বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সত্য বলা মহাভয়: রিজভী
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রবাদ আছে, মিথ্যা বলা মহাপাপ। আর এখন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সত্য বলা মহাভয়। মিথ্যা বলা যদি কোনো ‘শিল্প’ হতো, তাহলে অনর্গল মিথ্যা বলা এই সরকারের মন্ত্রী-নেতারা হতেন সেই শিল্পের নায়ক-মহানায়ক। এঁরা তাঁদের রাজনৈতিক পাঠশালায় সত্য কথা বলার শিক্ষা অর্জন করেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী সরকারের সমালোচনা করে এসব কথা বলেন। দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে উন্নয়নের নামে বর্তমান সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছেÑএমন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত। আইনের শাসন অনুপস্থিত। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। দেশে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ মহামারি আকারে বেড়েই চলছে। গণতন্ত্রের অভাবে শাসন কাঠামো ভেঙে পড়েছে। বাস্তবে জনগণের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়ার নামে সব সামাজিক চুক্তি ভঙ্গ করে জনগণকে শৃঙ্খলিত করেছে। জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের নামে চলছে বল্গাহীন লুণ্ঠন। …প্রকৃত বাস্তবতা হলো, এই উন্নয়ন হলো ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আর তাদের সহযোগিতাকারীদের পকেটের উন্নয়ন। আর নিরন্ন মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর উন্নয়ন। এ সময় বিএনপির এই নেতা আরো অভিযোগ করেন, ক্ষমতা নিরুপদ্রব রাখতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে গত দেড় বছর। গুরুতর অসুস্থ নেত্রীকে জামিনে বাধা দিচ্ছে সরকার। রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দ্রুত নতুন নির্বাচনের দাবিতে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হবে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ। বিএনপি পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে এই মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা আমাদের আন্দোলনের একটি ধাপ। আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) বরিশালে আমাদের মহাসমাবেশ হবে। জনসমুদ্রে পরিণত হবে সমাবেশ। সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে পুলিশ প্রশাসন। বরিশালে এক সপ্তাহ ধরে অনিশ্চয়তায় রেখে গতকাল (গত বুধবার) শেষ মুহূর্তে পুলিশ ঈদগাহ মাঠে মহাসমাবেশের অনুমতি দিলেও বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা বরিশালের বেলস পার্কে সমাবেশের জন্য আবেদন করলেও অনুমতি দেওয়া হয়েছে ঈদগাহ মাঠে; যার পরিসর অত্যন্ত ছোট। এটা সরকারের রাজনৈতিক দেওলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ, যোগ করেন রিজভী। রিজভী বলেন, জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। গত এক দশকে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ বেড়েছে। অপরদিকে, এই সরকার বলছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন, দেশে কোনো হাহাকার নেই। অভুক্ত মানুষ নেই। রিজভী বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও), শিশু তহবিল ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএফএডি) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উদ্যোগে ‘বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বাস্তবতা ২০১৯’ শিরোনামে যৌথভাবে প্রণীত নতুন প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে দুই কোটি ৪২ লাখ মানুষ ভালোভাবে খেতে পায় না। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে বাংলাদেশে প্রতি ছয়জন মানুষের মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। গত এক দশকে এ দেশে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ বেড়েছে। অপরদিকে, রাতের আঁধারে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী বলে আসছেন, দেশে কোনো হাহাকার নেই। অভুক্ত মানুষ নেই। বিনা নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকা এই অবৈধ সরকারের গত ১০ বছরে ধনী আরও ধনী, গরীব আরও গরীব হয়েছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, নজীরবিহীন দলীয়করণ, প্রশাসন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। জবাবদিহিতার অভাব, অকার্যকর সংসদ দুর্নীতিকে লাগামহীন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ধ্বংসের মুখে। শেয়ার মার্কেট লুট, ব্যাংক লুট, দলীয় ব্যক্তিদের জন্য ঋণ সুবিধা ও ফেরত না দেওয়ার প্রবণতা একনায়ক সরকারের সমর্থক ও তল্পীবাহকদের বা লাগামহীনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার ও গণলুট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভেতরে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য করে ফেলছে। দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে উন্নয়নের নামে বর্তমান সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত। আইনের শাসন অনুপস্থিত। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। দেশে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ মহামারি আকারে বেড়েই চলছে। এমনকি ২২ জেলায় বন্যায় অসহায় অভুক্ত মানুষকে ত্রাণও দেওয়া হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা হাসান জাফির তুহিন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।