কুমিল্লায় ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ পুলিশের সোর্স গ্রেফতার
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
কুমিল্লা পুলিশের সোর্স ইয়াবার ডন সোর্স সাজ্জাদকে ৫ হাজার পিস ইয়াসাসহ গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশ। গত বুধবার রাতে ইয়াবার ডন ও পুলিশের সোর্স সাজ্জাদ হোসেন (৩৫)কে ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সে নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার সিদ্দিক মিয়ার পুত্র। সোর্স সাজ্জাদ গ্রেফতার হওয়ায় নগর জুড়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি ডিবি পুলিশসহ পুলিশ সুপারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লার সুশীল সমাজ। এসব সোর্স নামীয় দাগী আসাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানান তারা। সোর্স সাজ্জাদের উত্থান শুরু হয় ছিসকে চোর থেকে পতন হয় ইয়াবা ডন থেকে কোটি হয়ে এখন কারাবাস করছেন সেই আলোচিত সোর্স সাজ্জাদ। যার অত্যাচারে কুমিল্লার প্রায় ৬০% সাধারণ মানুষই জিম্মি ছিল তার কাছে। কত অসহায় মানুষকে জিম্মি করে মাদক দিয়ে ধরিয়েছিল এই সোর্স সাজ্জাদ। অবশেষে ডিবি পুলিশের সহিদ-কামালের বলিষ্ট ভূমিকার কারণে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম, উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ সহিদুল ইসলাম পিপিএম), উপপরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম ও সহকারি উপপরিদর্শক নন্দ চন্দ্র সরকার সঙ্গীয় ফোর্স মঙ্গলবার গভীর রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানাধীন পশ্চিম রেইসকোর্স বাদশা মিয়ার বাজারের হৃদয় স্টোরের সামনে হতে পুলিশের সোর্স ও ইয়াবার ডন মোঃ সাজ্জাত (৩৫) হোসেনকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তল্লাশী চালিয়ে তার সাথে থাকা ২৫টি নীল রংয়ের পলিব্যাগের ভিতরে রক্ষিত প্রতিটি ব্যাগে ভিতরে ২’শ পিস করে মোট ৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। গত বুধবার কোতোয়ালি মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, কুমিল্লা নগরী উত্তর চর্থা খোকন মেম্বারের বাড়িতে দীর্ঘদিন সাজ্জাদের পিতা মাতা ভাড়া থাকতো। উত্তর চর্থা তার দাদা বাড়ি থাকলেও দাদা জীবিত থাকা অবস্থায় অভাব অনুটনের কারণে সম্পত্তি বিক্রি করে। যার ফলে তার পিতা সিদ্দিক মিয়া পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। পরে নিরূপায় হয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে খোকন মেম্বারের বাড়িতে ভাড়া থাকতো। তখনকার সময় তার পিতা কাঠুরিয়া ছিল। বিভিন্ন গাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতো। অভাবের কারণে তা মা তাদেরকে লেখাপড়া করাতে পারেনি। যার কারণে উঠতি বয়স থেকে সাজ্জাদ বাস বাড়িতে চুরি ডাকাতি, ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। হয়ে যায় জিরা সুমনের সহযোগি। জিরা সুমন ক্রস ফায়ারে পড়ে যাওয়ার পর ভয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই জসিম উদ্দিনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে পুলিশের সোর্স বনে যায়। এরপর থেকে শুরু হয় সোর্স সাজ্জাদের উত্থান। এরপর প্রথম বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার কারণে তাকে তালাক দিয়ে দৌলতপুর এলাকার সাবেক মেম্বার স্বপ্নের কন্যাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে ঠাকুরপাড়া ফ্ল্যাটবাসায় ভাড়া থাকেন। