October 7, 2024, 6:26 am

সংবাদ শিরোনাম
স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি রক্ষা করতে হলে প্রতিটি ঘরে সেনাবাহিনী তৈরি করতে হবে(পর্ব-৫) আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ভোলা বোরহানউদ্দিনে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেডের দাবিতে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে বগুড়ায় বিএনপির মতবিনিময় সভা! লক্ষ্মীপুরে কুমিরের আতঙ্কে এলাকাবাসী সাংবাদিক পুত্র আবির হোসেন অনন্ত’র জন্মদিন আজ বিল্লাল হুসাইন
রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ। ফাইল ছবি

জিয়াউর রহমান আমাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল -রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ

মোহাম্মদ ইকবাল হাসান সরকারঃ

রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ। ফাইল ছবি

রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান মন্ত্রী হওয়ার জন্য আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল।জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেয়া রেকর্ডকৃত এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন, ‘কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে জিয়া আমাকে মন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি যদি প্রস্তাবে রাজি না হই তাহলে একই সময়ে সে আমাকে ২৫ বছর জেল বন্দী রাখার হুমকি দিয়েছিল।জিয়াউর রহমানের প্রস্তাবের উল্লেখ করে  রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন,  আমি ১৯৭৬ সালের  ২১ ফেব্রুয়ারি  কিশোরগঞ্জে  আয়োজিত আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করি। বক্তৃতায় আমি বলেছিলাম, হিটলার-মুসোলিনি  থেকে শুরু  করে  কোনো স্বৈরাচারই টিকেনি, এ দেশেও স্বৈরাচার টিকবে না।এ সময় রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ জেলখানায় দুর্বিসহ কষ্টের ইঙ্গিত দেন।তৎকালীন ছাত্র নেতা ও তরুণ সংসদ সদস্য হামিদ আরো বলেন, এই অপরাধেই বোধহয় কিছুদিন পর আমি গ্রেফতার হই। জেলখানার ভেতরেই জিয়াউর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠান। বলা হয়েছিল, প্রস্তাবটি না মানলে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। জীবনভর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে তার আদর্শ আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছি।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন,  সর্বকালের  সর্বশ্রেষ্ঠ  বাঙালি  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমি তার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি শোকাহত চিত্তে আরো শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তার তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ শহিদদের প্রতি যারা ১৯৭৫ সালের এ দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন,  মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তারা শুরু করেছিল বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির পালা। ইতিহাসের  নারকীয়  হত্যাকাণ্ডের  বিচার  প্রক্রিয়া  বন্ধ  করতে ঘাতচক্র কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি আইন’ পাস করে।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন,  ১৫ আগস্ট  বর্বরোচিত  ঘটনা  কেবল  বাঙালির  ইতিহাসের নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। ১৯৭১  সালে মুক্তিযুদ্ধ  স্বাধীনতা  বিরোধী  চক্র পরাজিত  হলেও দেশ  ও জনগণের  বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত কখনো থেমে থাকেনি।স্বাধীনতা  ও বঙ্গবন্ধুর  বিরুদ্ধে  ঘাতকচক্রের  চক্রান্তের  চূড়ান্ত  বহি:প্রকাশই  হচ্ছে  ১৫  আগস্টের  নারকীয় হত্যাকাণ্ড। রাষ্ট্র প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করেছেন। দেশের  মানুষকে  নিজের  প্রাণের চেয়েও বেশ ভালবেসে গেছেন।তিনি  কখনো  ভাবতেও  পারেননি  যে, কোন  বাঙালি  তার বিরুদ্ধে  ষড়যন্ত্র  করতে  পারে বা  তাকে  হত্যা  করতে পারে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সবসময়ই সুযোগ খুঁজতে থাকে। এ সময়  ছোটখাট  কিছু  ঘটনা  ঘটলেও  বঙ্গবন্ধু  কখনোই সেসব আমলে নিতেন না।