January 16, 2025, 2:56 am

সংবাদ শিরোনাম
মধুপুরে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত বেনাপোলে বিজিপি বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হারিয়ে যাওয়া মায়ের খোঁজে দিশেহারা সন্তানরা ভিসা জটিলতায় বেনাপোল বন্দরে পরিবহন ব্যাবসার ধ্বস তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রজেক্টরে ভেসে উঠায় স্থানীয় জনতার প্রতিবাদ ঢাকায় দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করলেন সন্ত্রাসীরা: বেনাপোলে ভারতীয় ভয়ঙ্কর ট্যাপেন্টাডোল জব্দ মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ লামায়-আলীকদম অনুপ্রবেশকালে ৫৮ মিয়ানমার নাগরিকসহ ৫ দালাল আটক

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় গোলাম সারওয়ারকে চির বিদায়

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় গোলাম সারওয়ারকে চির বিদায়

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

সহকর্মী সাংবাদিক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনীতিবিদদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন প্রবীণ সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার। দীর্ঘ দিনের প্রিয় কর্মস্থল সমকালে সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সমকাল পরিবারের যৌথ আয়োজনে নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে এসে তার মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ ও অধিকারকর্মীরা। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পরে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) জানায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। গত সোমবার সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যান সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের মতো জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানেই বিকালে তার দাফন হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ ও সেই মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রশ্ন যখনই উঠে আসে- তখন সেই ইস্যুতে এক আপোষহীন কলমযোদ্ধা ছিলেন গোলাম সারওয়ার। ১৪ দলের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম গোলাম সারওয়ারকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের ‘ভরসা’ বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তিনি যেমন আমাদের প্রশংসা করতেন, তেমনিভাবে অনেক সমালোচনাও করেছেন। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকেও ভালো পরামর্শ দিতেন তিনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অ্যাজ মাই এসেসমেন্ট, হিজ ইজ অ্যা ভেরি কম্পোজড ম্যান। তিনি যা কিছু বলতেন, বুঝে বলতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক ছাত্র গোলাম সারওয়ারের সরাসরি শিক্ষক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, শিক্ষকের আগে আজ ছাত্র চলে গেল…সারওয়ার আজীবন সৎ সাংবাদিকতা করে গেছে। সাংবাদিকতা জগতে তার নাম স্থায়ী হয়ে থাকবে। জাসদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আজকে আমরা যখন সন্ত্রাস, জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চলেছি, তখন তার মতো একজন ব্যক্তিদের ভূমিকার বড় দরকার ছিল। তিনি শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন গণমাধ্যমের অভিভাবক। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, গোলাম সারওয়ার আমার সমবয়সী ছিলেন। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। তার চলে যাওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়েরও ক্ষতি হল আমার। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, গোলাম সারওয়ার ছিলেন একজন বাতিঘর; যে বাতিঘর কখনো নিভে যাবে না। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার নৈতিকতার বিকাশে তিনি ছিলেন ছিলেন সোচ্চার ও এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গোলাম সারওয়ারকে ‘কিংবদন্তী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি শুধু সাংবাদিকই ছিলেন না, সামাজিক ও শিক্ষা খাতেও তিনি যুক্ত ছিলেন। নতুন প্রজন্ম তাকে অনুসরণ করতে পারে। সমকালের প্রকাশক ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সংবাদপত্র জগতে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। র‌্যাবের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, আজকে আমার শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বি চলে গেলেন। দশ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের পরিচয় ছিল। তাকে হারিয়ে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু বলেন, আমার বাবা তার কাজকে একদম ধর্মের মতো পালন করতেন। সারা জীবনভর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বাবা বলতেন, আমাদেরও সে বিশ্বাসে বড় করেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে গণতন্ত্রী পার্টি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ইটিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল। প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বটি চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। পরে গোলাম সারওয়ারের মরদেহ আনা হয় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি পুলিশের চৌকশ দল মরহুমের কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে এই রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেস সচিব ইহসানুল করীম ও উপ তথ্য সচিব আশরাফুল আলম খোকন মরহুমের কফিনে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান। বেলা পৌনে ১টায় মরহুমের কফিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসে পৌঁছালে সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মরহুমের কফিন কালো কাপড়ে নির্মিত মঞ্চে রাখা হয়। সেখানে প্রবীণ-নবীন সাংবাদিকরা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ নোমান বলেন, সারোয়ার ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন প্রতিথযশা সাংবাদিক। অনেক গুণাবলী তাকে শ্রেষ্ঠ মানুষের কাছে নিয়ে গেছে। আমি তার মৃত্যতে গভীর শোকপ্রকাশ করছি। সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি আমার সহকর্মী ছিলেন। দীর্ঘদিন আমরা একসাথে কাজ করেছি। সাংবাদিকদের নানা সমস্যা এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিভিন্ন সংকটের সময়ে সমাধানে তার যে উদ্যোগ স্মরণীয়। ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে আমি তার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করছি। এই সংগঠনের গঠনে তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ইটিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল, সমকালের প্রকাশক একে আজাদ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি, প্রয়াত সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের জ্যেষ্ঠ ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এরপর ক্লাব প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ কামালউদ্দিন, শাহজাহান মিয়া, হাসান শাহরিয়ার, আবুল কালাম আজাদ, মতিউর রহমান চৌধুরী, নঈম নিজাম, শাহ আলমগীর কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএফইউজের দুই অংশের রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ, মোল্লা জালাল, শাবান মাহমুদ,ডিইউজের দুই অংশের আবু জাফর সূর্য, সোহেল হায়দার চৌধুরী, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাইফুল ইসলাম, শুক্কর আলী শুভ, ফটো জার্ণালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের গোলাম মুস্তফা,কাজল হাজরা, ইআরএফের সাইফুল ইসলাম দিলাল, রাশেদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, সাহেদ চৌধুরী, ইলিয়াস খান, মাইনুল আলমসহ কয়েকশ সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীরা অংশ নেন। এছাড়া দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনোজ কান্তি রায় উপস্থিত ছিলেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর