এনআইডি সেবা: অনিয়মে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি নির্বাচন কমিশনের
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাকে কেন্দ্র করে অনিয়ম, হয়রানি, আর্থিক দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।
অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অভিযোগ ও সুপারিশ পাওয়ার পরই ১৩ নভেম্বর মাঠ কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
বাংলাদেশের ১০ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি নাগরিক বর্তমানে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত। আসছে জানুয়ারিতে হালনাগাদে মৃত ১৩ লাখেরও বেশি ভোটার বিদ্যমান তালিকা থেকে বাদ যাবে; পাশাপাশি যোগ হচ্ছে আরও অন্তত ৩৫ লাখ নতুন ভোটার। ভোটারযোগ্যদের প্রতিনিয়ত ভোটার করার প্রক্রিয়াও চলে সব সময়।
এ অবস্থায় ‘এনআইডি ইস্যু, সংশোধন ও হালনাগাদে সুশাসন প্রতিষ্ঠার’ বিষয়ে নির্দেশনা দিল ইসির এনআইডি উইং। মাঠ কর্মকর্তাদের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, দালাল চক্রের সম্পৃক্ততার সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সেবা প্রার্থীদের যথাযথ প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও যথাযথ সেবা দেওয়া না দিয়ে নানা ধরনের কৌশল নেওয়া হয় যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, নানা অনিয়ম, ছল-চাতুরী, অন্যের নাম ভাঙানো ইত্যাদি অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, সর্বশেষ [গত ১১ সেপ্টেম্বর] প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে এবং তা সমাধানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ অবস্থায় কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারীর বা অন্য কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, সেবা প্রার্থীকে হয়রানি বা সেবা প্রদানে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ইত্যাদি প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনআইডি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ অত্যন্ত দুরূহ হলেও ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি করে যাচ্ছে। এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেওয়া ইসির অন্যতম বিশাল অর্জন যা দেশে বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে এনআইডির সঠিকতা ও শুদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, দালালের জন্য ভেস্তে দেওয়া যায় না, দেওয়া হবে না।
দুর্নীতি, হয়রানি এবং সকল অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ইসির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরেন তিনি। সেই সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে প্রার্থীদের ভোগান্তি-হয়রানি কমাতে ১৮টি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন।
অফিসে সেবা প্রার্থী ছাড়া দালাল চক্রের অবস্থান নিষিদ্ধ, আঙিনায় মোবাইল ব্যাংকিং ও দোকানপাটের অবস্থান নিষিদ্ধ, কর্মকর্তা-কর্মচারীর আর্থিক লেনদেন পেলেই ব্যবস্থা, নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দালালদের সাজা, কম্পিউটারে সঠিক ডাটা এন্ট্রি, নতুন ভোটার-হারানো-সংশোধন সেবায় আলাদা রেজিস্ট্রার, নির্ধারিত সময়ে সেবা দেওয়াসহ নানা প্রদক্ষেপ তুলে ধরেন এনআইডি ডিজি।
উপজেলা পর্যায়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণকে সামনে রেখে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সংশোধন আবেদন আহ্বান করেছে ইসি। এনআইডি পরিচালক (যুগ্মসচিব) আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে সবসিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রণ শেষ হয়েছে এবং বিতরণ কার্যক্রম চলছে। সব জেলার (সদর ব্যতীত) উপজেলা পর্যায়ের কার্ড শিগগিরই মুদ্রণ শুরু হতে যাচ্ছে। মুদ্রণের পর কারও কারও স্মার্ড জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোপূর্বে একাধিকবার এনআইডি সংশোধনের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারপরও যাদের এনআইডিতে ভুল আছে, কিন্তু সংশোধন করেনি, তাদেরকে পুনরায় ভুল সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে এনআইডি উইংয়ের কমিউনিকেশন কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান জানান, নাগরিকেরা যাতে নির্ভুল স্মার্টকার্ড নিশ্চিত করতেই উপজেলা পর্যায়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সংশোধনের আবেদন করতে বলা হয়েছে। এজন্য ২০ নভেম্বর থেকে মাঠপর্যায়ে প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে।