দেশজুড়ে সেলফোন টাওয়ার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়লেও গ্রাহকরা নেটওয়ার্কের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অথচ গত দুই দশকে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের পাশাপাশি টাওয়ারের সংখ্যাও বাড়িয়েছে সেলফোন অপারেটরগুলো। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিতে সেলফোন অপারেটররা সারা দেশে ৭০ হাজার টাওয়ার স্থাপন করেছে। ওসব টাওয়ার স্থাপন ও ব্যবস্থাপনায় একদিকে যেমন বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে, তেমনি পরিবেশের ওপরও রয়েছে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে প্রতিটি টাওয়ারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ– দুই ধরনের অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়। টাওয়ার স্থাপনে ব্যবহূত ভূমি, ভবন, ছাউনি, অ্যান্টেনা, টাওয়ার, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ও ব্যাটারিকে পরোক্ষ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে সক্রিয় অবকাঠামোর অংশ হিসেবে প্রতিটি টাওয়ারে থাকে বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) বা বেতার তরঙ্গসংশ্লিষ্ট যন্ত্র। থ্রিজি নেটওয়ার্কের জন্য সেক্ষেত্রে নোড–বি ও এলটিই নেটওয়ার্কের জন্য ই–নোড বি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাইক্রোওয়েভ রেডিও লিংক, নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল ও সুইচিংয়ের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রও সক্রিয় অবকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। ভিন্নতা অনুযায়ী প্রতিটি টাওয়ারে একাধিক জিএসএম ও মাইক্রোওয়েভ অ্যান্টেনা ব্যবহার করা যায়। ফলে একই টাওয়ারের মাধ্যমে একাধিক অপারেটরের বিটিএস ব্যবহার করা সম্ভব।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৪ সালের জুন শেষে দেশে ৬ সেলফোন অপারেটরের বিটিএসের সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৯৪০। পরের বছরের জুনে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৫৭০। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেলফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্কে মোট বিটিএস ছিল মোট ৫৮ হাজার ৩৩৭টি। তার মধ্যে গ্রামীণফোনের ৯ হাজার ৭৯৭টি বিটিএস ও ৫ হাজার ৬৩৬টি নোড–বি, বাংলালিংকের ৯ হাজার ২৭৫টি বিটিএস ও ৩ হাজার ৫৫টি নোড–বি, রবির ১৩ হাজার ৩২১টি বিটিএস ও ৩ হাজার ২৪৭টি নোড–বি, এয়ারটেলের ৫ হাজার ১৯৬টি বিটিএস ও ২ হাজার ৪৬৬টি নোড–বি, টেলিটকের ৩ হাজার ৬৮৩টি বিটিএস ও ১ হাজার ৩২৩টি নোড–বি এবং সিটিসেলের ৮৭৪টি বিটিএস ছিল। ২০১৬ সালের জুন শেষে সেলফোন অপারেটরদের বিটিএসের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ওই হিসাবে দুই বছরে বিটিএস বেড়েছে ২৪ হাজার।
সূত্র আরো জানায়, সেলফোন অপারেটরগুলোর অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতার কারণে স্থাপিত টাওয়ারের এক–তৃতীয়াংশই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। যদিও দেশে অপারেটরদের মধ্যে অবকাঠামো ভাগাভাগির সুযোগ তৈরিতে ২০০৮ সালে ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন করা হয়, যা ২০১১ সালে সংশোধন করা হয়। ওই নীতিমালার আওতায় অপারেটররা একে অন্যের টাওয়ার ভাগাভাগির মাধ্যমে ব্যবহার করছে। ভূমি ও জ্বালানির ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই দিকনির্দেশনামূলক ওই নীতিমালা করা হয়। তবে তাতে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় তা অনুসরণ করেনি অপারেটররা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ টাওয়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়ার বিধান রেখে টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে বিটিআরসি। ইতিমধ্যে সেটি অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে অপারেটররাও প্রায় প্রত্যেকে আলাদা টাওয়ার কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠনের অনুমোদন আগেই পেয়েছে রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল বাংলাদেশ (সম্প্রতি রবি আজিয়াটার সঙ্গে একীভূত)। আর কোম্পানি গঠনের আবেদন করেছে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক।
অন্যদিকে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বিনিয়োগ ও টাওয়ার বৃদ্ধির পরও নেটওয়ার্ক নিয়ে গ্রাহক ভোগাস্তির বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল জানান, বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ গ্রামীণফোনের থ্রিজি নেটওয়ার্কের আওতায় আছে। ডাটা ব্যবহার বৃদ্ধির হার সন্তোষজনক না হলেও যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার মাধ্যমে তরঙ্গের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার অনুমতি দেয়া হলে সেবার মান আরো ভালো হতে পারতো। বর্তমানে গ্রামীণফোনের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বিটিএস রয়েছে। তারমধ্যে ১১ হাজার ৮০০ বিটিএসের মাধ্যমে থ্রিজি প্রযুক্তির সেবা দেয়া হচ্ছে।