মায়ের কোলে ফিরলো ইয়াসিন। দুধের শিশুর মায়ের কোলের মত এমন নিরাপদ আশ্রয় আর কেউ দিতে পারে? বয়স মাত্র আট মাস। যে জানেও না কিন্তু তাকে নিয়ে কত কিছুই না ঘটলো।
মা-বাবা একসঙ্গে থাকুক এটা সব সন্তানের কামনা। কিন্তু তা যদি না হয়। যদি অধিকার নিয়ে শুরু হয় লড়াই তখন দুধের শিশু কোথায় দাঁড়াবে? সর্বোচ্চ আদালত মা-বাবা ও সন্তানের সম্পর্কের গুরুত্ব বিচার করে অনন্য এই আদেশ দিলেন। সন্তান খুঁজে পেল নিরাপদ আশ্রয়।
দীর্ঘ দিন ধরে স্বামী এহসান আব্দুল্লাহ ও স্ত্রী তাসমিয়া হাসানের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। এর জের ধরেই তাসমিয়া হাসান চলে যান মায়ের বাড়ি। সঙ্গে নিয়ে যান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া ছোট্ট ছেলে ইয়াসিন আব্দুল্লাহকে। এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর টিকা দেয়ার জন্য ছেলেকে নিয়ে গুলশান ল্যাবএইড হাসপাতলে যান তাসমিয়া। সেখানে ছেলেকে দেখতে আসেন বাবা এহসান আব্দুল্লাহ ও শিশুটির দাদি।
এক পর্যায়ে ইয়াসিনকে আদর করার কথা বলে তার মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে নিজ বাসায় নিয়ে যান বাবা ও দাদি। এরপর মা তাসমিয়া থানায় জিডি করেন। আইনী প্রতিকারের জন্য যান মহিলা পরিষদে। কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে নিজ সন্তানকে ফিরে পেতে ২২ অক্টোবরে হাইকোর্টে রিট করেন। পরদিন হাইকোর্ট ইয়াসিনকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়ার প্রশ্নে রুল জারি করেন। রিটে ইয়াসিনকে যেন বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন সেই আবেদন জানিয়ে আরো একটি সম্পুরুক আবেদন করা হয়। কিন্তু মায়ের আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান মা তাসমিয়া। রবিবার আবেদনের উপর শুনানির এক পর্যায়ে মায়ের বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত। মায়ের বক্তব্য শুনে বিচারকরা শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশের পর বিকালে সুপ্রিম কোর্ট সমিতি ভবনে শিশুটিকে আইনজীবির মাধ্যমে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ইয়াসিন পিরে পায় নিরাপদ আশ্রয়।
আইনজীবিরা জানিয়েছেন, এই মামলার রুল নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছেই ধাকবে ইয়াসিন। তবে বাবা ইয়াসিনকে দেখতে যেতে পারবেন। আদালতে মায়ের পক্ষে আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দীকি, মোহাম্মাদ আলি আজম ও আইনুন নাহার সিদ্দিকা এবং বাবার পক্ষে আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার শুনানি করেন।