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন, নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যে কোন দেশের জন্যই সম্পদ। তাই  তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নিজের দেশ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হবে। বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। আর  বঙ্গবন্ধুকে  জানতে  হলে  আমাদের  মুক্তি সংগ্রাম  ও মুক্তিযুদ্ধের  সঠিক  ইতিহাস  জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন আর শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু  একটি প্রতিষ্ঠান,  একটি কালজয়ী  ইতিহাস  ও  একটি  সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধু  আমাদের  মাঝে নেই,  কিন্তু রেখে  গেছেন  তার  রাজনৈতিক  দর্শন, নীতি  ও আদর্শ  যা প্রজন্ম  থেকে  প্রজন্মান্তরে  সকলকে  আলোর পথ দেখাবে, উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে সাহস যোগাবে।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ উল্লেখ করেন , জেলজুলুম,  নির্যাতন  আর অনেক ত্যাগ তিতীক্ষার বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করে গেছেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত  দেশের অর্থনীতির পুর্নগঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপরেখা রেখে গেছেন। রাজনৈতিক  স্বাধীনতার  পাশা পাশি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনারবাংলা প্রতিষ্ঠাই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন।  তিনি  চেয়েছিলেন  বাংলাদেশ  যেন  সবসময়  বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু ’৭৫-র  ১৫ আগস্ট  স্বাধীনতা  বিরোধী  ঘাতকচক্র  বঙ্গবন্ধুকে  হত্যার  মাধ্যমে  তার  সে  স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়নি।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন,  মুক্তিযুদ্ধের  পরাজিত  শক্তি  ভেবেছিল  বঙ্গবন্ধুকে  হত্যার  মাধ্যমে  তার নীতি ও আদর্শ মুছে ফেলা যাবে। কিন্তু তাদের সে চক্রান্ত এ দেশের মুক্তিকামী জনগণ সফল হতে দেয়নি। তাইতো  জীবিত  মুজিবের  চেয়ে অন্তরালের মুজিব অনেক বেশি শক্তিশালী। দেশ  ও জনগণের  যে কোন  ক্রান্তিকালে  বঙ্গবন্ধুর  নীতি ও  আদর্শই  আমাদেরকে  পথের  দিশা দেখায়।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়ন ও অগ্রগিতর ‘রোলমডেল’। বঙ্গবন্ধুর  দেখানো  পথে  তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ  সামাজিক,  সাংস্কৃতিক,  বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি সহ  সকল খাতেই এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে দেশ তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বঙ্গবন্ধু  আমাদের কে  স্বাধীনতা দিয়েছেন আর তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধুর  ৪৫তম  শাহাদাত  বার্ষিকী এটাই সকলের প্রত্যাশা।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন, কোভিড-১৯ এর ছোবলে গোটা বিশ্ব বর্তমানে বিপর্যস্ত। এ অবস্থার  উত্তরণে  সবচেয়ে বেশি দরকার পারস্পরিক সহযোগিতা এবং জীবনযাপনের সকল স্তরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।রাষ্ট্রপতি  এম  আব্দুল  হামিদ উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই গরিব ছেলেদের সাহায্য করতে মুসলিম সেবা সমিতি গঠন করেন। এছাড়া  পঞ্চাশের  মন্বন্তর,  ১৯৪৬ সালের হিন্দু-মুসলিম  দাঙ্গাসহ  সকল প্রাকৃতিক  ও মানবসৃষ্ট  দুর্যোগ মোকাবেলায়  নিজেকে  বিলিয়ে  দিয়ে অনন্য  নজীর  সৃষ্টি  করেছেন। আর এভাবেই বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর। বঙ্গবন্ধুর  জীবন  থেকে শিক্ষা  নিয়ে  আমরাও যদি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগী হই-তা হলে নিশ্চয়ই এ দুর্যোগে থেকে দেশ মুক্ত হবে ইনশাল্লাহ্।কেটে যাবে অমানিশার অন্ধকার, আলোকিত হয়ে উঠবে সবার জীবন।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ এ সময়  বঙ্গবন্ধুসহ  ১৫ আগস্টের  সকল শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।রাষ্ট্রপতি  এম আব্দুল হামিদ  স্মরণ করেন,  বঙ্গবন্ধু  হত্যাকাণ্ড  ছিল  আমার  জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায়।এমপি  হোস্টেলে  থেকে সকালে  খবরটি শুনে  কত যে কেঁদেছি!  আক্ষেপ জেগেছে,  বঙ্গবন্ধুকে  আমি ব্যক্তিগতভাবে সাবধান করেছিলাম। যতদূর মনে  পড়ে, পঁচাত্তরের  ১১ আগস্ট বিকেলে  গণভবনে গিয়ে  বঙ্গবন্ধুকে  বলেছিলাম,  আমার কিছু একান্ত কথা আছে। সন্ধ্যার পর গণভবনের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী বলতে চাস? ’ আমি  কিছু সন্দেহজনক ব্যাপার তাকে খুলে বললাম। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘একটু  ঝামেলা ছিল,  সব ঠিক হয়ে  গেছে; চিন্তা করিস না।’ফিরে  এলাম আশ্বস্ত হয়ে। এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, শেষ কথা। এখন বুঝতে পারি, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না তখন।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ আরো বলেন, জাতির পিতার চিন্তা-চেতনায় সব সময় কাজ করত বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন এ দেশের স্থপতি। