রুহুল আমীন খন্দকার, ব্যুরো প্রধান :
পারিবনা একথাটি বলিওনা আর একবার না পারিলে দেখ শতবার! এই প্রতিপাদ্যকে যথারীতি হৃদয়ে ধারন করে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের রমিজ মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া কাঠমিস্ত্রির কাজ করেও এবারের ২০২০ ইং এসএসসি পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। পরিক্ষার ফল প্রকাশে দেখা যায় শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছরের মতো এ বছরও পাসের দিক দিয়ে পিছিয়ে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এ বছর পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।এবার সারাদেশে প্রায় পরীক্ষা দিয়েছেন ২০ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। যার মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজারেও বেশি শিক্ষার্থী। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে (৩১ মে) সোমবার। দেশে মহামরী করোনাসহ নানান প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষাবোর্ড প্রকাশ করেছে পরীক্ষার ফল। পাশ করেছেন অনেকে আবার ফেলও করেছেন অনেকে। রমিজ মিয়ার পরিবারে সর্বপ্রথম এবারেই কেউ এসএসসি পাস করলেন। রবিবার ফল প্রকাশের পর যখন জানতে পারলেন রমিজ মিয়ার পরিবার ও তার ছেলে, রাসেল মিয়া ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাতেই কাঠমিস্ত্রি বাবা রমিজ মিয়া ও মা রাশেদা বেগমের চোখে ছল ছল করে জল চলে আসে। কারণ এর আগে তাদের পরিবারে কেউ কখনো এসএসসি পাস করেনি এ পাস করার আনন্দ টায় যেন একটু আলাদা। তিন সন্তান আর রমিজ মিয়া ও রাশেদা বেগম এই হলো তাদের পাঁচ জনের সংসার এ নিয়ে বসবাস রমিজ মিয়ার । ছাত্র রসেল মিয়া কৃতিত্বের সাথে পাশ করলেও এখন চিন্তা রাসেল মিয়া এইচএস’সি পড়াশোনা করার জন্য কলেজে ভর্তি হতে পারবেন কিনা। কারণ বাবা কাঠমিস্ত্রি দিন আনে দিন খায়। কষ্ট করে কোন ভাবে এসএসসি পাস করালেও এইচএসসি পাশ করাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে রাসেল মিয়ার বাবা রমিজ মিয়ার মাথাই বড় চিন্তা।রাসেল মিয়া পড়াশোনার পাশাপাশি তার বাবা রমিজ মিয়া’কে কাঠমিস্ত্রি কাজে সাহায্য করে আসছিলেন। এভাবেই চলেছে রাসেল মিয়ার পড়াশোনা। প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত বাবার সাথে কাঠমিস্ত্রি কাজে সহায়তা করে রাতে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত যেটুকু সময় পায় ওইটুকু সময় বাবার কাজের পর নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিতো সে।আর এভাবেই পড়াশোনা করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৫৭ গ্রেডে পাশ করেন রাসের মিয়া।এদিকে রাসেল মিয়া’কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বাবার কাজের পাশাপাশি যতটুকু সময় পেয়েছি ততটুকু সময় পড়াশোনা করেছি কারণ আমরা গরিব আমাদের কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। তাই বাবার সাথে কাজ করে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। প্রাইভেট পড়া একরকম দুঃস্বপ্নের মতো সেটা আবার তো ধনীর ছেলেরাই পড়ে গরিবের জন্য কিসের প্রাইভেট এমনটাই বলছিলেন রমিজ মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া।তবে, রাসেল মিয়া বড় হয়ে একজন পুলিশ অফিসার হতে চায় এটাই তার স্বপ্ন। বাবা-মা’র ও আসা একজন সৎ পুলিশ অফিসার বানানোর। তার এই মুহূর্তে মেধাবী ছাত্র রাসেল মিয়ার পাশে দেশের বিত্তবান দের কেউ দাঁড়িয়ে গেলে হয়তো এই মেধা গুলো আর অনাদরে ঝরে যাবে না। দেশের উন্নয়নে কাজে লেগে যাবে। রাসেল মিয়ার গোল্ডেন জিপিএ ৫ না পাওয়াতে তার কোন দুঃখ নেই। কিন্তু রাসেল মিয়া বলেন আমার পড়া লিখার কেউ দায়িত্ব নিলে আমার স্বপ্ন পুরুন হতো আমি সফল হতে পারতাম। রাসেল মিয়ার রেজাল্টে তার পরিবার খুশি। কিন্তু রাসেল মিয়ার বাবা আরও ভাল কিছু আশা করে ছিলেন। তারপরও খুশি রয়েছেন রাসেল মিয়ার পরিবারের সবাই।
ডিটেকটিভ/৩১ মে ২০২০/ইকবাল