পাসপোর্ট করতে মরিয়া রোহিঙ্গারা
দিদারুল আলম সিকদার
মিয়ানমার সহিংসতার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন সাড়ে ৬ লাখের বেশী। এরই মধ্যে তৈরী হয়েছে নারী
পাচারের কয়েকটি সিন্ডিকেটেও। তবে এবারের গন্তব্য কোন হোটেল-মোটেল জোন নয় সরাসরি প্রবাসে। বিদেশ গমন করতে গেলেতো
প্রয়োজন পাসপোর্ট। এখানেও পাসপোর্ট কর্মকর্তা ও দালালদের যোগ সাজসে ভুঁয়া বাবা-মা‘ ও ডকুমেন্ট তৈরীর সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে।
আর তাই পাসপোর্ট জালিয়াতির কারণে আসামীরা ধরা পড়লেও রহস্যজনক কারণে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় রোহিঙ্গাদের সাজানো বাবা-
মা।
জানাযায়, গত সোমবার কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জালিয়াতির অভিযোগে আটক হয় রেজিয়া বেগম নামে এক নারী।
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুঁয়া ডকুমেন্ট, বাবা-মা‘ সাজানো, প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রও সঠিক না থাকার কারণে তাকে আটকের পর
ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার সাথে আসা সাজানো মা‘ পালিয়ে যেতে সক্ষম
হয়। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে দালাল ও পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তার সাথে সমঝোতা করে সেখানে গিয়েছিলো রেজিয়া ও তার
সাজানো মা‘। কিন্তু রেজিয়াকে আটক করা হলেও তার সাজানো মা‘কে আটক করেনি পাসপোর্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ও অনুষাঙ্গিক কাগজপত্রের সাথে নিজেদের ছবি সংযোজন করে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবেদন করার
দায়ে গত (৮ নভেম্বর) বুধবার দুপুরে দুই যুবতীকে আটক করে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ। তখন পাসপোর্ট
অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা পালং ইউনিয়নের রুমখাঁ নতুন পাড়ার অলী আহমদের দুই মেয়ে ছেনুয়ারা
ও তৈয়বা বেগমের নামে জন্ম নিবন্ধন সনদ, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র সহকারে দুইটি পাসপোর্ট আবেদন জমা
দেয়ার জন্য জমা কাউন্টারে দাঁড়ায় দুই যুবতী। তাদের সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা বিষয়টি স্বীকার করে। কিন্তু তাদের
সঠিক পরিচয় কি তা জানাতে পারেনি পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।
তবে অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অফিস ক্লিনার খাদেমুল ইসলাম সাগর ও কাউন্টারে পাসপোর্টে
সম্পর্কে জমা নেয়া ফাইল গ্রহীতা সবুজ বড়–য়ার সাথে সমোঝাতা করে তারা এসব ভুঁয়া ডকুমেন্ট জমা দিতে আসে। কিন্তু তখন জমা
নেয়ার কাউন্টারে সবুজ বড়–য়া’র পরিবর্তে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম ছিলেন। তখন এই যুবতী ফাইল
জমা দিতে গেলে মাসুম ভুঁয়া কাগজপত্র আনায় তাকে আটক করে। কিন্তু ততক্ষণে পাসপোর্ট অফিসের অফিস ক্লিনার খাদেমুল ইসলাম
সাগর তাদের সাজানো সে মা‘কে সরিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করে।
অভিযোগ আছে, দালাল ছাড়া ফাইল জমা দিতে গেলে দালালদের সহযোগীতায় আসছে বলে সেই ফাইল রেখে দেয় পাসপোর্ট অফিসের
সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম। কিন্তু দালালদের সেই চ্যানেল ফি দিয়ে যদি আসা হয় তখন সেই ফাইলে কোন অভিযোগ তো
দূরের কথা কোন প্রশ্নই করেননা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। তথ্য সংগ্রহকালে এ প্রতিবেদকের কাছে আসে টেকনাফের সাব্রাং
ইউনিয়নের আয়েশা খাতুন নামে এক নারী। সে প্রতিবেদক জানায়, কোন দালালকে টাকা না দিয়ে আমি আমার ফাইল নিয়ে গিয়ে
ছিলমা পাসপোর্ট অফিসে কিন্তু দালালদের রহস্যজনক চিহ্ন না থাকায় তারা আমার ফাইলটি আটকে রাখে। কি হয়েছে বললে তারা বলে
এখানে অনেক সমস্যা আছে। এগুলো ঠিক করতে হবে। এরপর তারা আমার ফাইলটি আর দেয়নি।
কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, এই আয়েশা খাতুন টেকনাফের সাব্রাং ইউনিয়নের একজন স্থানীয় বাসিন্দা। তার বাবা-মা‘ দুইজনের
বাংলাদেশের নাগরিক। রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র ও দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাসের সেই জমির খতিয়ানও। কিন্তু তারপরও কেন
পাসপোর্ট আবেদনের সেই ফাইল গ্রহণ করেননি সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে পাসপোর্ট অফিসের এমএসএফ সবুজ বড়–য়া বলেন, ঐ নারী নামাজ পড়ার কথা বলে পালিয়ে যায়।
আমরা বুঝতেই পারিনি তখন যে সে পালিয়ে যাচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আরেক কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম সাগরের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ
করেননি।
তবে অভিযোগ উঠেছে, এতো নিরাপত্তার মধ্যেও পাসপোর্ট অফিসের দ্বিতীয় ফ্লোর থেকে কিভাবে একজন নারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
যদি পাসপোর্ট আফিসের কোন কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত না থাকে তাহলে সে কিভাবে পালিয়ে আর গেইটে থাকা ও নিরাপত্তার কাজে
নিয়োজিত আনসার সদস্যরা কি করছিল তখন এমন প্রশ্ন সাধারন সেবাপ্রার্থীদের।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম সাংবাদিকদের বলেন,
আমার অফিসে যখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তখন এক পর্যায়ে আমি নামাজে গেলে সেখান থেকে মা‘ সেজে আসা সেই মহিলা
পালিয়ে যায়। এসবের সাথে আমার কোন কর্মচারী জড়িত নেই বলে দাবী করেন তিনি।
দিদারুল আলম সিকদার, কক্সবাজার প্রতিনিধি: