নতুন আইন বাস্তবায়ন না হলেও ভ্যাট থেকে বাড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
দেশে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হলেও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ভ্যাট থেকে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি রাজস্ব আহরণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হলেও মূলত সময়োপযোগী কৌশল গ্রহণ, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেট বাস্তবায়ন ফোরাম গঠন, নিয়মিত মনিটরিং, ভ্যাট আদায়ে মাঠপর্যায়ে অভিযান ও মাঠ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের কারণেই রাজস্ব আহরণে এ সাফল্য এসেছে। সেই সঙ্গে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে পুরনো মামলা নিষ্পত্তি, সর্বস্তরে সুশাসন বাস্তবায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ফলেও এনবিআর অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে সফলতা পেয়েছে । এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় ভ্যাট খাত থেকে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির আশঙ্কা করেছিল এনবিআর। কিন্তু চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আয়কর, মূসক ও শুল্কবাবদ সব মিলিয়ে ৪৬ হাজার ১০২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাময়িক হিসাবে আহরণ হয়েছে ৪৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ভ্যাট থেকে রাজস্ব এসেছে ১৭ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। এই সময়ে খাতটি থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। তবে প্রায় ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও এ খাতে এনবিআরের রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০৬ কোটি টাকা কম হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভ্যাট বাবদ এনবিআর আহরণ করেছিল ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব। ওই আহরণও ওই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯০০ কোটি টাকা কম ছিল। যদিও আগের অর্থবছরগুলোয় প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি থাকত এনবিআরের।
সূত্র জানায়, ভ্যাটে সফলতা পেলেও রাজস্ব আহরণের দ্বিতীয় বৃহৎ খাত আয়করে পিছিয়ে আছে এনবিআর। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০৮ কোটি টাকার রাজস্ব কম এসেছে এ খাতে। আয়, ভ্রমণ ও অন্যান্য করসহ প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে ১৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৩ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে পেরেছে এনবিআর। চলতি অর্থবছর এ খাতে এনবিআরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব এসেছিল খাতটি থেকে। অর্থবছরের শুরুতে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার হার কিছুটা কম থাকায় এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে শুল্ক। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১৫ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ খাত থেকে রাজস্ব এসেছে ১৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আহরণ করেছিল এনবিআর।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে অতি উচ্চমাত্রার লক্ষ্যমাত্রার কারণে পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায়
নিয়ে আসা হয়। অনলাইনভিত্তিক নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) আবারো ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ভ্যাট খাতে ৯১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া আয়কর খাতে ৮৬ হাজার ৮৬৭ কোটি ও শুল্ক বাবদ ৬৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমান জানান, রাজস্ব আহরণে অন্যতম শর্ত সময়োপযোগী যথাযথ কৌশল নির্ধারণ। এ কৌশল বাস্তবায়নে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত সবাই মিলে কাজ করছে। সঠিক সময়ে যোগ্য ব্যক্তিকে উপযুক্ত পদে পদায়ন করা হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকিবাজদের ধরতে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি ভালো করদাতার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে কাজ করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। চলমান মামলা নিষ্পত্তিতে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। ভালো অগ্রগতি হয়েছে বকেয়া আদায়েও। ওসব কারণেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়েছে এনবিআর।