রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে: বহিষ্কারের হুমকির পরও বিএনপি-জাপায় বিদ্রোহী প্রার্থী
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারেনি জাতীয় পার্টি ও বিএনপি। দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশ আর বহিষ্কারের হুমকির পরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এরশাদের ভাইপুত্র দলের যুগ্ন-মহাসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। সাবেক পৌর মেয়র ও জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবদুর রউফ মানিকও রয়েছেন সেই তালিকায়। গৃহদাহের একই উত্তাপ লেগেছে বিএনপিতেও। দল মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহানগর যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু। তবে দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টি ও বিএনপির প্রার্থীরা আশা করছেন, এখনো প্রত্যাহারের সুযোগ থাকায় বিদ্রোহীরা মূল ¯্রােতে ফিরে আসবেন। রংপুরকে নিজ দূর্গ হিসেবে দাবি করা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেন।
মহানগর জাতীয় পার্টির সম্মেলনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে পরিচয় করিয়ে দেন দলের নেতা-কর্মীদের কাছে। এরশাদের এই সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে উঠেন ছোট ভাইয়ের ছেলে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। বড়আব্বা এরশাদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। তবে নগরীতে সাটানো ব্যানার-পোস্টার আর ফেস্টুনে এরশাদ বা দলের কোন পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করেন নি। এদিকে ইসির তফসিল ঘোষণার পর মেয়র পদে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন আসিফ শাহরিয়ার।
সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে আসিফকে বহিষ্কারের হুমকি ও দলীয় পরিচয় ব্যবহার না করা জন্য মানিককে দিয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসিফ শাহরিয়ার এরশাদের হুমকি-ধামকি তোয়াক্কা না করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এতে করে ভোট উৎসবের এই নগরীতে এখন চলছে এরশাদ পরিবার থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী আসিফকে আলোচনা-সমালোচনা। দলের মধ্যেও শুরু হয়েছে কানকথা। কেউ কেউ বলছেন দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের ইশারায় আসিফ শাহরিয়ার নির্বাচনে দাড়িয়েছেন। তবে এনিয়ে জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংকে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবদুর রউফ মানিকও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তবে জাতীয় পার্টির সাথে কোন যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেন সাবেক এই পৌর মেয়য়। মানিক বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করার জন্য জাতীয় পার্টি নয়। আমি কয়েক বছর আগেই দল থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি এখন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে চিন্তা করি। এখন রংপুরের মানুষ আবেগ দেখে ভোট দেয় না, উন্নয়ন দেখে ভোট দেয়। এ সময় নিজেকে তিনি আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠীর একজন হিসেবে উল্লেখ করেন। এদিকে সাবেক এমপি ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্য সচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ বলেন, দলের চেয়ারম্যান এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ রংপুরে থাকেন না। তারা জনগণের প্রতিনিধি হয়েও জনগণের খোঁজখবর নেন না।
জনগণও তাদেরকে পাশে পায় না। তিনি আরো বলেন, জনগণ আমার কাছে প্রায়ই আসেন। তাদের কথা শুনি, খোঁজখবর রাখি। তারা চান আমি তাদের জন্য কিছু করি। এজন্যই দলের হয়ে নয়, জনগণের প্রতিনিধি হয়ে আমি নির্বাচন করছি। ভোটের মাধ্যমেই জনগণ তাকে রায় দিবেন বলে আশা করেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপি মনোনয়ন সিলেকশনে ত্যাগী নেতাকে মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন দলটির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু। তিনি বলেন, আমি দলের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। আমার একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে রাজপথের আন্দােলনে বিএনপির জন্য অনেক কিছুই করেছি। কিন্তু প্রার্থী মনোনয়নে দল আমার ত্যাগের মূল্যায়ন করেনি। আমার প্রতি অবিচার করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপমুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার ভোট ব্যাংকের হিসেবে কোন গড়মিল হবে না বলেও জানান বিএনপির এই বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে ধানের শীষ প্রতীকে দলের মনোনীত মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলা বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী নয়, বরং ব্যক্তিগত ইচ্ছায় যুবদল নেতা নাজমুল আলম নাজু নির্বাচন করছেন। এতে বিএনপিতে কোন প্রভাব পড়বে না। এরশাদ মনোনীত মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আসিফ রংপুরের মানুষের জন্য এমন কিছু করেন নি, যার জন্য জনগণ তাকে ভোট দিবেন। বরং এখনো সময় আছে দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান ও আস্থা দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে মূল ¯্রােতে ফিরিয়ে আসার। মোস্তফা আরো বলেন, দলীয় চেয়ারম্যান এরশাদ স্যার ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপিসহ দলের সিনিয়র নেতারা সবাই আমার জন্য নির্বাচনী সভা করেছেন। লাঙ্গলের জন্য ভোট চেয়েছেন। দলের সবাই আমার সাথে আছেন। একারণে আসিফ শাহরিয়ার নির্বাচন করলেও জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংকে তেমন কোন প্রভাব পড়বে। উল্লেখ্য, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২ নভেম্বর বুধবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে মেয়র পদে ১৩ জন, কাউন্সিলর পদে ২২৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়নে ছয়জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। ২৫ ও ২৬ নভেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হবে। রসিকের ৩৩টি ওয়ার্ডের ১৯৬টি ভোটকেন্দ্রে আগামি ২১ ডিসেম্বর গত বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।