December 23, 2024, 6:48 pm

সংবাদ শিরোনাম
গৌরনদী মডেল থানায় বরিশাল জেলার বিদায়ী পুলিশ সুপারকে বিদায়ী সংবর্ধনা জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে গৌরনদীতে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত পটুয়াখালীতে অসামাজিক কাজে জরিত থাকার অভিযোগে নারী সহ আটক-৩। টঙ্গি ইজতেমার মাঠে হামলার প্রতিবাদ খুনিদের বিচার ও কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে হিলিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে গৌরনদীতে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত পটুয়াখালীতে ধানক্ষেত থেকে শঙ্খিনী সাপ উদ্ধার দিনাজপুরে “গমের জাত উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তায় স্পীড ব্রীডিং-এর ভুমিকা” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়, পুলিশ ও জনগণ একে অন্যের পরিপূরক-রেজাউল করিম মল্লিক দলের পরিবর্তন হয়েছে চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি শায়খে চরমোনাই মুফতি ফয়জুল করীম আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই,আমাদেরকেও আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন- ডা. শফিকুর রহমান

আকাশ পরিবহন মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ?

অনলাইন ডেস্কঃ

নানাভাবে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। আকাশ, জল, স্থল পথে বিভিন্ন পরিবহনে মানুষ ভ্রমণ করে থাকে। নিরাপদ ভ্রমণই মানুষকে চলার পথে আনন্দঘন সময় উপহার দিতে পারে। সব কিছুর উর্ধ্বে মানুষের জীবন। এ জীবন রক্ষায় নিরাপদ ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্বে এভিয়েশন মানেই ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য নিরাপদ ভ্রমণ। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার খবর শিরোনাম হয়ে আসে। তখন ব্যথিত হই। সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট, কার্গো ফ্লাইট, বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর আন্তঃসংযোগ ফ্লাইট, ব্যক্তিগত ফ্লাইট, ট্রেনিং ফ্লাইট, হেলিকপ্টারসহ নানা রকম ফ্লাইট পরিচালিত হয়।


পৃথিবীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এয়ারক্রাফট সবসময়ই আকাশে থাকে। বিপরীত চিত্রও দেখতে পেয়েছি, মহামারি করোনায় শতভাগ এয়ারক্রাফটও গ্রাউন্ডে দেখতে পেয়েছি, যেমন এভিয়েশন শিল্পের জন্য অস্বাভাবিক চিত্র তেমন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জন্যও একই অবস্থা। কোনো দেশের বিমানবন্দরই শতভাগ এয়ারক্রাফটের জন্যে অবকাঠামো তৈরি করেনি।

সর্বশেষ ৭০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হওয়ার পর ২০১৭ সালে একটিও বাণিজ্যিক ফ্লাইট দুর্ঘটনায় পতিত হয় নাই। ২০১৭ সালই বিমান পরিবহনের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ বছর হিসেবেই স্বীকৃত। ২০১০ সালের পর সারা বিশ্বে ৯৪ টি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ১০৯টি দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং ৩ হাজার ৯৩০ জন যাত্রী ও ক্রুদের জীবনহানি ঘটে। ২০১৪ সালে ২২টি দুর্ঘটনায় ৯৯২ জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দশ বছরে ১০টি এয়ারলাইন্সের ১৩টি দুর্ঘটনা ও একটি নিরুদ্দেশ হওয়ার পর মোট ২০৮০ জন যাত্রী ও ক্রুকে চিরবিদায় জানাতে হয়। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে নেপালে সর্বোচ্চ ৯টি দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত হন।

বিমান ভ্রমণ যে নিরাপদ তা কোনো মনগড়া বক্তব্য নয়, বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নানা তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই বলার সুযোগ আছে। প্রতি ১০ লাখ বা এক মিলিয়ন ফ্লাইট পরিচালিত হলে বিমান দুর্ঘটনা ঘটার রেকর্ড গত দশ বছরের হিসাব উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে। ২০১১ সালে ৪.১, ২০১২ সালে ৩.২, ২০১৩ সালে ২.৯, ২০১৪ সালে ৩.০, ২০১৫ সালে ২.৮, ২০১৬ সালে ০.৩৯, ২০১৭ সালে ০.১১, ২০১৮ সালে ০.১৯, ২০১৯ সালে ০.১৮, ২০২০ সালে ০.২৭। গত দশ বছরে গড়ে ১০ লাখ ফ্লাইট পরিচালনা করার পর ১.৭১ ফ্লাইট দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল। যা যেকোনো পরিবহনের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ।
২০১৭ সালের পর ২০১৮ সালকেও এভিয়েশনে একটি নিরাপদ বছর হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সারা বছর সারা বিশ্বে মাত্র ১৫টি ছোট-বড় বিমান দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় এবং ৫৫৬ জন নিহত হন। তেমনিভাবে ৭৪ বছরের ইতিহাসে ২০১৯ সালকেও এভিয়েশনে নিরাপদ বছর হিসেবে মনে করা হয়। এ বছর মাত্র ২০টি দুর্ঘটনায় ২৮০ জন নিহত হন।

২০২০ সাল দুর্যোগপূর্ণ মহামারি করোনার কবলে নিষ্পেষিত সারা বিশ্বের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি। করোনার কারণে অনেকটা লকডাউন অবস্থায় ৪০টির মতো দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়। এর মধ্যে বড় আকারের ৫টি দুর্ঘটনা ঘটে এবং এসব দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন হতাহত হন। সারা বছর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ১৩৭ জন যাত্রী, ক্রু নিহত হন। যার মধ্যে নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী প্রধানও ছিলেন।

২০২১ সালে করোনা মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক ও কার্গো ফ্লাইটসহ ৮ টি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হয়। উল্লেখযোগ্য ইন্দোনেশিয়ার শ্রীউইজায়া এয়ারলাইন্স জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয়। ৬২ জন যাত্রী ক্রুর সবাই নিহত হন। এছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৫২ জন নিহত হন।

চলতি বছর মার্চে চায়না ইস্টার্ণ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ গুয়াংজুর সন্নিকটে গুয়াংজি পর্বতমালায় বিধ্বস্ত হয়। ১৩৩ আরোহীর সবাই হতাহত হন। এছাড়া এপ্রিলে নেপালের তারা এয়ারলাইন্স দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ২২ জন নিহত হন। জুনে মায়ামী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এমডি-৮২ এয়ারক্রাফট বিধ্বস্ত হয়।

গত এক দশকে ২০১৪ সালে আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স এর একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট ৪০ হাজার ফুট উপরে ইউক্রেন-রাশিয়া সীমানার আকাশসীমায় ভূমি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ভূপাতিত করে, ফলে ২৮৩ জন যাত্রী ও ১৫ জন ক্রু নিহত হন। একই বছর কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং এ যাওয়ার সময় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স এর এমএইচ ৩৭০ এয়ারক্রাফটটি ২৩৯ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। যা আজও বিশ্ব এভিয়েশনের কাছে অনেকটা ধাঁধাঁ-র মতো। এর কোনো হদিস এখনো মেলেনি।    

এশিয়ানা এয়ারলাইন্স এবং মারপাতি নুসানতাারা এয়ারলাইন্স দু’টি সর্বোচ্চ সংখ্যক তিনটি করে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মোট ছয়টি দুর্ঘটনায় মোট ৩০ জন নিহত হন।
১৯৭০ সালের পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি এক মিলিয়ন ফ্লাইটে ১২ গুন দুর্ঘটনা হ্রাস পায়। গাণিতিক হিসেবে প্রতি মিলিয়নে ৬.৩৫ থেকে ০.৫১ -এ নেমে আসে। আবার হতাহতের সংখ্যা বিচারে ৮১ গুন হ্রাস পায়। যা ১৯৭০ সালের প্রতি ট্রিলিয়নে ৩২১৮ থেকে নেমে ৪০ নেমে আসে। দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বিচারে বর্তমানে বিমান পরিবহন যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ।

গত ৭০ বছরে পৃথিবীর একমাত্র এয়ারলাইন্স কানতাস এর এক্সিডেন্টাল রেকর্ড শূন্যের কোঠায়। যা নিরাপদ এয়ারলাইন্স হিসেবে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এয়ারলাইন্সরেটিংস ডট কম এর জরিপে ৩৮৫টি এয়ারলাইন্স এর মধ্যে কানতাস এয়ারলাইন্স নিরাপদ এয়ারলাইন্স হিসেবে উচ্চ শিখরে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশের আকাশপথ ও আকাশ পরিবহনও অনেক বেশি নিরাপদ। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরের ইতিহাসে ছোট বড় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যথাক্রমে ১৯৮৪ সালে ঢাকায় ও ২০১৮ সালে কাঠমান্ডুতে দু’টি বড় আকারের দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দু’টি দুর্ঘটনায় ১০০ জন হতাহত হন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাইলটের সচেতনতায় ইউএস-বাংলার এয়ারক্রাফটকে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে শতাধিক যাত্রীদের জীবন বাঁচিয়ে বীরত্বও দেখিয়েছেন।

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান কো-পাইলট কর্তৃক অপহৃত হয়। বিমানটি আদ্দিস আবাবা থেকে ইতালির মালপেনসাতে যাচ্ছিল। বিমানটিতে ১৯৩জন যাত্রী ও ৯ জন ক্রু ছিলেন। বিমানটিকে কো-পাইলট জেনাভাতে জোরপূর্বক অবতরণ করতে বাধ্য করে। অনেক নাটকীয়তার পর সকল যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদে মুক্ত হন। আবার বছর তিনেক আগে বাংলাদেশ বিমানের একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ ধরনের কিছু ঘটনা এভিয়েশনে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা হয়।  

১১ আগস্ট ২০১৪, কলকাতার মধ্য আকাশে জামশেদপুর জেলায় ভূমি থেকে ৩২০০০ ফুট উচ্চতায় পাইলটের সচেতনতা ও দক্ষতার কারণে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড ও সৌদি এয়ারলাইন্স এর বিমান মুখোমুখি সংঘর্ষ পরিহার করা সম্ভব হয়। যাতে বেঁচে যান কয়েকশ যাত্রী।

অন্য একটি হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সারা বিশ্বে ১৯৮২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৮৩৩৭৪ টি প্লেন ছোট বড় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর মধ্যে ফ্যাটাল ইনজুরি হন ৪৭৭১৯ জন, সিরিয়াস ইনজুরি ১৭৮৬২ জন এবং মাইনর ইনজুরি ২৮৬০৭ জন। এক্সিডেন্টের প্রায় অর্ধেক হয় উড্ডয়ন ও অবতরণকালীন সময়ে।

এক্সিডেন্টের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হিউম্যান এরর কারণে প্রায় ৭০ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বাকি ৩০ ভাগের ২০ ভাগ মেকানিক্যাল ফেইলর আর ১০ ভাগের মতো ওয়েদারের কারণে ঘটে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা আর ধারাবাহিকভাবে বিমান পরিবহনে দুর্ঘটনা হ্রাস পাওয়ায় হতাহতের সংখ্যা কমায় বিমান পরিবহন বর্তমানে যে কোনো সময়ের তুলনায় নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বাস্তবতার নিরিখে সারাবিশ্বের এভিয়েশন যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর