সূত্র জানায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরাসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে গম ও চাল সংগ্রহ করে থাকে। আন্তর্জাতিক উৎস থেকে গম ও চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজ হয় এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে খাদ্যশস্য ক্রয় করা সম্ভব হয় বিধায় খাদ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র এবং জিটুজি ভিত্তিতে গম ও চাল সংগ্রহ করছে।
কৃষকদের উৎসাহমূল্য দেওয়ার লক্ষ্যে চলতি বোরো মৌসুমে এরই মধ্যে ১১ লাখ ২১ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৫৫ হাজার ২০৮ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৪৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে এবং চলতি আমন মৌসুমে ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৫ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল কেনা এবং জিটুজি ভিত্তিতে ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম খাত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রায় ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৭ লাখ ৪ হাজার ৩২৯ মেট্রিক টন গমসহ মোট ৩০ লাখ ৯১ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য প্রয়োজন হবে। বর্তমানে সরকারি সংরক্ষণাগারে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৪১২ মেট্রিক টন চাল ১ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন ধান এবং ৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৮ মেট্রিক টন গমসহ মোট ১৬ লাখ ৫২ হাজার ১১১ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত আছে।
সূত্র আরো জানায়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, হাওরে আগাম বন্য ও দেশব্যাপী অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় বাজারে ধান ও চালের মূল্যের উর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুত সুসংহত করার স্বার্থে এবং চালের বাজারমূল্য ভোক্তা সাধারণের জন্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এ অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে চাল আমদানি করা প্রয়োজন।
গত ২ ডিসেম্বর ভারতের এনসিসিএফ চাল সরবরাহের আগ্রহ ব্যক্ত করে চিঠি পাঠায়। ওই চিঠি পর্যালোচনা করে দেশের সরকারি মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চাল আমদানির জন্য দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ভারতের প্রতিনিধিদলকে ভার্চুয়াল সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জিটুজি পদ্ধতিতে ক্রয় বিষয়ক কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। সভায় জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আমদানির চুক্তিনামার শর্ত এবং মূল্য নিয়ে আলোচনা হয়। শেষে ভারত থেকে এক লাখ মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এ প্রেক্ষিতে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়।
আরো জানা গেছে, এই চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদ্র ও রেলপথে প্রতি মেট্রিক টন চালের মূল্য ৪৩৩.৬০ মার্কিন ডলার যা বাজারদর যাচাই কমিটির প্রস্তাবিত প্রাক্কলিত মোট গড় মূল্য ৪২২.০৩ মার্কিন ডলারের চেয়ে ১১.৫৭ মার্কন ডলার বেশি। তবে বর্তমানে জরুরি প্রয়োজন, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে পুরো চাল সংগ্রহ সম্ভব না হওয়ায়, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদনে ৪৫টি খাদ্য ঘাটতির দেশগুলো তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকায়, বৈশ্বয়িক খাদ্য শস্যের মূল্য বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সংকট, উৎপাদন ও বেসরকারি আমদানি কমে যাওয়ায় ভারত থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৪৩৩.৬০ মার্কিন ডলার দরে সমুদ্র পথে ৭০ হাজার মেট্রিক টন এবং রেলপথে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হবে।
এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।