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তার নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন তার নাম এ দেশের লাখো কোটি মানুষের অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ উল্লেখ করেন, ‘৭৪-৭৫ সালে এমপি হোস্টেলে  থেকে প্রায়ই ক্যান্টনমেন্টে  যেতাম মামাশ্বশুর ড.  মাহবুবুর  রহমানের বাসায়। সেখানে থেকে ডিজিএফআই অফিস খুব কাছাকাছি। শ্যালক  মাসুমকে সঙ্গে নিয়ে  ওদের  অনেকেরই  হাবভাব,  চালচলন পর্যবেক্ষণ করতাম। ভালো লাগত না। বারবারই মনে হতো খারাপ কিছু ঘটবে। কিন্তু  ওরা যে  বাঙালি  জাতির জনক  বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে মেরে ফেলবে, এটা কল্পনাই করতে পারিনি। রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন,  তারপরও  সিদ্ধান্ত নিলাম  ডিজিএফআই অফিসের লোকজনের কথাবার্তা ও রহস্যজনক আচরণের বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধুকে জানাব। যতদূর মনে  পড়ে,  পঁচাত্তরের  ১১ আগস্ট  বিকেলে গণভবনে গিয়েছি। তৎকালীন মন্ত্রী কোরবান আলী তখন সেখানে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে বললাম  আমার কিছু  একান্ত  কথা আছে। তিনি আমাকে ইশারায় বসতে বলে অন্যান্য কাজ সারতে থাকলেন।সন্ধ্যার পর আমাকে নিয়ে বের হলেন। গণভবনের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী বলতে চাস’। আমি ডিজিএফআই  অফিসের বিষয়গুলো  জানিয়ে  বললাম, ওদের হাবভাব ও চলাফেরা আমার ভালো ঠেকছে না। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘একটু ঝামেলা ছিল,  সব ঠিক হয়ে গেছে,  চিন্তা  করিস না। ফিরে এলাম আশ্বস্ত হয়ে। এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, শেষ কথা। এখন বুঝতে পারি, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না তখন। আমাদের অগোচরেই জাতির জনকের রক্তে কালো হাত রঞ্জিত করতে প্রস্তুত হচ্ছিল ঘাতকরা।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ আরো উল্লেখ করেন, ১৪ আগস্ট রাতে নানা জায়গায় আড্ডা দিয়ে এমপি হোস্টেলে ফিরি। ৩টা-৪টার দিকে  ঘুমাতে যাওয়ার  আগেও  একাধিক আওয়াজ শুনেছি। ভেবেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ-উল্লাস হচ্ছে, পটকা ফুটছে। সকাল ৭টার দিকে  পাশের রুমের  খন্দকার  নুরুল ইসলাম (রাজবাড়ীর এমপি) এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলেন। রাতে  দেরিতে ঘুমিয়েছি  তাই বেশ বিরক্তি  নিয়ে  দরজা  খুলতেই  তার মুখে শুনলাম ‘সর্বনাশ হয়ে গেছে’। তিনি দৌড়ে রেডিও নিয়ে এলেন। সেখানে বারবার বাজছে, ‘আমি মেজর ডালিম বলছি…’।এর পরের কথাগুলো আমি আর শুনতে পারি না। আমার কান বন্ধ হয়ে আসে। মাথা ঘুরতে থাকে। আমার নেতাকে, আমার বঙ্গবন্ধুকে, বাঙালির জাতির জনককে ওরা মেরে ফেলেছে, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আমরা চেয়ে দেখি এমপি হোস্টেলের বাইরেও ট্যাঙ্ক ঘুরছে। অনেক এমপি এবং নেতাকে ফোন করি, অনেককেই পাই না। এমপি হোস্টেলে হামলা হতে পারে এই আশঙ্কার মধ্যেই বের হই। স্যান্ডেল পায়ে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেটে যাই। তারপর সেখান থেকে মহাখালীতে এক আত্মীয়ের বাসায়। কিশোরগঞ্জে গিয়েছি আরও পরে।রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ বলেন, আমি অধিষ্ঠিত হতে পেরেছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনেও। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া বাকি নেই। আমি শুধু চাই, এ দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরঞ্জীব থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি এই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এ জন্য তাকে বহুবার কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। দু’দশকেরও  বেশি সময়  ধরে এ দেশের  জনগণকে  জাতীয়তাবাদী  চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ জন্য পুনরায় তাকে কারাবরণ করতে হয়, যেতে হয় ফাঁসির মঞ্চে। তবুও তিনি শত্রুর সঙ্গে আপস করেননি। দেশ ও জনগণের  স্বার্থকে  সারাজীবন সমুন্নত রেখেছেন। দুঃখী মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই  ঘাতকচক্র  জাতির  জনককে  হত্যা করলেও  তার  আদর্শ  ও নীতিকে ধ্বংস করতে পারেনি। তিনি ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের দায়িত্ব  হবে দেশকে  একটি সুখী  ও সমৃদ্ধ  দেশে  পরিণত  করে জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণ করা। তাহলেই  তার আত্মা  শান্তি পাবে  এবং  আমরা  এই মহান  নেতার  প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৬ আগষ্ট ২০২০/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর