ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে বাড়ছে সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ। নামে-বেনামে ভুয়া আইডি খুলে ছড়ানো হচ্ছে ব্ল্যাকমেইলের জাল। হ্যাকাররা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের আইডি হ্যাক করে নগদ অর্থদাবি করা হচ্ছে। দাবি না মানলে হ্যাক করা অ্যাকাউন্ট থেকে আপত্তিকর ছবি এবং পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি অনলাইনে হ্যাক করার পদ্ধতিও শেখানো হচ্ছে। দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালে ২০১৪ সালে যেখানে মামলা ছিল ৩২টি, সেখানে ২০১৫ সালে দাঁড়ায় ১৫২টিতে। ২০১৬ সালে তা ঠেকে ২৩৩টিতে। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ট্রাইব্যুনালে এসেছে ১৪১টি মামলা। ট্রাইব্যুনালে এখন ৩৮২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমের এসব অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া আইডি বানিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাও নতুন না। শুধু ফেসবুকই নয়, টুইটার, ইমো, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, গুগল প্লাস, ইনস্ট্রাগাম, স্কাইপিসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। এমনকি যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণ, খুন, অপহরণ এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু কোনোভাবেই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। ওই মাধ্যমকেই কাজে লাগাচ্ছে প্রতারকরা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের সাইবার ক্রাইম বিভাগে যোগাযোগ মাধ্যমে বব্ল্যাকমেইলের অনেক অভিযোগ এসেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। তবুও থামছে না অপরাধ। একের পর এক ঘটেই চলেছে এসব ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা সামাজিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সঠিক নীতিনির্ধারণ এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারে নীতিমালার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাইবার অপরাধ তদন্তবিষয়ক সেল রয়েছে। সাইবার অপরাধ বিষয়ক কোনো মামলায় বিশেষজ্ঞ মতামত (অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি-না, তা ফরেনসিক পরীক্ষা করে মতামত) দেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সিআইডি। বিগত ২০১৩ সাল থেকে সিআইডি মতামত দিয়ে আসছে। ওই বছর সংস্থাটি ২৫টি মামলায় বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছে। এরপর ২০১৪ সালে ৬৫টি, ২০১৫ সালে ২১৭টি, ২০১৬ সালে ৪১৬টি এবং চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৭৫টি মামলায় মতামত দিয়েছে। গতবছর থেকে কাজ শুরু করা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ৪২টি মামলার তদন্ত করছে। আর ২০১৫ সালে দুটি মামলা দিয়ে তদন্ত শুরু করা পিবিআই তদন্ত করছে ২৫টি মামলা। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) পদক্ষেপ নিলেও অপরাধ কমছে না।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বাংলাদেশ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রাইম ঠেকাতে পুলিশে নতুনভাবে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেজন্য নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে আলাদা ইউনিট করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।