ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় সুগন্ধা নদীর পশ্চিম তীরের দোয়ারিকা গ্রামটি পরিণত হয়েছে ইটভাটার গ্রামে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর (দোয়ারিকা সেতু) ওপর দাঁড়ালেই চোখে পরে পুরো গ্রাম জুরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৈধ ও অবৈধ ইটভাটার চিমনিগুলো। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এক গ্রামে ১৪টি ইটভাটার কারণে দুষণের কবলে পড়েছে গোটা গ্রামটি। ফসলি জমির মধ্যে অধিকাংশেই ইটভাটা গড়ে ওঠায় কমে গেছে খাদ্যশষ্য উৎপাদন। পরিবেশ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলায় ১২০ফিট উঁচু স্থায়ী চিমনি (অবৈধ) ৫০টি, জিকজাক ৭১টি ও ড্রাম চিমনির ২৫টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে বাবুগঞ্জ উপজেলায় ইটভাটা আছে ৩২টি। স্থানীয়দের তথ্যমতে, কেবল বাবুগঞ্জের দোয়ারিকা গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে উঠেছে ১৪টি ইটভাটা। ওই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, দোয়ারিকা গ্রামটি ইটভাটার গ্রামে পরিণত হয়েছে। গ্রামের এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৩টি ভাঁটা রয়েছে। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে আরও একটি ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হবে। দুইটি ড্রাম চিমনির ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে দেদারছে। দোয়ারিকা গ্রামের পাশদিয়ে বহমান সুগন্ধা নদীর পাড় ঘেঁষে এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। সাবেক ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার বাড়ির সামনে দাঁড়ালেই যমুনা ও বাইতি ব্রিকসের ভাঁটা দেখা যায়। যমুনা ব্রিকস থেকে জনবসতি মাত্র একশ’ ফুট দুরত্বে। ইটভাটাগুলো এখন দোয়ারিকা গ্রামের আড়াই হাজার মানুষের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। গ্রামে এখন আর আগের মতো ফসলি জমিতে ফসল হয়না। মাটি কেটে ফসলি জমির সর্বনাশ করা হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা ইটভাটার ধোঁয়ায় নাকাল হচ্ছেন। দোয়ারিকা গ্রামে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে ইতোমধ্যে গ্রামবাসী একাধিকবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করলেও প্রশাসন এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল শাখার সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, দোয়ারিকা সংলগ্ন ১১টি ইটভাটার বিরুদ্ধে বেলা মামলা করেছে। কিন্তু তারপরেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা ভাটাগুলোয় কাঠ পুড়ছে ও ইট উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর বরিশালের বিভাগীয় পরিচালক মোঃ আহসান হাবিব বলেন, বরিশালে নীতিমালার বাইরে গড়ে ওঠা ইটভাটার সংখ্যাই বেশি। পরিবেশ আইন অনুযায়ী জনবসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা। সে অর্থে দোয়ারিকা গ্রামের সব ইটভাটাই অবৈধ। ওইসব ইটভাটার পরিবেশ বিভাগের কোন ছাড়পত্র নেই। পরিচালক আহসান হাবিব আরও জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যে ওই এলাকায় গিয়ে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।