গণপরিবহনে ধর্ষণ ও হত্যা : নারীর নিরাপত্তা কবে নিশ্চিত হবে
আমরা যে নৈতিক-সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত দশায় অবস্থান করছি তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কোনো খাতই আর পরিশীলিত নেই। নীতি-আদর্শের অনুসারী, দায়িত্বনিষ্ঠ মানুষ এখন বিরল উদাহরণ। অবক্ষয় আর ব্যক্তিপর্যায়ে সীমিত নেই, এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক তথা সামষ্টিক। দীর্ঘ একটি নেতিবাচক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভীষণ কুৎসিত তার চেহারা! এ অবক্ষয়ের অনিবার্য ফল অনাস্থা। ব্যক্তি-ব্যক্তি, ব্যক্তি-সমাজ, প্রতিষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান সব সম্পর্কেই এ অনাস্থা দেখা দেয়। ভরসাযোগ্য লোক পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। অবক্ষয়ের নিকৃষ্টতম রূপ প্রকাশিত হচ্ছে নারীর প্রতি পুরুষের আচরণে। মাদরাসার ছাত্রীও রেহাই পাচ্ছে না লোলুপদৃষ্টি থেকে; গণপরিবহনের নারী যাত্রী নিরাপদ নয় চালক বা সহকারীর কাছে অথবা সহযাত্রীর কাছে। তাদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়, ধর্ষণের শিকার হতে হয়; হত্যাকা-ের শিকারও হতে হয়। এ জাতীয় ঘটনা ঘটেই চলেছে।
একটি খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে। গত সোমবার রাতেও এক বাসযাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কে। অভিযোগ করা হয়েছে, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ-বাজিতপুর-পিরিজপুর রুটের ‘স্বর্ণলতা’ পরিবহনের একটি বাসের এক যাত্রীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি পেশায় সেবিকা ছিলেন। কটিয়াদীর লোহাজুরি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে তাঁর বাড়ি। ঢাকার কল্যাণপুরে একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তিন দিনের ছুটি পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাসটির চালক ও সহকারী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ তাদেরসহ পাঁচজনকে আটক করেছে। চালক ও সহকারী অভিযোগ অস্বীকার করলেও লাশের ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক চিকিৎসক বলেছেন, তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা করার প্রমাণ মিলেছে।
নারীর নিরাপত্তার অভাব আমাদের সমাজে বরাবর ছিল, এখনো রয়েছে। আগে ঘটনার সংখ্যা ও মাত্রা কম ছিল; গণমাধ্যমেও খবর কম প্রকাশিত হতো। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের বিস্তৃতির কারণে নারীর বিচরণশীলতা অনেক বেড়েছে; সঙ্গে বেড়েছে ঝুঁকি। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীর যৌন হয়রানির ও তজ্জনিত কারণে প্রাণহানির ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। কিন্তু এমন হওয়ার কথা নয়। তাহলে কেন হচ্ছে? কারণ নারীর বিচরণশীলতা, কর্মমুখিতা বাড়ার সঙ্গে তার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বেÑএ চিন্তা করে যথাযথ ব্যবস্থা সরকার নিতে পারেনি, সমাজকে নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলতে পারেনি। অথচ এটাই সময়ের দাবি। আমাদের সমাজ ও বিভিন্ন ব্যবস্থা রিপুর তাড়নাকে সামলাতে শেখেনি এখনো। এমন অনিরাপদ অবস্থা কাম্য হতে পারে না। অবক্ষয়ের নিগঢ় থেকে মুক্তির উপায়-সন্ধান অতি জরুরি।