৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন জাতি আর মানবে না: নোমান
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হলে বিএনপি সেই নির্বাচন মাথা পেতে নেবে না। সেই নির্বাচন জাতি গ্রহণ করবে না। সেই নির্বাচনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ আওয়াজ তুলবে। বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, নির্বাচন আমরা করব। তবে সেই নির্বাচন নির্ভেজাল হবে। আর সেই নির্বাচনে সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে আবদুল্লাহ আল নোমান এ মন্তব্য করেন। ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের’ দাবিতে এ সভার আয়োজন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক মঞ্চ। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ইসমাইল তালুকদার খোকন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জনগণের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের লড়াই হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বন্দুক ও রাইফেল দিয়ে দমিয়ে রাখতে পারবে না। আর হামলা ও মামলা দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করতে পারবে না। আর যদি বন্দি করে তাহলে দেখা যাবে, খালেদা জিয়া ফুলের মালা নিয়ে কারাগার থেকে বের হচ্ছেন আর হাসিনা কারাগারে ঢুকচ্ছেন। এই লিখন তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) কপালে! রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এখন অসহায় অবস্থায় আছে মন্তব্য করে আবদুল্লাহ আল নোমান আরো বলেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের কবর রচনা করতে চায়। কারণ সরকার মনে করে, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে তাঁরা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এই কারণে তাঁরা বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজনে আন্দোলনও করব। আর এভাবেই আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করব। ওপরে সরকারকে যতই শক্তিশালী মনে হোক। আসলে তারা দুর্বল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগকে এক-এগারোর (ওয়ান-ইলেভেন) সুবিধাভোগী আখ্যায়িত করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, তারা এখন রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র নেই দাবি করে ‘তা পুনঃপ্রতিষ্ঠায়’ তার দল বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। নোমান বলেন, দেশের যে এক-এগারোর সৃষ্টি হয়েছিল, সেই এক-এগারোর সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। তারা আবার বাকশাল করতে চায়। মানুষের মৌলিক অধিকার ইতোমধ্যে তারা হরণ করে ফেলেছে। আমরা দেশের একটি গণতান্ত্রিক সরকার চাই, দেশে সুশাসন চাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রয়োজনে আলোচনা করব, প্রয়োজনে আন্দোলন করব; গণতন্ত্রের প্রশ্নের আমরা ছাড় দেব না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্কের জেরে রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ফখরুউদ্দিন আহমেদ নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়, রাজনীতিতে যা ওয়ান-ইলেভেন (এক-এগার) হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়ার আগে সেই সরকারের দুই বছরে দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি-আওয়ামী লীগের বহু রাজনীতিবিদকে কারাগারে যেতে হয়। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলে তা পুনর্বহালের দাবিতে পরের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আসছে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও ফের নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে তারা। তবে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির দাবি নাকচে সরকারের সমালোচনা করে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এই সরকার গণতন্ত্রের কবর রচনা করতে চায়। তারা মনে করে, যদি বুলেটের চাইতে শক্তিশালী ব্যালট এদেশের সাধারণ মানুষ নির্ভেজালভাবে দিতে পারে- তাহলে আওয়ামী লীগ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এই নিক্ষিপ্ত হওয়ার ভয়ে, তারা পাল্টা রাজনৈতিক যে শক্তি- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এবং যে দল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই দলকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা বলতে চাই, এসব করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। আমরাদের দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জনগণকে দমানো যাবে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পূর্বশর্ত। আমরা বলেছি, নির্বাচন আমরা চাই, নির্বাচন আমরা করব। তবে সেই নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা। নোমান বলেন, সরকার… তার উপরিকাঠামো যতই শক্তিশালী মনে হোক, আমরা দেখছি তারা দুর্বল হয়ে গেছে। এই দুর্বলতায় তারা এখন বাঁচতে চায়। আমরা বলি আসুন আলোচনা করি, আলোচনা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি। এই লক্ষ্যে আমি সকলকে এক হওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন আয়োজন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক মঞ্চ। গণতান্ত্রিক মঞ্চের সভাপতি ইসমাইল হোসেন তালুকদার খোকনের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাসাসের শাহিরুল ইসলাম শায়লা, উলামা দলের কাজী রফিকুল ইসলাম এবং মুক্তিযোদ্ধা ফরিদউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।