চাঁদাবাজি চলছেই গণপরিবহনে
সড়ক-মহাসড়কে কিংবা মহানগরীর রাস্তায় যানবাহনে চাঁদাবাজি নতুন কোনো ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে এটা চলে আসছে।
সময়ে সময়ে আবার নতুন নতুন চাঁদার ঘাট খুলে বসা হয়। মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষই চাঁদাবাজিতে কম যায় না। আবার এসব সংগঠনের নেতাদের মধ্যেও রয়েছে দলাদলি। এসব গ্রুপ থেকেও আলাদা আলাদা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রকাশিত চট্টগ্রামে গণপরিবহনে চাঁদাবাজির খবরে বলা হয়েছে, সেখানে মাসে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। এই মহানগরের গণপরিবহনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। এক রুটের গাড়ি চলছে অন্য রুটে। অনুমোদন নেই এমন অনেক রুটও খুঁজে পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই চট্টগ্রামে এই অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বন্দরনগর চট্টগ্রামে ১৪টি বাস-মিনিবাসের রুট, ১৬টি হিউম্যান হলারের রুট ও ১৬টি টেম্পো রুট রয়েছে। বিআরটিএর হিসাবে এসব রুটে এক হাজার ১৩৪টি বাস-মিনিবাস, এক হাজার ২৫০টি হিউম্যান হলার ও এক হাজার ৬৬২টি টেম্পো চলাচল করে। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করে এসব রুটে। আর এসব রুটকে বৈধ করা হয়েছে ওয়েবিল নামের মাধ্যমে। ওয়েবিলের নামে বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও টেম্পোপ্রতি টাকা নির্দিষ্ট করা আছে। প্রতিদিন এই টাকা আদায় করা হয়। মালিক সংগঠনগুলোর মধ্যে এ চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বও আছে, যার জের ধরে যানবাহন ধর্মঘটও ডাকা হয় কিন্তু ওয়েবিলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হয় না। ওয়ান-ইলেভেনের সময় চট্টগ্রাম মহানগরের গণপরিবহনে ওয়েবিল প্রথা বন্ধ করা হয়েছিল। মালিকদের সব সংগঠন একটি ফোরামে নিয়ে আসা হয়েছিল; কিন্তু এখন আবার সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। আগের মতো গণপরিবহনের রুটে কোনো শৃঙ্খলা নেই। ওয়েবিলের নামে ফিরে এসেছে চাঁদাবাজি। অনুমোদনহীন রুটেও চলছে যানবাহন। দেখার কেউ নেই।
গণপরিবহনে নৈরাজ্যের উদাহরণ শুধু চট্টগ্রামেই রয়েছে তা নয়, দেশের সর্বত্রই একই অবস্থা বিরাজমান। বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে নানা জায়গায় চাঁদা দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। কোথাও চাঁদা বন্ধের চেষ্টা করা হলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ধর্মঘটের ডাক দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করা হয়। এ অবস্থা থেকে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ফেরানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। সেই সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের সদিচ্ছা, যার কোনো বিকল্প নেই।