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া পাচার করেছেন।
সম্রাটের বিদেশভ্রমণের পর্যালোচনামূলক তথ্যও সিআইডি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় তিনবার, দুবাইতে দুবার এবং হংকংয়ে একবার যাতায়াত করেছেন। আর তার অপরাধকর্মের সহযোগী আরমান ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের ২৫ বার যাতায়াত করেছেন।
এদিকে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত অর্থ উপার্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। গত বছরের ১২ নভেম্বর দুদকের করা মামলায় সম্রাটের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আনা হয়।
ওই মামলায় গত ১৮ আগস্ট আদালতে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর সম্রাটের নাম আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর হাইপ্রোফাইল কয়েকজন গ্রেফতার হলেও খোঁজ মিলছিল না সম্রাটের। এসবের মধ্যেই তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এর মধ্যেই গত বছরের ৫ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় আত্মগোপনে থাকা সম্রাট ও তার সঙ্গী আরমানকে। পরে ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করে র্যাব।
ওইদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল সম্রাটকে নিয়ে কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে তারই কার্যালয়ে ঢুকে অভিযান শুরু করে।
সম্রাটের কাকরাইলের কার্যালয় থেকে একটি পিস্তল, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া জব্দ করে তারা। পরে ছয় মাসের জেল দিয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
//ইয়াসিন//