অনলাইন ডেস্ক:
এবার লক্ষ্য বাংলা— বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সেই হুঙ্কারকে ফুৎকারে উড়িয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “আগে দিল্লি সামলাক, তারপর হবে পশ্চিমবঙ্গ”। ২০১৯-এ অত সহজ হবে না। ২০১৯-এ ওরা হারবে, বিপর্যয় হবে। বাংলা-ওড়িশা অত সহজ নয়। পশ্চিমবঙ্গ ১০ কোটি মানুষের বাস। ত্রিপুরায় তো মাত্র ২৫ লক্ষ ভোটার। আমাদের হাওড়া জেলাতেও এর থেকে বেশি লোক। আজ আমি বলি, আসন সমঝোতার জন্য রাহুল গান্ধীকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ১৪টি আসনে আমরা প্রার্থী দিই, ১৬টি পাহাড়ের উপজাতি পার্টিগুলিকে দেওয়া হোক। বাকি ৩০টিতে ওরা (কংগ্রেস) প্রার্থী দিতে পারত। তাহলে এই ফলাফল হত না। কিন্তু কেন সেই প্রস্তাবে কংগ্রেস রাজি হল না, বুঝলাম না! একটা মঞ্চ গড়ে লড়লে বাড়তি ১০-১৫ শতাংশ ভোট কোনও ব্যাপারই ছিল না। ত্রিপুরার ফলাফল দেখে এত লাফালাফি করার কিছু নেই। আরশোলার কখনও ময়ূরের পুচ্ছ লাগাতে ইচ্ছে হয়। ওরা কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাল। হাজার হাজার ইভিএম মেশিন খারাপ হল। আমি বুঝতে পারলাম না, সিপিএম কেন প্রতিবাদ করল না! এটা জানা দরকার। ওরা আত্মসমর্পণ করল।
বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে মমতা বলেন, কেন্দ্রের সরকার কোনও কাজ করছে না। লক্ষ্য শুধু বর্বরতা দিয়ে সব রাজ্যে পার্টিকে নিয়ে যাওয়া। দেশে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হচ্ছে। নোট বাতিলের নামে লুট হয়েছে। ২০১৯-এ মানুষ তার জবাব দেবে। ত্রিপুরায় হোসপাইপের মতো টাকা ঢেলেছে বিজেপি। এই ভোটে কংগ্রেসের ব্যর্থতা আছে। আর সিপিএমের আত্মসমর্পণ আছে। এটা বিজেপির জয় নয়, ত্রিপুরার ফলাফল সিপিএমের পরাজয়। কংগ্রেস যদি ঠিকমতো ফাইট করত, তাহলে এই ফলাফল হত না। কংগ্রেস কেন বিজেপিকে অক্সিজেন দিল, তা আমি বুঝতে পারছি না। কংগ্রেসের এই অবহেলার জন্য ওদের ভোট কমে গেল।
রাজ্যের বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে তৃণমূল নেত্রী বলেন, এত লাফালাফি করার কিছু নেই। ত্রিপুরার সঙ্গে অন্য জায়গাকে মেলাবেন না। ওরা মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে হেরেছে। গুজরাতে যত টাকা ঢেলেছে, সেভাবে কী জিতেছে? কর্নাটকেও হারবে। বাংলা-ওড়িশা তো দূর অস্ত। মেঘালয়ে ওরা (বিজেপি) পারেনি। নাগাল্যান্ডের জয়ে ওদের ক্রেডিট নেই। যেখানে রেজিসস্ট্যান্স আছে, সেখানে ওরা পারছে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পুরো রাজনৈতিক করা হয়েছে। আগে কখনও হত না। সিপিএমকে এটাই বোধহয় বলা হয়েছিল, হয় চুপ করে থাকবে, না হয় এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হবে। এবার আমি ত্রিপুরায় নতুন করে সংগঠন করব, এটা আমার চ্যালেঞ্জ।
গত বুধবার বিধানসভায় সিপিএমের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ত্রিপুরায় আপনারা জিতলে খুশি হতাম। চেয়েছিলাম আপনারা জিতুন। আপনাদের অহঙ্কারের জন্য এমন হয়েছে। এখন যাই যাই অবস্থা। মমতার আশঙ্কাই সত্যি হল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ভোটের ফলাফলে এ রাজ্যে সিপিএমের আরও অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে, বিজেপিতে নতুন করে উৎসাহ বাড়বে। কিছুটা হলেও চাপ বাড়বে তৃণমূলেরও।
অবশ্য তা মানতে রাজি নন তৃণমূলের মহাসচিব তথা পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমরা আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। এটা শুধুমাত্র সিপিএমের পরাজয়। সিপিএমের নেগেটিভ ভোট। বিজেপির পজিটিভ ভোট নয়। সিপিএমের বিরুদ্ধে ত্রিপুরাবাসীর ক্ষোভ ভোটের বাক্সে পড়েছে। বিজেপি সোর্স ও ফোর্সকে কাজে লাগিয়েছে। তার বিরুদ্ধে সিপিএম চুপই ছিল। আর এখানে যাঁরা খোল-করতাল নিয়ে লাফাচ্ছেন, তাঁরা জেনে রাখুন, এতে উৎসাহিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। পার্থবাবু বলেন, এক ‘গদ্দার’ তলে তলে গোপনে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে ত্রিপুরায় আমাদের দলটাকে প্রায় তুলে দিয়েছিল। এখানে কেউ কেউ বলছেন, শ্মশানে দেখা হবে। তাঁদের বলি, খোল-করতাল নিয়ে লাফাচ্ছেন যাঁরা, শ্মশানে যেতে হবে তাঁদেরই। আমাদের নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নয়নই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বাংলার মানুষ।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৪ মার্চ ২০১৮/রুহুল আমিন