ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
প্রবাসী আয়ের সঙ্গে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়েও ধস নেমেছে।
গত মাসে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ যা আয় করেছে, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম।
তবে আগের দুই মাসের কারণেচলতি অর্থবছরের তিন মাসে(জুলাই-সেপ্টেম্বর)রপ্তানি আয়ে৭ দশমিক ২৩ শতাংশপ্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে এই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় প্রায় ৩ শতাংশকম হয়েছে।
কোরবানির ঈদেআট-দশ দিনঅনেকগুলো পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় রপ্তানি কমেছে বলেজানিয়েছেন বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান।
চলতি অক্টোবর মাসেও রপ্তানি আয় কম আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়,চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৮৬৬ কোটি ২৭ লাখ (৮.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।
এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।এই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৮০৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৯ শতাংশ। অগাস্টে রপ্তানি বাড়ে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ১৪ শতাংশ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৮ শতাংশের মতো। সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমে এসেছে; লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি।
সর্বশেষ সেপ্টম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২০৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ কম।
সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয় ২২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বর আয় হয়েছিল ২৭৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮২ দশমিক ৪৬ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৭৪ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আর উভেন থেকে এসেছে ৩৩৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
নিটে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। উভেনে বেড়েছে ৪ শতাংশ।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নিট পোশাকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। উভেনে কমেছে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ।
অন্যান্য খাতের মধ্যে এই তিন মাসে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২ শতাংশ।
পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কেমিকেল পণ্যে আয় বেড়েছে ৩ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফ্ট পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।
অর্থবছরের শুরুটা ‘ভালোই হয়েছিল’ মন্তব্য করে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “আমরা আগেই ভেবেছিলাম সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় কমবে। কেননা, কোরবানির ঈদের কারণে এই মাসে পোশাক কারখানা ৮-৯ দিন বন্ধ ছিল। কোনো কোনো কারখানা ১০দিনও বন্ধ ছিল।
“আমরা ধারণা করছি, চলতি অক্টোবর মাসেও রপ্তানি আয় কমবে।গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর সমস্যার মধ্যেও আমরা আমাদের রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতাদের রপ্তানি বাড়াতে পোশাক রপ্তানিতে অনেক ইনসেনটিভ দিচ্ছে। সেখানে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হচ্ছে।”
বাংলাদেশের সরকারকেও এ বিষয়ে ‘মনোযোগ’ দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএর এই নেতা।
অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে কীনাএ প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হাসান বলেন, “বর্তমান বিশ্ববাজারে যেভাবে পোশাকের দাম কমছে, তাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।”
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির বহুমুখী প্রতিকূলতার কারণে প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
“তবে আমাদের প্রধান দুটি রপ্তানি বাজারের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলে রপ্তানি ইতোমধ্যেই অনেকখানি বেড়েছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হওয়ায় এ বাজারেও আমাদের রপ্তানির পরিমাণ অনেকখানি বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
প্রবাসীদের পাঠানোরেমিটেন্স প্রবাহেও ভাঁটা পড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।একক মাসের হিসেবে এই রেমিটেন্স সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
তবে সেপ্টেম্বরে কম হলেও জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছে।