দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে অচল হাইতি, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি
ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
লাতিন আমেরিকার দেশ হাইতিতে চলছে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীদের ডাকা ধর্মঘটে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে দেশটি। তারা হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনাল মোইজের পদত্যাগ দাবি করছে। প্রেসিডেন্ট অবশ্য বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার মেয়াদকালের মধ্যে কাউকে তিনি দেশের ক্ষতি করতে দেবেন না। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, চারদিন ধরে চলা ধর্মঘট ও বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে জনসম্মুখ থেকে অনুপস্থিত ছিলেন মোইজে। গত বুধবার প্রকাশ্যে এসে তিনি তার পদের বৈধতা স্মরণ করিয়ে দেন এবং বিক্ষোভকারীদের আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান। লাতিন আমেরিকার অবস্থিত হাইতি। দরিদ্র দেশটি একদিকে যেমন দীর্ঘ সময় ধরে কলেরার মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তেমনি ভুক্তভোগী হয়েছে বড় ভূমিকম্পের। এখন দেশটিতে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ অস্থিরতার শুরু গত গ্রীষ্মে। সেসময় ভেনেজুয়ালীয় একটি সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। দেশটির সিনেটের তদন্তে উঠে আসে তহবিল অব্যবস্থাপনার চিত্র। ভেনেজুয়েলা বছরের পর বছর ধরে হাইতিসহ অন্যান্য ক্যারিবিয়ান ও মধ্য আমেরিকান দেশকে স্বল্পমূল্যে তেল সরবরাহ করে আসছে। আর তাও সহজ শর্তের ঋণে। কিন্তু ২০১৯-২০১৭ সালে হাইতির সিনেট এক তদন্তে দেখেছে, এই কর্মসূচির ২০০ কোটি ডলার তহবিলের অপব্যবহার হয়েছে। হাইতির সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী এবং বর্তমান সরকারি দলের সব সদস্যকে দায়ী করা হয়েছে। তবে এর প্রেক্ষিতে কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট মোইজে এ বিষয়ে কোনও ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আদালতকে বাধাগ্রস্ত করেছেন বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের। ক্ষোভের শুরু এখান থেকেই। বিক্ষোভকারীদের প্রতি গত বুধবার দেওয়া ভাষণে মোইজি বলেছেন, ‘আমার যে পাঁচ বছরে মেয়াদ রয়েছে এর মধ্যে কেউ, কখনও দেশের স্বার্থকে হুমকির মধ্যে ফেলতে বা দেশকে বিপদগ্রস্ত করতে পারবে না।’ তিনি বিক্ষোভকারীদের আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গণতন্ত্রে সবারই ‘খেলার নিয়ম’ মেনে চলা উচিত। টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার সময় হাইতির প্রেসিডেন্টের পাশে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিন হেনরি কেন্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন আইনমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মঙ্গলবারই তার প্রকাশ্যে বক্তব্য উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু বারবার প্রচার করার পরও তিনি ভাষণ না দেওয়া দেখা দিয়েছিল অনিশ্চয়তা। অবশেষে তিনি টেলিভিশনে ছয় মিনিটের ভাষণে অবস্থান তুলে ধরেছেন নিজের অবস্থান।
আল জাজিরা লিখেছে, এ সপ্তাহে বিক্ষোভে চার জন মারা গেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিহতের সংখ্যা ১১ জন। তারা মনে করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের মাধ্যমেই স্থিতিশীলতা আসতে পারে। এদিকে বিক্ষোভে উত্তাল বন্দর নগরী পোর্ট প্রিন্সে একটি সরকারি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে গত বুধবার। এতে ৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। সরকারি গাড়ির চাপায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভের আগুন জ¦লেছে উঠেছে আরও বেশি। তারা গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বুধবারেরও দেশটিতে স্কুল, দোকানপাট বড় বড় শহরগুলোতে বন্ধ ছিল। রাস্তায় রাস্তায় আগুন জ¦লতে থাকা ব্যারিকেডের উপস্থিতি দেখা গেছে। ব্যস্ততম নগরগুলোতে এখন শুধু চলছে টহল দেওয়া পুলিশের গাড়ি। থেমে থেমে গুলির আওয়াজ শোনা যাওয়ার কথাও লিখেছে আল জাজিরা।