জানুয়ারিতে চালু হচ্ছে ফোর-জি
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর টেলিযোগাযোগের ফোরজি সেবার লাইসেন্স ও তরঙ্গ নিলামের নীতিমালা হাতে পেয়েছে টেলিযোগাযাগ বিভাগ। টেলিযোগাযাগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, আসছে জানুয়ারিতেই এ সেবা চালু করা যাবে বলে তারা আশা করছেন। তবে ‘প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা’ বা যে কোনো তরঙ্গে যে কোনো প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দিতে যে ফি ঠিক করা হয়েছিল, মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাবির মুখে তাতে শর্তসাপেক্ষে কিছুটা ছাড় দিচ্ছে সরকার। মোবাইল অপারেটররা তাদের আগে বরাদ্দ পাওয়া তরঙ্গ ‘প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায়’ রূপান্তরের কাজটি একধাপে করলে মেগাহার্টজ প্রতি ৪ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। আর আংশিক রূপান্তর করলে খরচ হবে সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলার। গতকাল বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এক ‘জরুরি’ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর সংশোধিত নীতিমালা গতকাল বুধবার টেলিযোগাযাগ বিভাগে এসেছে। এখন কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। আশা করছি, আগামি জানুয়ারি থেকে ফোর-জি সেবা শুরু করতে পারব। ফোরজি লাইসেন্সের খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করে গত মে মাসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায় বিটিআরসি। পরে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। ফোরজি লাইসেন্সের জন্য নিলাম হবে না। আবেদন করে নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে লাইসেন্স নেওয়া যাবে। অপারেটরদের আবেদন ফি হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। লাইসেন্স পেতে দিতে হবে ১০ কোটি টাকা। আর বার্ষিক নবায়ন ফি হবে ৫ কোটি টাকা। এ লাইসেন্স নিতে অপারেটরদের ১৫০ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টিও দিতে হবে। রেভিনিউ শেয়ারিংয়ে সরকারকে দিতে হবে আয়ের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অপারেটরগুলোকে ফোর জি তরঙ্গ বরাদ্দ পেতে অংশ নিতে হবে নিলামে। নীতিমালায় এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ নিলামের ভিত্তিমূল্য ঠিক করা হয়েছে প্রতি মেগাহার্টজে ৩০ মিলিয়ন ডলার। আর থ্রি জির দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজের প্রতি মেগাহার্টজ ২৭ মিলিয়ন ডলার এবং ৯০০ মেগাহার্টজের প্রতি মেগাহার্টজ ৩০ মিলিয়ন ডলার ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর টু জি ও থ্রি জি সেবার জন্য বরাদ্দ করা তরঙ্গে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা পেতে (যাতে ওই তরঙ্গ যে কোনো প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায়) প্রতি মেগাহার্টজের জন্য চার্জ দিতে হবে। তারানা হালিম বলেন, ফোর-জির বিষয়ে অপারেটররা ২৩টি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। গত অক্টোবরে টেলিযোগযোগ বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে অপারেটরদের এক বৈঠকে সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বিটিআরসি আগে ঠিক করেছিল, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুযোগ পেতে অপারেটরদের প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গে সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলার চার্জ দিতে হবে। কিন্তু সেই নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৮০০ ও ৯০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ যদি একধাপে রূপান্তর করা হয়, তাহলে চার মিলিয়ন ডলার দিলেই হবে। তবে আংশিক রূপান্তরে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারই দিতে হবে। টু-জির ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড এবং থ্রিজির ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মিলিয়ে গ্রামীণফোনের হাতে মোট তরঙ্গ রয়েছে ৩২ মেগাহার্টজ। এ ছাড়া বাংলালিংকের হাতে ২০ মেগাহার্টজ এবং রাষ্ট্রায়াত্ব টেলিটকের হাতে রয়েছে ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ রয়েছে। রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার পর রবির তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টর্জে। তবে একীভূত হওয়ার পর এয়ারটেলের কাছ থেকে ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ফেরৎ দেওয়ার কথা বলছে বিটিআরসি। ফোর-জি লাইসেন্স নীতিমালায় অপারেটরদের বেশ কিছু দাবি বিবেচনা করা হয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, ফোর-জির প্রাথমিক স্পিড ২০ মেগাবিটস পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) নির্ধারণ করা হয়েছে। বিটিআরসি সময় সময় গতি পরিবর্তন করতে পারবে, সে সুযোগ নীতিমালায় রাখা হয়েছে। আগের নীতিমালায় নূন্যতম ১০০ এমপিবিএস গতির কথা বলা হয়েছিল। কল রেকর্ডের সময়সীমা কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে, যা ১২ বছর করার প্রস্তাব ছিল। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যেমে অপারেটরদের সেবা দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতির প্রয়োজন হবে না। অপারেটররা নেটওয়ার্কের উন্নয়নে ফাইবার অপটিক কেবলও স্থাপন করতে পারবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।