-
- অপরাধ
- শিশু নির্যাতন শিকলে বেঁধে
- আপডেট সময় April, 22, 2018, 1:15 pm
- 376 বার পড়া হয়েছে
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
মাদরাসার পড়ায় মন বসে না। মাঝে মাঝেই ছুটে বাড়িতে চলে আসে মেয়েটি। তাই শিক্ষকরা পায়ে শেকল পড়িয়ে মেয়েটিকে বেঁধে রাখে। এ অবস্থাতেই মেয়েটির পড়াশোনা চলছিল। খাওয়া দাওয়া ঘুমানো চলছিল এভাবেই। শনিবার সকালে মেয়েটিকে আর মাদরাসায় পাওয়া যায়নি।
শনিবার ভোর রাতে মাদরাসা থেকে যখন মেয়েটি পালিয়ে যায় প্রকৃতিতে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভোর রাতের প্রতিকুলতা মারিয়ে পায়ে শিকল নিয়েই সে অজানা গন্তোব্যের উদ্দেশ্য রওনা হয়। অন্ধকার ছাপিয়ে যখন রোদ পড়েছে নয় বছরের শিশু জিম তখন পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারে। পায়ে শিকল পড়ানো। সেই শিকল তালা দিয়ে আটকানো। এমন অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পরে শিকল পড়া অবস্থায় ওই শিশুকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে শিশুর দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী মাদরাসা থেকে পরিচালক ইয়ারুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি।
ওই শিশুর মা মিনি বেগম (৩৫) বিকালে জানান, তাদের বাড়ি উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামে। স্বামী শহিদুল ইসলাম দিনমুজুর। তাদের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়েটি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের সংসার হলেও ছোট মেয়ে জিমকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে ছিলেন। কিছুদিন পর মেয়েটি সেখানে পড়েনি। মাসখানেক আগে ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাঁচশিশা গ্রামের নূরে মদিনা কওমি হাফেজিয়া মহিলা মাদরাসায় শিশু শ্রেণিতে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেও মাঝে মাঝেই বাড়িতে যায় সে। পরে ওই মাদরাসার পরিচালক ইয়ারুল ইসলামের পরামর্শে বাজার থেকে ১শ টাকায় শিকল আর তালা কিনে দেন। সেই শিকল পড়িয়ে তালা দিয়ে আটকে রাখা হতো মেয়েটিকে।
জানা গেছে, ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাঁচশিশা গ্রামে মাস ছয়েক আগে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদরাসার কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। সেখানে কয়েকটি শ্রেণি মোট ৩০জন ছাত্রী রয়েছে। তবে মাদরাসা পরিচালনার জন্য কোন পরিচালনা পরিষদ নেই।
ওই মাদরাসার পরিচালক অভিযুক্ত ইয়ারুল ইসলাম দাবি করেন, শিশুটি বার বার মাদরাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় ওই শিশুর পরিবারের পরামর্শেই তাদেরই দেয়া শিকলে শিশুটিকে সপ্তাহ খানেক ধরে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এটা ঠিক হয়নি। তিনি ভুল করেছেন।
পাঁচশিশা গ্রামের স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মাহাতাব হোসেন জানান, অব্যশই শিকলে বেঁধে শিশুটির ওপর নির্যাতন করা অমানবিক হয়েছে। আগামীতে ওই গ্রামে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেয়া হবে না। ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ডের ব্যপারে সজাগ থাকা হবে।
গুরুদাসপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) তারেকুর রহমান সরকার জানান, মাদরাসায় মেয়েটিকে বেঁধে রাখা হতো। চাঁচকৈড় বাজার এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদরাসা পরিচালককে আটক করা হয়েছে।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২২এপ্রিল২০১৮/ইকবাল
এ জাতীয় আরো খবর