১০ মিনিটে সুখী হওয়ার কৌশল দাম্পত্যে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ভালোবাসা রক্ষায় চর্চা করতে হয়। আর সেটা মোটেই সহজ কোনো কাজ নয়। যে কোনো সম্পর্কে জটিলতা থাকবেই। তবে কিছু সহজ কৌশলও আছে। যেগুলো প্রতিদিনের প্রয়োগে প্রেমে আসবে সুখ।
সপ্তাহে একদিন নয়, বরং প্রতিদিন সঙ্গীকে তার কাজের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে এবং ঘরের কাজে টুকটাক সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে সম্পর্কে ভালো রাখা যায়।
সঙ্গীর প্রতি আপনার মনোযোগ ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন প্রতিদিনকার ছোটখাট নানা কাজের মাধ্যমে। পাশাপাশি ছোটখাট ঝগড়াঝাঁটি এড়িয়ে চলুন।
সচেতন হয়ে কথা বলুন
‘সচেতন হয়ে কথা বলা’ রোমান্টিক জুটিদের জন্য প্রযোজ্য না হলেও আপনার সঙ্গী কী বলছে তা মনোযোগ দিয়ে শোনা তারপর নিজের কথা বলা- অভ্যাসটি চর্চা করতে এটা বেশ কার্যকর।
বিষয়টা এমন হতে পারে-
* আপনার সঙ্গী কী বলছেন তা শুনুন আনুমানিক তিন মিনিট।
* এরপর আপনি কী শুনেছেন সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া করুন।
* সঙ্গীর মতামত নিন ও নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন যতক্ষণ না সঙ্গী সন্তুষ্টি পাচ্ছে।
* একই পদ্ধতিতে একে অপরের ভূমিকা পালন করুন।
শুরুতে বিষয়টা একটু অদ্ভুত মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মানিয়ে যাবে।
সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরুন বা চুমু খান
‘বিজনেস ইনসাইডার’য়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্যিক ও সুখ বিশেষজ্ঞ গ্রিচান রুবিন বলেন, “আমি ও আমার পরিবার উষ্ণ ‘অভিবাদন ও বিদায়’য়ের অনুশীলন করি। প্রতিবারই বাসায় যখন কোনো অতিথি আসেন অথবা চলে যান তখন তাকে খুব ভালোভাবে স্বাগতম ও বিদায় জানাই।”
প্রতিটা দম্পতিকে বিষয়টা গ্রহণ করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়া জরুরি। অন্যদিকে দেখা গেছে, খুব কম সংখ্যক মানুষই বাসা থেকে বের হওয়ার আগে এই ধরনের আন্তরিকতা প্রকাশ করেন।
তাছাড়া শারীরিক আন্তরিকতা সম্পর্কের সন্তুষ্টি ও রোমাঞ্চকর সম্পর্ক বজায় থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই দুয়েক মিনিট সময় নিন এবং সঙ্গীকে বোঝান যে আপনি তার প্রতি কতটা আন্তরিক।
ছোট কাজেও ধন্যবাদ দিন
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ও সাহিত্যিক জানিকা কাপলান পরিচালিত ‘দ্য গ্রেটেচিউড ডায়রি’ থেকে জানা গেছে তিনি সবকিছুর জন্য ও সবার কাছে এমনকি তার স্বামীর কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি তার স্বামীকে ধন্যবাদ দিয়ে লিখেন যে, ছোটখাট নানান কিছু করার মাধ্যমে তিনি তার সামগ্রিক বিবাহিত জীবনকে আরও সুন্দর করতে সাহায্য করেছেন।
‘বিজনেস ইনসাইডার’য়ের প্রতিবেদক এরিন ব্রডউইন এক প্রতিবেদনে লেখেন, ‘মনোবিজ্ঞানীদের মতে যেসব দম্পতি একে অপরের কাছে বেশি কৃতজ্ঞ হন তারা অন্যান্যের তুলনায় অনেক বেশি কাছাকাছি থাকেন। এমনকি সঙ্গীর কাছে একবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হলে পরের দুমাস ঘনিষ্টতা রক্ষা করে।’
সম্ভবত, একবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একটা চক্রাকার প্রবাহের মতো কাজ করে, ধন্যবাদ পেলে সঙ্গী নিজেকে প্রশংসিত মনে করে। ফলে সে সম্পর্কের প্রতি আরও একনিষ্ঠ হয় যেন আপনি তার প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞ থাকেন।
ঘরের কাজে সহভাগিতা
যুক্তরাষ্ট্রের সময় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ লরা ভান্ডেরকাম এবং চিকিৎসক সারাহ হার্ট-আনগার সম্পর্কের চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ কিছু কৌশল অনুসরণ করার পরামর্শ দেন।
১. কে কী দায়িত্ব পালন করছেন, পরিবারের প্রত্যেকে আলাদা করে লিখে রাখবেন।
২. কোন দায়িত্ব পালন করতে পছন্দ করেন ও কোনটা করেন না- তা সঙ্গীকে জানান।
এতে আপনি কতটা ভার বহন করছেন তা জানা যাবে এবং সম্ভব হলে আপনি কিছু কাজ ভিন্নভাবে করতে পারেন যাতে অন্যরাও তা উপভোগ করতে পারে।
‘নিজের মত হওয়া’ অনুশীলন করুন
গুগল’য়ের প্রাক্তন প্রকৌশলি এবং ‘সার্চ ইনসাইড ইয়োরসেল্ফ’য়ের লেখক শাদ-মেং ট্যান আবেগীয়-বুদ্ধিমতা বাড়ানোর কিছু কৌশল প্রকাশ করেন।
২০১২ সালে প্রকাশিত বইটিতে কীভাবে স্ত্রীর সঙ্গে হওয়া ঝামেলা মোকাবিলা করেন সে প্রসঙ্গে বর্ণনা দেন।
‘আমি নিজেকে পাশের ঘরে থাকা একটি মানুষ হিসেবে কল্পনা করি। আমি নিজেকে মনে করিয়ে দেই যে, এই ব্যক্তিটি আমার মতোই সকল ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে চায়, আমার মতোই সুখী হতে চায় এবং আরও অনেক কিছু।’
‘এর ঠিক কিছুক্ষন পরেই আমি নিজের সম্পর্কে, ওই ব্যক্তি সম্পর্কে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো অনুভব করি। আমার রাগ তখনই অনেকাংশে কমে যায়।’
দশ মিনিটের নিয়মগুলো অনুশীলন করুন
দশ মিনিটের নিয়মগুলি অনুশীলন করার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ টেরি অরবাচ।
তার ‘ফাইভ সিম্পেল স্টেপ্স টু টেক্ ইয়োর ম্যারিজ ফ্রম গুড টু গ্রেট’ বইয়ে তিনি এই বিষয়গুলো বর্ণনা করে বলেন, প্রতিদিন সঙ্গীর সঙ্গে সন্তান, কাজ ও ঘরোয়াবিষয় বা দায়িত্ব বাদে যে কোনো কিছু নিয়ে দিনের বেলায় গল্প করুন।
যেমন
* তুমি কি তোমার মা অথবা বাবার খুব কাছের মানুষ ছিলে? কেনো?
* নিজেকে আসলে কত বয়স্ক মনে কর? কেন?
* সবসময়ের জন্য তোমার অপছন্দের তিনটি গান কী কী?
* কোন বিষয়টা তুমি সবসময় মনে রাখতে চাও?
অরবাচের মতে, সঙ্গীর সম্পর্কে নতুন কিছু জানা সম্পর্ককে নতুন ও সজীব মনে হতে সাহায্য করে। আর বিয়ের পর প্রথম কয়েক বছর যেমন ছিল ঠিক তেমন অনুভূত হতে সাহায্য করবে।
সঙ্গী সম্পর্কে নতুন কিছু জানুন
শহুরে গবেষণা নিয়ে লেখা যুক্তরাষ্টের মনোবিজ্ঞানী নিকোলাস এপ্লি ২০৪১ সালে প্রকাশিত ‘মাইন্ডওয়াইজ’ বইয়ে জানান, সঙ্গী সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি বলে মনে করি! তবে সেটা ঠিক নয়। তাই তিনি একটি সাধারণ সমাধান বের করেন। সেটা হল সঙ্গী সম্পর্কে সব কিছু ধারণা করে না নিয়ে বরং তাকে প্রশ্ন করুন আর তার উত্তর শুনুন।