গুগলের অ্যাপ ‘কর্ম’ দেশে চাকরির সন্ধান দেবে
ডিটেকটিভ প্রযুক্তি ডেস্ক
বাংলাদেশের মানুষদের চাকরি সন্ধানে সহায়তায় বৃহস্পতিবার নতুন এক অ্যাপ উন্মোচন করেছে মার্কিন ওয়েব জায়ান্ট গুগল।
গুগলের স্টার্টআপ তৈরির প্রকল্প এরিয়া ১২০-এর একটি দল ‘কর্ম’ নামের নতুন এই অ্যাপ বানানোর পেছনে এতদিন গোপনে কাজ করে এসেছে বলে ঘোষণায় জানায়। অ্যাপটির নির্মাতা দলের নেতা বিকি রাসেল বলেন, “এবার এই দল গোপনীয়তা থেকে বের হয়ে আসতে তৈরি।”
ঢাকায় অনানুষ্ঠানিক খাতের চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতাদের জন্য আনা এই কর্ম অ্যাপ যাত্রা শুরু করেছে ২০১৭ সালে। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত এটি থেকে নিজের চাহিদা মতো চাকরির সন্ধান পেয়েছে ২১ হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী। এটি দেশের এক হাজারেরও বেশি নিয়োগদাতাকে কর্মী খুঁজে নিতে সহায়তা করেছে বলে জানান রাসেল।
বৃহস্পতিবার সকালে অ্যাপটি নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে রাসেল বলেন, ‘কর্ম’ মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত, একটি হচ্ছে চাকরিপ্রার্থী অ্যাপ, অন্যটি হচ্ছে চাকরিদাতা অ্যাপ। তিনি আরও বলেন,“মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে অ্যাপের ‘বেস্ট ম্যাচ’ মডেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য করবে ‘কর্ম’। চাকরিপ্রার্থী ও নিয়োগদাতা উভয়ের জন্যই টু ওয়ে রেটিং সিস্টেম পদ্ধতিতে কাজ করবে অ্যাপটি।”
অ্যাপটিতে চাকরিপ্রার্থীরা নিবন্ধনের পর তাদের সিভি তৈরি করতে পারবে। উপযুক্ত চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সময়ের সঙ্গে কর্ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাকরিপ্রার্থীর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সিভি তৈরি করে দেবে। দক্ষতা ও ব্যক্তিগত উন্নয়ন বাড়াতে এই অ্যাপে বিষয়ভিত্তিক কনটেন্টও থাকবে বলে জানান নির্মাতারা।
এই চাকরি সন্ধানকারীর প্রোফাইল পেইজ আর তার পারফরম্যান্স রেটিং থেকে তথ্য নিয়ে নিয়োগদাতাদেরকে দায়িত্বহীন কর্মীদের শনাক্ত করতে সহায়তা করবে। যেমন, কোনো চাকরি সন্ধানকারী বারবার ইন্টারভিউতে অনুপস্থিত থাকলে তিনি খুবই কম রেটিং পাবেন।
যদি কোনো ব্যবহারকারী কর্ম অ্যাপের মাধ্যমে একটি চাকরি পেয়ে যান, এটি তাদের প্রোফাইলেও উল্লেখ করা হবে। অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের প্রোফাইলে চলে আসবে। অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার সিভি আপডেট করে দেবে।
রাসেল জানান, অন্যান্য জব ম্যাচিং এবং জব লিস্টিং সাইট থেকে কর্ম ‘ভিন্ন’। কিন্তু কোথায় এই ভিন্নতা? রাসেল বলেন, “কারণ কর্ম নিয়মিতভাবে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ‘জব ম্যাচিং’ থেকে আরও এগিয়ে গিয়ে চাকরি প্রার্থীদের পোস্ট পরিপূর্ণ করতে দায়িত্ব নেয় এটি। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারভিউ উপস্থিতি, সফল নির্বাচন, সনদ প্রদান এবং চাকরিপ্রার্থীর অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা।”
দেশের চাকরি খাতের অনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর দিকে লক্ষ্য রেখেই এই অ্যাপ আনা হয়েছে। চুক্তি, পেনশন আর নির্দিষ্ট বেতনের মতো বিষয়গুলো এই খাতে অনুপস্থিত, যার ফলে কর্মীদের অনেক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়। এ ছাড়াও, কাজের প্রমাণাদি আর পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা নথিভূক্তকরণ ‘একেবারেই কম’। প্রযুক্তি সাইট টেক ইন এশিয়া-কে রাসেল বলেন, “আপনারা দেখবেন অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে প্রচুর বেকারত্ব আর প্রয়োজনের তুলনায় কম লোক চাকরি পাওয়ার নজির থাকে।”
প্রকল্পের ৩৬ বছর বয়সী এই প্রধান আরও বলেন, “বাংলাদেশে আমরা এই সমস্যা সরাসরি দেখেছি। মানুষ প্রতিনিয়ত কর্মসংস্থান সন্ধানে লড়াই করছে আর কী করতে হবে তা নিয়েও তারা জানেন না, আর নিয়োগদাতারা মেধাবীদের খুঁজে পেতে বা তাদেরকে কার্যকরীভাবে নিয়োগ দিতে সক্ষম না হওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন।”
“প্রতি বছর ২০ লাখ তরুণ বাংলাদেশের জব মার্কেটে প্রবেশ করছে। কিন্তু নিয়োগ না পেয়ে বা নিয়োগ পেয়েও আরও অনেক দিন অপেক্ষায় থেকে তরুণরা স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। আমরা মনে করলাম, এখানে কাজ করার বিস্তর সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি আরও লক্ষ্য করলাম, ইনফরমাল জব সেক্টর থেকে ৮৬ শতাংশ নিয়োগ হচ্ছে। তখনই আমরা এই সেক্টরে কাজ করা শুরু করি।”
ইনফরমাল চাকরির বাজারে নির্দিষ্ট কাঠামো ও মেট্রিকস তৈরি করার পাশাপাশি সবার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা তৈরি করাই এখন ‘কর্মের লক্ষ্য’ বলে জানান রাসেল।
এই অ্যাপটি বানাতে কাজ করা ১২ জন এই প্রকল্পে গুগল কর্মী হিসেবেই কাজ করছেন। বর্তমানে তারা অ্যাপটি উন্নয়নে ও আরও যথাযথ বানাতে পুরোদমে কাজ করছে। দুই বছর আগে গুগল যখন এরিয়া ১২০ প্রকল্প শুরু করে সে সময় যাত্রা করা দলগুলোর মধ্যে রাসেলের এই দল অন্যতম।
কর্মের অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড গুগল প্লে থেকে ডাউনলোড করা যাবে। তবে ‘কর্ম’ এখন শুধু ঢাকাতেই সেবা প্রদান করছে।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড আউটরিচ বিভাগের পরিচালক মৌটুসী কবির উপস্থিত ছিলেন।