বুলবুল আহমদ,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের কৃষক মো: আবুল কালামের পুত্র মো: রুবেল আহমদ গত ৬ মাস পূর্বে বাম পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে ইনফেকশন হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়েন। অসহ্র্য যন্ত্রনায় দিন রাত্রি চিৎকার চেচামেচিতে এলাকাবাসী তাকে হাসপাতালে চিকিৎসায় নিয়ে যান।
জানাযায়, রুবেলের মতো কত রুবেলই তো মারা যায়। কিন্তু মরা না গিয়ে যদি মৃত্যু যন্ত্রনায় অভিরত কাতরায় তাকে তো মানব সমাজ চিকিৎসায় নিতেই হয়। গত বছর সে বিয়ে করে একই গ্রামের আব্দুল হামিদ মিয়ার কন্যাকে। তাদের দাম্পত্ত জীবনে ১টি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়, তার নাম রাখা হয় রবিন আহমদ ইয়াসিন, তাদের জীবন সুখেই চলছিল। বর্তমানে তার সন্তানের বয়স ৯ মাস চলছে। গত ৬ মাস পূর্বে বাম পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে ইনফেকশন হয়ে যায়। পরে ধীরে ধীরে ডান পা অবস হয়ে যায়। যত সময় যায় ততই পায়ের ইনফেকশন বেড়ে পাটির প্রায় ৮০ ভাগ পচে যায়। এমন অবস্থা দেখে তার পরিবারের লোকজন তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে করোনা মহামারির কারণে ভর্তি না ফিরিয়ে দেয়। পরে তারা বিমূখ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপরে রুবেলের বাবা তার ছেলেকে বাচাঁনোর জন্য তাদের আত্মীয়- স্বজনদের কাছে গিয়ে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত পাতেন। পরে নিজের গৃহ পালিত পশু গরু, ছাগল, হাস, মুরুগ বিক্রয় করে টাকা জমিয়ে তার ছেলেকে বাচাঁনোর জন্য সিলেট রাকিব- রাবিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাকালে রুবেলের একটি আঙ্গুল কেটে দিয়ে ৩দিন পর চিকিৎসকরা বলেন, এখানে তুমার আর কোন চিকিৎসা নাই! আপনারা ঢাকায় নিয়ে চলে যান। এতে আবারও পূর্ণরায় বাড়িতে চলে আসে রুবেল ও তার পারিবারের লোকজন। ঢাকা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিভাবে এতো টাকা তারা সংগ্রহ করবে? এ নিয়ে দু:চিন্তায় পড়েন রুবেল সহ তার পরিবারের লোকজন। অবশেষে বন্ধু/বান্ধব, আত্মীয়- স্বজনদের সহযোগীতায় গত শনিবার ঢাকায় চলে যায়। পরদিন রবিবার ঢাকা হৃদরোগ হাসপাতালে ভর্তি হয় রুবেল। ভর্তির পর ডাক্তার বলেন, আপনার অপারেশন করাতে হবে। এতে অনেক টাকার প্রয়োজন আছে। এ খবর শুনে রুবেল ও তার পরিবারের লোকজন নানা হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। গত কিছুদিন পূর্বে রুবেলের পায়ের ছবি দিয়ে যোগাযোগ মধ্যম ফেইসবুকে আপলোড করে সাহায্যের আবেদন করা হয়। এতে দেশে- বিদেশের বৃত্তবানদের প্রতি সহায্যের আবেদন করা হয়। এতে অল্প কিছু টাকা নিয়ে ছেলেকে বাচাঁনোর জন্য ঢাকা পাঠান। কিন্তু এখন অপরারেশন করাতে হবে। এতে প্রায় ৩ লক্ষাধীক টাকার প্রয়োজন। কোথায় পাবে সে টাকা এ নিয়ে রুবেলের পরিবারে চলছে হা হা কার।
এ ব্যাপারে রুবেল এর বাবা আবুল কালাম এর সাথে সরেজমিনে গিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য আমার সব সম্বল শেষ হয়ে গেেেছ। বাকী আছে শুধু মাতা গুজার এই ঘরটা। আমার ছেলে বর্তমানে ঢাকা হৃদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারলে শতভাগ ভাল হওয়ার আশা করছি। কিন্তু এতে যে নগদ অর্থের প্রয়োজন একথা চিন্তা করেই আমার মাথা সহ সারা শরীরে যন্ত্রনা। আমি যেন আর চিন্তা করতে পারছিনা। তার ৯ মাসের শিশুটির মূখের দিকে থাকালে আবার বাচতে ইচ্ছে হয়। তাই আপনাদের মাধ্যমে দেশ- বিদেশের সকলেরর কাছে আকুল আাবেদন করছি। আল্লাহ আমাদেরকে পাঠিয়েছেন আমাদের কষ্ঠগুলো দুনিয়ার মানুষকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য। তাই আমি বলছি, দেশ- বিদেশের বৃত্তবান ও দয়ালু দানওবীর সু-হৃদয়বান মানুষের কাছে আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য আল্লাহ ওয়াস্তে সাহায্য প্রাথনা করছি। তিনি আরো বলেন, আমার ৩ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে রুবেলই ছিল বড়। আমার ছেলেই ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সে চুনারুঘাট ফ্রেস কোম্পানীতে চাকুরী করতো। হঠ্যৎ করে আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার ছেলেকে তাদের কোম্পানী থেকে বের করে দেয়। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ফ্্েরস কোম্পানী কোন খুজ খবর নেয় নি!
এ ব্যাপারে রুবেলের স্ত্রীর সাথে আলাপকালে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি আমার ৯ মাসের একটি পুত্র সন্তানকে নিয়ে পড়েছি বড় বিপাকে। না পারি ভাল কিছু খেতে, না পারি খাওয়াতে! এর চাইতে যদি মরন হতো তাহলেও ভাল হতো। একদিকে স্বামীর চিন্তা, অপরদিকে সন্তান, পরিবার ও নিজের জীবন নিয়ে ভাবলে পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়। সকলের প্রতি অনুরোধ করছি আমার স্বামীকে বাচাঁনোর জন্য দয়া করে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ৯ মাসের শিশু সন্তানকে কুলে নিয়ে এসব কথা বলতে বলতে সে হাউ মাউ করে কেদে কেদে চোখের জল ফেলেন। এমন দৃশ্য দেখ উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। ফেইসবুকে রুবেলের পায়ে একটি পোষ্ট দেকে লন্ডন প্রবাসী মছনু আহমদ চৌধুরী নগদ আর্থিক অনুদান করেন। গতকাল সেই অনুদানের টাকা সরেজমিনে রুবেলের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী ও বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, নবীগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক মো: ছাদিকুল ইসলাম, জাতীয় অনলাইন অর্ন্তভ‚ক্ত নবীগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি বুলবুল আহমদ, বিশিষ্ট নাট্টকার আব্দুল বাছিত ও জাপা নেতা আব্দুল হালিম সহ আরো অনেকেই।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৬ আগষ্ট ২০২০/ইকবাল