October 7, 2024, 5:35 am

সংবাদ শিরোনাম
স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি রক্ষা করতে হলে প্রতিটি ঘরে সেনাবাহিনী তৈরি করতে হবে(পর্ব-৫) আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ভোলা বোরহানউদ্দিনে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেডের দাবিতে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে বগুড়ায় বিএনপির মতবিনিময় সভা! লক্ষ্মীপুরে কুমিরের আতঙ্কে এলাকাবাসী সাংবাদিক পুত্র আবির হোসেন অনন্ত’র জন্মদিন আজ বিল্লাল হুসাইন

একুশে পদকের জন্য মনোনিত হলেন কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান আব্রাহাম লিংকন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
একুশে পদকে সমাজসেবায় অনন্য অবদান রাখার জন্য কুড়িগ্রামের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকনকে মনোনিত করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠান শাখা কর্তক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২৪জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সেই তালিকায় রয়েছে কুড়িগ্রামের কৃতি সন্ত্রান এডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন। সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়।
বরেণ্য এ ব্যক্তিকে একুশে পদকে মনোনিত করায় খুশি কুড়িগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। বৃহস্পতিবার এ খবর ছড়িয়ে পরলে তার বাসভবন লিংকন ইনসে ভীর জমায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
এডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন কুড়িগ্রাম পৌরসভার নাজিরা ব্যাপারী পাড়ায় ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মৃত: মহিউদ্দিন ব্যাপারী। তিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। মাতা মৃত: আমেনা বেগম। ৭ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তার স্ত্রী অধ্যাপক শামসুন নাহার বেগম সুইটি কলেজে শিক্ষকতা করেন এবং একমাত্র সন্তান সিদ্ধার্ধ অস্টেলিয়ায় পড়াশুনা করছে। তিনি একাধারে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, আইনজীবী, লেখক, কলামিস্ট ও শিক্ষক। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি, কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, পাবলিক প্রসিকিউটর এবং সমাজকর্মী। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক। তিনি বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রণিত মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে লেখা ১৫টি গ্রন্থের লেখক।
তাঁর উল্লেখযোগ্য পুস্তক হচ্ছে- ১৯৭১ ঃ ইপিআরের সেইসব যোদ্ধাগণ, উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাসঃ রংপুর, মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস কুড়িগ্রাম জেলা, আইন আদালতের বিকাশ, কাব্যগ্রন্থ-ভাওয়াইয়ার স্বরে বঙ্গবন্ধু, জলেশ্বরীর ভূমিপুত্র, শেষ যুদ্ধের ডাক দিয়ে যাই, সম্পাদনাগ্রন্থ- একাত্তরের অগ্রদূত, শামসুন নাহার চৌধুরীঃ জীবন মৃত্যুর মাঝখানে, যৌথগ্রন্থ- রঙ্গপুরের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষসহ অনেক পুস্তক।
শৈশব থেকে পারিবারিক পরিমন্ডলে রাজনীতির হাতেখড়ি নেন। কখনো মৌলবাদ কখনো স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে জেল খেটেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ-রাকসুর এজিএস ও সিনেটে সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্র জীবন শেষে কুড়িগ্রামে এসে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৯২ সালে কুড়িগ্রাম আইন কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি উদ্যোগি হন। এই কলেজে তিনি তিন দশক ধরে অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। এ দায়িত্ব পালনের জন্য গত ত্রিশ বছরে বেতন বা সম্মানি হিসেবে তিনি এক পয়সাও না নিয়ে দেশে ইতিহাস গড়েছেন।
সীমান্তে আলোচিত ফেলানি হত্যা মামলায় তিনি আইনজীবী হিসেবে আন্তর্জাতিক বিবেককে জাগ্রত করেন। এখনো তিনি ফেলানীর অন্যয্য বিচারের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। তিনি দুই দেশের নাগরিক যারা পারাপার হতে গিয়ে জেলখানায় আটক হন তাঁদের আইনী সহযোগিতার জন্য গড়ে তুলেছেন বর্ডার ভিকটিমস রেসকিউ লিগ্যাল এসিসট্যান্স ফোরাম। যেটির বাংলাদেশ পার্টের প্রধান আর ভারতের প্রধান প্রখ্যাত মামবাধিকার সংগঠক কিরিটী রায়।
আব্রাহাম লিংকন নিজেকে ছিটমহলবাসীর আন্দোলনে নিয়োজিত করেন। ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনে তিনি উভয়দেশের সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা হন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট ছিটমহল বিনিময়ের দিন বাংলাদেশের থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের মশালডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত মূলসভায় অংশগ্রহণ করেন। বিনিময়ের পর একটি নির্ভূল তালিকা ও জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ে একটা তালিকা প্রণয়ন করে আইন মন্ত্রণালয়কে তিনি হস্তান্তর করেন। ছিটমহলে সংগ্রাম ও মুক্তি নাম তাঁর একটি গ্রন্থও রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জøল ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ২০১২ সালে নিজ বাসভবণে গড়ে তোলেন উত্তরবঙ্গ যাদুঘর। নিজ বাড়ির ড্রইংরুম, বারান্দা, শোবারঘর, পাঠকক্ষসহ সর্বত্রই এই জাদুঘরের স্মারকগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখানে খেতাবপ্রাপ্ত ও খেতাবহীন মুক্তিযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী, যুদ্ধে ব্যবহহৃত গুলি ও গ্রেনেডের বাক্স, যুদ্ধকালিন সময়ে কুড়িগ্রাম-ভারত ব্যাংকিং যোগাযোগের দলিলপত্র ও জ¦ালিয়ে দেয়া ঘরবাড়ির তালিকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং ৫ হাজার ৮৬৫জন রাজাকারের তালিকা রয়েছে। এখানেই সংরক্ষিত রয়েছে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কফিনসহ ব্যবহার্য সামগ্রি।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘরটি। দিনে দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের দুর্লভ স্মারকে সমৃদ্ধ হচ্ছে বৃহত্তর রংপুরের অন্যতম বাতিঘর উত্তরবঙ্গ যাদৃঘর। এখানে ছুটে এসেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, বিচারপতি, পদস্থ কর্মকর্তা ও গবেষকরা। নিজের দানকৃত ১৮শতক জমিতে বর্তমানে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে জাদুঘরের নতুন ৪তলা ভবন।
একুশে পদক পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় আব্রাহাম লিংকন জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। বিচারক মন্ডলিকে ধন্যবাদ তৃণমূলে তাকলেু তারা কাজের মূল্যায়ন করেছেন। এই সম্মান আমাকে দেশ ও সমাজের জন্য আরো বেশি কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ করলো।
তিনি এই পদকের অর্থ নতুন প্রজন্মের ইতিহাস অনুসন্ধানের স্বার্থে উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে দান করবেন বলে জানান।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর