আফগানিস্তানে তালেবানদের হাতে জিম্মি উত্তর আমেরিকার পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারকে মুক্ত করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
২০১২ সালে আফগানিস্তানে ভ্রমণের সময় কানাডার নাগরিক জোশুয়া বয়েল এবং তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কেইটলান কোলম্যানকে জিম্মি করে তালেবানসংশ্লিষ্ট হাক্কানি নেটওয়ার্ক।
জিম্মি থাকা অবস্থাতেই তাদের তিন সন্তানের জন্ম হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আফগান সীমান্তের কাছ থেকে ওই পরিবারকে উদ্ধার করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই ঘটনা পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য ‘ইতিবাচক’।
“জিম্মি থাকা অবস্থায় কোলম্যান তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। আজ তারা মুক্ত। অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে পাকিস্তানি সরকার যে আমেরিকার ইচ্ছাকে সম্মান জানাচ্ছে এই সহযোগিতা তার চিহ্ন,” হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এমনটাই বলেন ট্রাম্প।
জিম্মি করার পর জোশুয়া ও কোলম্যান দম্পতির একটি ভিডিও টেপ প্রকাশ করে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। সেখানে এই দুই উত্তর আমেরিকান নাগরিকের বদলে আফগানিস্তানে বন্দি তাদের তিন সদস্যের মুক্তি দাবি করা হয়।
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ ভিডিওতে এই দম্পতির সঙ্গে তাদের দুই ছেলেকেও দেখানো হয়।
বিবিসি বলছে, অপহরণের সময় গর্ভবতী কোলম্যান শেষ ভিডিওতে ‘ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের’ হাত থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মার্কিন বাহিনী আগে থেকেই ওই পরিবারের গতিবিধি নজরে রাখছিল। তারাই জানায় জোশুয়া ও কোলম্যান দম্পতিকে ১১ অক্টোবর পাকিস্তানের কুররাম ট্রাইবাল জেলায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে সেখান থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী তাদের উদ্ধার করে।
“সময়মতো গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির ফলেই এই সফলতা এসেছে। সহযোগিতার ভিত্তিতে একই শত্রুর বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ে পাকিস্তান তার প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে,” এক বিবৃতিতে জানায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
জোশুয়া-কোলম্যান পরিবারকে উদ্ধারের পর এক টরেন্টো স্টার নিউজপেপার লিন্ডা বয়েলের একটি ভিডিও প্রকাশ করে।
ভিডিওতে লিন্ডা জানান, তিনি এবং তার স্বামী পাঁচ বছর পর তাদের সন্তান জোশুয়ার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। পাকিস্তানের যে সেনা সদস্যরা জীবন বাজি রেখে জিম্মি উদ্ধারে অংশ নিয়েছে তাদের ধন্যবাদও জানান লিন্ডা।
মার্কিন কর্মকর্তারা পাঁচ সদস্যের পরিবারটিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে চাইলেও জোশুয়া তাতে রাজি হননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
অপরহরণের আগে জোশুয়া এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দি ওমর খাদরের বোন ওই নারী উগ্র ইসলামি ধ্যানধারণা পোষণ করতেন বলে ধারণা করা হয়।
এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে ভয় পেয়ে জোশুয়া মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি বলে ধারণা সিএনএনের।
যদিও কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, জোশুয়া তদন্তের লক্ষ্যবস্তু নয়।
“আমরা পরিবারটির নিরাপত্তার কথাই বিবেচনা করছি।”