December 29, 2024, 2:08 pm

সংবাদ শিরোনাম
ঢাকা- সিলেট মহা সড়কের আউশকান্দিতে দিনদুপুরে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই উলিপুরে যুবদল নেতার মৃত্যু নিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ যশোরের পল্লীতে আদালতের ভুয়া ডিক্রি ও জাল দলিল বুনিয়াদে ভূমিদস্যুদের জমি জবর দখলের চেষ্টা উখিয়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে কলেজ ছাত্র নিহত খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ১ম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে দুইটি পরিবহন ও লরির ত্রিমূখী সংঘর্ষ গৌরনদীতে শীতের পিঠা উৎসব ও সাহিত্য অনুষ্ঠান বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীতে  ত্রিমূখী সংঘর্ষে আহত-২০ কুড়িগ্রামে জেলা জাসাসের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত জমকালো আয়োজনে ইসলামপুরে ৯৭ ব্যাচ কল্যাণ সংস্থা’র মিলন মেলা

ভালো নেই মন বিএনপির

খালেদা জিয়ার মুক্তি কবে কেউ জানে না, ভোটে যাওয়া না যাওয়ার মীমাংসা হয়নি, আসন ভিত্তিক কার্যক্রম নেই, জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি হচ্ছে না, এর মাঝে সিটির ভোট

প্রাইভেট ডিটেকটিভ ডেস্কঃ

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের ‘নির্জন’ কারাগারে একমাত্র বন্দী হিসেবে প্রায় দেড় মাস অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি মুক্তি পাবেন কিনা তা নিয়েও নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। এ নিয়ে মন খারাপও তাদের। বেগম জিয়াকে ‘মাইনাস’ করে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণও নিশ্চিত নয়। খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও পিছিয়ে দলটি। দল গোছানোর কার্যক্রমও বন্ধ। আসনভিত্তিক নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু হয়নি। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির উদ্যোগও নেই। এরই মধ্যে দোরগোড়ায় পাঁচ সিটি নির্বাচন। সে বিষয়েও বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। খালেদা জিয়াবিহীন বিএনপি সামনে কোন পথে পা রাখবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকারের দ্বিমুখী নীতির কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, তিনি মুক্তি পাবেন। তিনি আমাদের মধ্যে মুক্ত হয়ে আসবেন। বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। কারণ, এ নির্বাচন কখনই দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’ জানা যায়, একাদশ নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে দুই ভাগ। দলের একটি প্রভাবশালী অংশ মনে করে, যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যেতে হবে। নইলে বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ভালো ফল পাবে বিএনপি। আর নির্বাচন বর্জন কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এ অংশটি মনে করে, নির্বাচনের আগেই সরকারকে একটি ‘ধাক্কা’ দিয়ে সমঝোতায় এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাও ভুল ছিল বলে মনে করে এ অংশটি। দলের আরেক অংশ বলছে, কোনোভাবেই খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। নইলে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া সমান। সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা না পেলে প্রয়োজনে নির্বাচন বর্জনের পক্ষেই তারা। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে সেখানে বিএনপির অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা আছে। তবে আমার মনে হয় বিএনপি বসে নেই। তারা আইনি লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছে। আবার সারা দেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতিও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, যে কোনো পরিস্থিতিতেই বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত।’ তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকুন বা মুক্ত হোন, বিএনপিকে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিএনপিকে বড় দলের অহংকার ভুলে সব গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠন করতে হবে। বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাদের বুঝতে হবে, বেগম জিয়াকে জেলে রেখেই সরকার আরেকটি নির্বাচন করতে চায়। আর সেজন্যই তারা নতুন নতুন কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করছে।’ সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার আগে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ সংসদীয় আসনে গণসংযোগ কর্মসূচিও চালাতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন তাও থমকে গেছে। নির্বাচনী আমেজে থাকা বিএনপিতে হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে। সবাই এখন ব্যস্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির কর্মসূচি বাস্তবায়নে। এতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও হতাশা দেখা গেছে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, খালেদা জিয়ার মুক্তি না মেলার পেছনে সরকারের দুরভিসন্ধি কাজ করছে। সুতরাং আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও থাকতে হবে। যেহেতু মুক্তিতে বিলম্ব হচ্ছে, তাই কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। এখন দোয়া আর মিলাদ মাহফিল কর্মসূচিতে থাকা ঠিক হবে না। সবাই যাতে রাজপথে থাকে এমন শক্ত কর্মসূচিও দিতে হবে। সমানতালে যোগাযোগ রাখতে হবে কূটনৈতিক মহলেও। এদিকে, নয়াপল্টনে কিংবা গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, তাদের মন ভালো নেই। কারণ কী— জানতে চাইলে বলেন, চেয়ারপারসন জেলে। কবে মুক্তি পাবেন তাও স্পষ্ট নয়। একাকী একটি নির্জন কারাগারে রয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এ অবস্থায় একজন কর্মী হিসেবে কীভাবে মন ভালো থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে একই উত্তর মেলে। গতকাল কথা হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ও বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসের সঙ্গে। তারা জানান, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আনা উচিত। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দীর্ঘায়িত হতে পারে। সরকার পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন থেকে বেগম জিয়াকে মাইনাস করতেই এ তৎপরতা চালাচ্ছে। সুতরাং রাজপথের রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। চেয়ারপারসনকে সঙ্গে নিয়েই আমরা নির্বাচনে যাব ইনশা আল্লাহ।’ জানা যায়, সার্বিক দিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি নিয়ে ফের তৃণমূলে যাচ্ছে বিএনপি। এ দাবিতে ‘শক্ত’ আন্দোলনের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে আভাস দিতে চান কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে তারা আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কেও ধারণা পেতে চান। এ নিয়ে দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা শাখা সফরের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ৩৭টি টিম গঠন করা হয়েছে। ১০ এপ্রিলের মধ্যে টিমগুলোর সফর শেষ করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা রয়েছে। তবে এর আগেও জেলা সফরের উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশই নির্ধারিত এলাকা সফরে যাননি। এবার সফর কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়েও নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। এদিকে, ২৯ মার্চ ঢাকা, ৩১ মার্চ রাজশাহী ও ৭ এপ্রিল বরিশালে জনসভার দিনক্ষণ নির্ধারিত রয়েছে। বাকি বিভাগীয় শহরগুলোতেও পর্যায়ক্রমে জনসভা হবে। একইভাবে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়েও তৃণমূল নেতাদের মতামত জানতে কেন্দ্র থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোন আসনে কী সমস্যা তা লিখিতভাবে কেন্দ্রে পাঠাতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে কেরানীগঞ্জের দুই আসনকে এক আসনে যুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে বিএনপির কারাবন্দী স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের সমর্থকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে। এ নিয়ে দুই পক্ষই লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বলে জানা গেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মন খারাপ থাকতেই পারে। কিন্তু এটাকে আমরা শক্তিতে রূপান্তর করছি। নিয়মিত কর্মসূচি চলছে। রাজপথের গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আমরা একাদশ নির্বাচনে অংশ নেব। সেই নির্বাচনে আশা করি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করবে।’

 

 

 

 

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৪মার্চ২০১৮/ইকবাল

 

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর