১৯৭০ সালের পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি এক মিলিয়ন ফ্লাইটে ১২ গুন দুর্ঘটনা হ্রাস পায়। গাণিতিক হিসেবে প্রতি মিলিয়নে ৬.৩৫ থেকে ০.৫১ -এ নেমে আসে। আবার হতাহতের সংখ্যা বিচারে ৮১ গুন হ্রাস পায়। যা ১৯৭০ সালের প্রতি ট্রিলিয়নে ৩২১৮ থেকে নেমে ৪০ নেমে আসে। দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বিচারে বর্তমানে বিমান পরিবহন যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ।
গত ৭০ বছরে পৃথিবীর একমাত্র এয়ারলাইন্স কানতাস এর এক্সিডেন্টাল রেকর্ড শূন্যের কোঠায়। যা নিরাপদ এয়ারলাইন্স হিসেবে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এয়ারলাইন্সরেটিংস ডট কম এর জরিপে ৩৮৫টি এয়ারলাইন্স এর মধ্যে কানতাস এয়ারলাইন্স নিরাপদ এয়ারলাইন্স হিসেবে উচ্চ শিখরে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের আকাশপথ ও আকাশ পরিবহনও অনেক বেশি নিরাপদ। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরের ইতিহাসে ছোট বড় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যথাক্রমে ১৯৮৪ সালে ঢাকায় ও ২০১৮ সালে কাঠমান্ডুতে দু’টি বড় আকারের দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দু’টি দুর্ঘটনায় ১০০ জন হতাহত হন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাইলটের সচেতনতায় ইউএস-বাংলার এয়ারক্রাফটকে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে শতাধিক যাত্রীদের জীবন বাঁচিয়ে বীরত্বও দেখিয়েছেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান কো-পাইলট কর্তৃক অপহৃত হয়। বিমানটি আদ্দিস আবাবা থেকে ইতালির মালপেনসাতে যাচ্ছিল। বিমানটিতে ১৯৩জন যাত্রী ও ৯ জন ক্রু ছিলেন। বিমানটিকে কো-পাইলট জেনাভাতে জোরপূর্বক অবতরণ করতে বাধ্য করে। অনেক নাটকীয়তার পর সকল যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদে মুক্ত হন। আবার বছর তিনেক আগে বাংলাদেশ বিমানের একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ ধরনের কিছু ঘটনা এভিয়েশনে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা হয়।
১১ আগস্ট ২০১৪, কলকাতার মধ্য আকাশে জামশেদপুর জেলায় ভূমি থেকে ৩২০০০ ফুট উচ্চতায় পাইলটের সচেতনতা ও দক্ষতার কারণে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড ও সৌদি এয়ারলাইন্স এর বিমান মুখোমুখি সংঘর্ষ পরিহার করা সম্ভব হয়। যাতে বেঁচে যান কয়েকশ যাত্রী।
অন্য একটি হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সারা বিশ্বে ১৯৮২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৮৩৩৭৪ টি প্লেন ছোট বড় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর মধ্যে ফ্যাটাল ইনজুরি হন ৪৭৭১৯ জন, সিরিয়াস ইনজুরি ১৭৮৬২ জন এবং মাইনর ইনজুরি ২৮৬০৭ জন। এক্সিডেন্টের প্রায় অর্ধেক হয় উড্ডয়ন ও অবতরণকালীন সময়ে।
এক্সিডেন্টের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হিউম্যান এরর কারণে প্রায় ৭০ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বাকি ৩০ ভাগের ২০ ভাগ মেকানিক্যাল ফেইলর আর ১০ ভাগের মতো ওয়েদারের কারণে ঘটে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা আর ধারাবাহিকভাবে বিমান পরিবহনে দুর্ঘটনা হ্রাস পাওয়ায় হতাহতের সংখ্যা কমায় বিমান পরিবহন বর্তমানে যে কোনো সময়ের তুলনায় নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বাস্তবতার নিরিখে সারাবিশ্বের এভিয়েশন যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।