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে পুত্র রয়েছে। তার দেখাশোনা করেন সাজ্জাদের বড় ফারুক। তিনি তাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তবে সোর্স সাজ্জাদ প্রথম স্ত্রীর সন্তানের দেখাশোনার খরচ বহন করে না। সে তার পিতা-মাতার খোঁজ খবরও নেয় না বলেও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। প্রথম স্ত্রীর সন্তানের খবর না নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর পুত্র সন্তানের জন্ম দিনে বিশাল আকারে অনুষ্ঠানে করেন। ওই অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তার নিকটাত্মীয়ের সূত্রে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময়ের জিরা সুমনের সহযোগি হিসেবে কাজ করে আসছিল। টেকনাফ থেকে ইয়াবা ও ভারত থেকে ফেন্সিডিলের চালান এনে কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মাদক পাচার করে আসছে। গরু চোর পুলিশের সোর্স সাজ্জাদ ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি পতি বনে গেছে। ‘সাজ্জাদ কাগজপত্র ছাড়াই ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার দামের অবৈধ মোটর সাইকেল’, ‘কয়েকটি হাইএক্স গাড়ি’, যার মূল্য ৬৪ লক্ষ টাকা, বাসার ভিতরে ফার্মে ১৭টি গরু রয়েছে, যার মূল্য অনুমান ৫০ লক্ষ টাকা, নামে বেনামে ‘অবৈধ সম্পদ’ রয়েছে। তার ১০ আঙ্গুলের মধ্যে ‘৮ আঙ্গুলেই তার স্বর্ণের আংটি’ ব্যবহার করছে। কুমিল্লার ছিনতাইকারীদের গডফাদার জিরা সুমনের সাথে ক্রস ফায়ারে পড়ে যাওয়ার ভয়ে পুলিশের ‘সোর্স’ এর খাতায় নাম লিখায় গরু চোর সাজ্জাদ। জিরা সুমন ক্রস ফায়ারে নিহত হলেও তার সহযোগি সাজ্জাদ এখনো নির্বিঘেœ প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, জমিদখল, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ ৩০টিরও অধিক মামলা থাকলেও বিচার কিংবা গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কুমিল্লা সচেতন নাগরিকরা। কিন্তুু প্রশাসনের তেমন কোন উদ্যোগ সফল হচ্ছে না গরু চোর সাজ্জাদের কারণে। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পুলিশ সোর্স সাজ্জাদ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সোর্স সাজ্জাদ ইয়াবা ব্যবসা করে কয়েকটি হাইএক্স গাড়ির মালিক, মোটর সাইকেল সহ নামে বেনামে রয়েছে তার অবৈধ সম্পদ। সোর্স পরিচয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সোর্স পরিচয় দিয়ে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এ সোর্স সাজ্জাদ। এসব ইয়াবা অল্প বয়সী ১০/১৫জন শিশুদের দিয়ে সিন্ডিকেট বাহিনী তৈরী করে বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যের ছত্রছায়ায় সোর্স সাজ্জাদের দুর্বৃত্তের কর্মকা-ে বার বার কলঙ্কিত হচ্ছে পুলিশ বাহিনী। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থাও তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় কুমিল্লা পুলিশের সোর্স হিসেবে ব্যাপক আলোচিত উত্তর চর্থার গরুর সোর্স সাজ্জাদ। এ সময় জিরা সুমনের সহযোগি হিসেবে সোর্স সাজ্জাদ দীর্ঘদিন কাজ করেছিল। ‘ক্রস ফায়ার’ থেকে বাঁচতে পুলিশের খাতায় সোর্সের নাম দেয় এ সাজ্জাদ। পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘কাজে লাগিয়ে’ তারা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ব্লাকমেইলিংসহ বিভিন্ন অপরাধ করে চলেছে। ইতোমধ্যে কুমিল্লায় সোর্স সাজ্জাদের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কুমিল্লা জেলা পুলিশের কার্যক্রম। সোর্স সাজ্জাদ কোনো কোনো ক্ষেত্রে চেকপোস্টে দেহ তল্লাশির নামে মানুষকে বিবস্ত্র করে। মহিলারাও তার হাত থেকে রক্ষা পায় না। একসময় সে গরু চোর, ছিনতাইকারী জিরা সুমনের গডফাদার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধাবরিয়ে বেড়িয়েছে। জিরা সুমনের গডফাদার হিসেবে দীর্ঘদিন ছায়া দিয়ে আসছিল সাজ্জাদ, জিরা সুমন বাহিনীর নিঃস্ব হওয়ার পরও সাজ্জাদ নিজেকে ‘ক্রস ফায়ার’ থেকে বাচিয়ে রাখার জন্য পুলিশের সোর্সে নাম দেয়। বর্তমানে জিরো থেকে হিরো বনে যান। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে সাজ্জাদ বাহিনী সম্পৃক্ততা রয়েছে। পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য করে ছিনতাইকারীদের আগে থেকেই অবগত করার কারণে ছিনতাইকারীরা ধরাছোয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সোর্স ও ইয়াবা ব্যবসা করে বর্তমানে কোটি টাকা বনে গেছেন। ‘সাজ্জাদ কাগজপত্র ছাড়াই ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার দামের অবৈধ মোটর সাইকেল’, ‘কয়েকটি হাইএক্স গাড়ি’, নামে বেনামে ‘অবৈধ সম্পদ’ রয়েছে। তার ১০ আঙ্গুলের মধ্যে ‘৮ আঙ্গুলেই তার স্বর্ণের আংটি’ ব্যবহার করছে। জনমনে প্রশ্ন এসব অর্থের মূল উৎস কি, সে কি আয়কর দিচ্ছে, তাহলে সরকারী বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা পুলিশের সোর্স পরিচয় ব্যাবহার করে গরু চোর সাজ্জাদ বর্তমানে নগরীর বেশ কয়েকটি ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। শুধু তাই নয় সকল মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশের নাম করে প্রতিমাসে ৬/৭ লাখ টাকা নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্ত মাদক ব্যাবসায়ীদের যারা মাসোহারা দিতে অস্বীকার করে তাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করায় সাজ্জাদ। যার ফলে কেহই প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। আর যারা মাসোহারা দেয় তারা পর্দার আড়ালে নির্ধিদ্বায় চালিয়ে যায় মাদক ব্যবসা। ফলে মাদক বন্ধ না হয়ে দিন দিন তার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে উঠতি বয়সের যুবক-যুবতিরা নেশায় লিপ্ত হয়ে সমাজকে কুলসিত করছে। পুলিশের সোর্স সাজ্জাদ কুমিল্লা ইয়াবা ব্যবসা, খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভূমিদখল, এমনকি অপহরণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কখনো আবার তারা পুলিশকে ‘মিসগাইড’ করে নানা অপরাধ করছেন। মাদক ব্যবসার অধিকাংশ সিন্ডিকেট সোর্স সাজ্জাদ নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ জেনেও না জানার মত থাকেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশের নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকা-ে সোর্স সাজ্জাদ জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে এলেও বাস্তবতা আরো ভয়ঙ্কর আকার ধারন করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতা দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছে সোর্স সাজ্জাদ এবং কেউ এর প্রতিবাদ করলে তাকে আটকের ভয় দেখাচ্ছে। সোর্স সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হত্যা, মাদক ব্যাবসাসহ প্রায় ৩০টি মামলা বিচারাধীন অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে- পুলিশের কতিপয় অর্থ লোভী কর্মকর্তারা বানিজ্য করার জন্য সোর্স সাজ্জাদের কথা মতে যাকে তাকেই গ্রেফতার করছে। সর্বপরি সোর্স সাজ্জাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে কুমিল্লাবাসী। সোর্স সাজ্জাদের হাত থেকে রক্ষার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে কুমিল্লা বাসি। সোর্স সাজ্জাদ পুলিশের পরিচয় দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করে বর্তমানে কোটি পতি বনে গেছেন। তার রয়েছে নামে বেনামে কয়েকটি হাইএক্স গাড়ি, লাইসেন্স বিহীন মোটর সাইকেল দিয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে তল্লাশির নামে সোর্সদের ‘ফিটিং’ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। রাতে চলাচলরত মানুষকে তল্লাশির নামে পকেটে ইয়াবা কিংবা গাঁজার পুরিয়া দিয়ে ফিটিং দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে সোর্স সাজ্জাদের বিরুদ্ধে। আবার কখনও কখনও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়েও এরা নিরপরাধ মানুষের অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়। কুমিল্লার পাড়া-মহল্লায় এখন আতঙ্কের নাম পুলিশের সোর্স সাজ্জাদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুমিল্লার এক নামে সোর্স সাজ্জাদকে কে বা না চিনে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ মানুষ। তার গ্রেফতারের খবরে কুমিল্লা নগর জুড়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে।