September 19, 2024, 9:51 am

পাল্টা পাল্টি কমিটি ও দখলদারদের দৌরাত্বে তামাবিল স্হল বন্দর অচল

এম রুহেল জৈন্তাপুর,জৈন্তাপুর উপজেলা প্রতিনিধি
গত ৫ জলাইয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হতে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে।এই স্হল বন্দর টিতে গেল ১৭ বছর লোটপাট আর হয়রানির কারখানা ছিলো ৪৭০ টাকা হারে প্রতি টন পাথরের বিপরিতে গুনতে হতো ব্যবসায়ীকে।সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেয় কথিপয় চাঁদাবাজ গ্রুপ।এর পর নতুন সিন্ডিকেট মাথা চাড়া দিতে সম্পতিক ঘঠিত হয় ৫ টি কমিটি।যার ফলে ব্যবসায়ীরা ভয়ে কোন মালামাল আনতে নারাজ ।ফলে বেকার হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। জৈন্তাপুর,গোয়াইঘাট উপজেলায় বন্ধ হয়ে গেয়ে কয়েকশত ক্রাশার মিল। সেই সাথে ক্রাশারমিল কেন্দ্রিক সংশ্লিষ্ট পেশার শ্রমিক,পরিবহন শ্রমিক, হেমার শ্রমিকরা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার চার নং বাংলাবাজার,আসামপাড়া,আদর্শগ্রাম,গুচ্ছগ্রাম,আলুবাগান এলাকায় স্হাপিত কয়েকশ মিল কারখানা তাদের কাঁচামাল ভারতীয় এলসি পাথর না থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম একেবারে বন্ধ রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে শুধুমাত্র শুক্রবার ব্যতীত সপ্তাহের অন্যদিগুলোতে যে কর্মচাঞ্চল্যতা দেখা যেতো বর্তমানে সেখানে সুনসান নিরব পরিবেশ বিরাজ করছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার যে সমস্ত ক্রাশার মিল রয়েছে তার মধ্যে ৯৯% মিলে ভারত হতে আমদানি করা পাথরের উপর নির্ভরশীল। ২০১৮ সাল থেকে উচ্চ আদালতে রায়ে জাফলং, শ্রীপুর পাথর কুয়ারীগুলো বন্ধ হওয়ার পর থেকে এই উপজেলার মিল কারখানা গুলো ভারতীয় পাথরের উপর শতভাগ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ই আগস্টের পর সরকার পতনের ফলে দীর্ঘদিন যাবত তামাবিল কয়লা চুনাপাথর আমদানি রপ্তানি কারক গ্রুপের কমিটিকে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নানান অভিযোগ এনে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর পর থেকে নতুন কমিটি এখন অবধি চুড়ান্ত না হওয়া এবং একে একে একাধিক কমিটির আত্মপ্রকাশের ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে বিশৃঙ্খল অবস্থা। এই উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে তামাবিল স্থলবন্দরে ব্যবসায়ী সংগঠনে নেতৃত্ব চুড়ান্ত না হওয়ার ফলে বিগত তিন সপ্তাহ যাবৎ সব ধরণের পাথর আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ দিকে পাথরের সংকটের ফলে ক্রাশার মেশিন বন্ধ থাকায় সব চেয়ে বেশী বিপদে পড়েছে মিলের দৈনন্দিন মজুরীতে কর্মরত শ্রমিকরা। প্রতিদিন সকাল ৭:০০ ঘটিকায় হইতে গোয়াইনঘাট উপজেলার আলিরগাও,দরবস্ত, চতুল, সারিঘাট সহ জৈন্তাপুর ও পাশ্ববর্তী উপজেলা হতে কয়েকহাজার শ্রমিক ক্রাশারমিলে কাজ করতে আসতো। এমনই একজন শ্রমিক গ্রুপের সরদার গোয়াইনঘাটের সাতাইং গ্রামের আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি ১২ জনের একটা গ্রুপ নিয়ে প্রতিদিন চার নং বাংলাবাজারের বিভিন্ন মেইলে গাড়ী চুক্তিতে পাথর ভাঙতে আসতাম। প্রতিদিন জনপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা রুজি করা সম্ভব হতো। মিল বন্ধ হওয়ার পর তিনদিন গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে আমন ক্ষেতে কাজ করেছি। কিন্তু এখন তাও নাই। তিনি বলেন মিল কারখানা চালু না হলে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।

চার নং বাংলাবাজার ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক জানান, প্রতিদিন কয়েকশ গাড়ী ভাঙা পাথর নিতে এলাকায় আসে। বর্তমানে পাথরের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ী কোন ট্রিপ খুজে পাচ্ছে না। যার কারণে অনেক পরিবহন বেকার সময় অতিবাহিত করছে।

চার নং বাংলাবাজার ছিন্নমূল মিনি স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ক্রাশার মিল বন্ধ থাকায় পাথর শ্রমিকদের করুণ দশা দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে কিন্তু অনেক মিল মালিকরা নিরবে কান্না করছে। কারণ এই সমস্ত মিলকারখানার বহু মালিকরা রয়েছেন যারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন তুলে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। তাছাড়া প্রতিটি মিলে তিন থেকে চারজন স্টাফ মাসিক বেতনে চাকরী করে। মাস শেষে তাদের বেতন ভাতা দেয়াও দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় পাথর আমদানি ছাড়াও এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী আছে যারা তামাবিল থেকে পাথর কিনে বিভিন্ন মিলে সাপ্লাই দিয়ে থাকে। তাদের স্হানীয় ভাষায় সাপ্লায়ার বলা হয়। তাদের একটি বড় টাকার পরিমান বিভিন্ন মিল মালিকদের নিকট বকেয়া থাকায় মিল বন্ধের ফলের আর্থিক লেনদেনও করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমস্যার কারণে যেহেতু আমদানি বন্ধ করা হয় নাই বরং এটা আমাদের ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীন সমস্যা তাই তামাবিল সহ জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটের পাথর সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ী,শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে তামাবিলের সকল ব্যবসায়ীদের ঐক্যের ভিত্তিতে পাথর আমদানি চালু করার আহবান জানান তিনি।

এ বিষয়ে তামাবিল কয়লা চুনাপাথর আমদানি রপ্তানি কারক গ্রুপের সদস্য ও ২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজি আলমগীর হোসেন বলেন, তামাবিলের অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের দাবী সরাসরি ভোট প্রদানের মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে দায়িত্ব দেয়া হোক। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন সম্প্রতি সময়ে পূর্বের কমিটিকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। বর্তমান সময়ে বেশ কয়েকটি ব্যনারে ব্যবসায়ী কমিটি আত্মপ্রকাশ করলে তা তামাবিলের ব্যবসার জন্য কখনও সুফল বয়ে আনবে না। তাই সকল ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে একটি গ্রহনযোগ্য ব্যবসায়ী সমিতির গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করতে সমিতির উপদেষ্টা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আশাবাদী স্বল্প সময়ের মধ্যে তামাবিলের এই সংকট নিরোসন হয়ে যাবে।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর