ফেনীতে খালেদার গাড়িবহরে হামলার জন্য নিজাম হাজারীকে দুষলেন আরেক আ. লীগ নেতা
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ‘পরিকল্পিত’ এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী এর ‘পেছনে’ ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন দলেরই এক স্থানীয় নেতা। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এম আজহারুল হক আরজু গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় নেতাকর্মীকে হত্যা, নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে। লিখিত বক্তব্যে আরজু বলেন, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে যে হামলার ঘটনা ঘটে, সেটিও ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। কারণ সেদিন বেছে বেছে ডিবিসি, চ্যানেল আই, একাত্তর, বৈশাখী টিভি ছাড়াও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ পুরো ঘটনার নেপথ্য নায়ক নিজাম হাজারী। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ-সংক্রান্ত সংবাদ এসেছে। নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের ‘প্রতিশোধ হিসেবেই’ তিনি ‘ক্যাডার দিয়ে ওইসব গাড়িতে হামলা চালান’ বলে মন্তব্য করেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আরজু। সাংসদ নিজাম হাজারী দেশের বাইরে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে পারেনি। খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ দিতে কক্সবাজারের উখিয়ায় যাওয়ার সময় গত ২৮ অক্টোবর ফেনী জেলার সীমানার শুরুতে মোহাম্মদ আলী বাজারে তার গাড়িবহরে হামলা হয়। ওই ঘটনায় খালেদার বহরের এবং গণমাধ্যমের প্রায় ৩০টি গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরের শিকার হন। এরপর ৩১ অক্টোবর তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকা ফেরার পথেও ফেনীর মহিপাল অতিক্রম করার সময় গাড়িবহরের পাশে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিএনপি নেতারা দুই দফা হামলার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে এলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সে সময় বলেন, সংবাদপত্রে ‘বিগ নিউজ’ পাওয়ার জন্য ওই হামলা বিএনপির ‘সাজানো’। প্রথম ঘটনায় ফেনীর মোহাম্মদ আলী বাজারে খালেদার গাড়িবহরে হামলাকারী যুবকদের মধ্যে শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি রিয়েলের ছবি গণমাধ্যমে আসে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ সে সময় একটি অডিও টেপ সাংবাদিকদের শুনিয়ে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন তার দলের নেতা-কর্মীদের ওই হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে শাহাদাত দাবি করেন, অডিওর ওই কণ্ঠ তার নয়, তা ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শাকার। আর ওই অভিযোগ অস্বীকার করে শাহাদাত হোসেন শাকা সে সময় বলেছিলেন, ওই কণ্ঠ তারও নয়। ঘটনাস্থলে রিয়েলের উপস্থিতির ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, হামলার পর যানজট হলে রিয়েলসহ ছাত্রলীগের ছেলেরা তা সরানোর জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। এদিকে, জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আজহারুল হক আরজু অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফেনী-২ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়ার পর নিজাম হাজারী ‘নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী’ গড়ে তুলে জেলাজুড়ে ‘লুটপাট ও অনিয়াম’ শুরু করেন। তার অপকর্মে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা কিংবা প্রতিবাদ করলেই তাকে ক্যাডার দিয়ে হুমকি-ধামকি, সন্ত্রাসী হামলা কিংবা পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মুখ বন্ধ করার অপচেষ্টা চলে। তাতে কাজ না হলে তাকে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে ফেলা হয়। তার প্রতিহিংসার প্রথম শিকার হন ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরাম।” ২০১৪ সালের ২০ মে ফুলগাজী যাওয়ার সময় ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় একরামুলকে নিজের গাড়িতে গুলি চালানোর পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় ফেনী জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক মাহাতাব উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর ওরফে মিনার চৌধুরীসহ ৫৬ আসামির বিচার চলছে ফেনীর আদালতে। আরজুর দাবি, একরামের পর যুবলীগ নেতা জয়নাল, তাঁতী লীগ নেতা রেজাউল করিম, সোনাগাজী উপজেলার যুবলীগ নেতা মিন্টু ও ছাত্রলীগ নেতা রিপনসহ আরও কয়েকজনকে একে একে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদ করায় নিজাম হাজারীর ‘আক্রোশের শিকার’ হতে হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, রাজনীতি করার কারণে আমাকে বিভিন্ন সময়ে বহু হামলা-মামলা এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি কখনও এখনকার মত হয়নি। লিখিত বক্তব্যে আরজু বলেন, অস্ত্র মামলায় সাজা কম খাটার অভিযোগে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলছে। ওই মামলার বাদী জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া এলাকায় আরজুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। মামলা হওয়ার পর নিজাম হাজারী ক্ষুব্ধ হন এবং শায়েস্তা করতে নানামুখী অপতৎপরতা শুরু করেন। পুলিশে প্রশাসনকে ব্যবহার করে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে আমাকে। দ্রুত বিচার আইনসহ বিভিন্ন ধারায় আমার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগে অন্তত নয়টি মামলা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর গভীর রাতে ধর্মপুর ইউনিয়নের জোয়ারকাছাড়ায় আরজুর গ্রামের বাড়িতে হামলা করে আসবাবপত্র ভাংচুর এবং বাড়ির লোকদের ভয়ভীতি দেখানো বলে অভিযোগ করেন তিনি। আরজু বলেন, নিজাম হাজারীর নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না সাংবাদিকরাও। আপনারা খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন সেখানকার সাংবাদিকরা কী পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজাম হাজারী প্রশাসনকে ব্যবহার করে একাধিকবার ফেনী প্রেসক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও নিজাম হাজারীর ‘নির্যাতনের’ শিকার হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নামমাত্র মূল্যে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজাম হাজারী বহু হিন্দুর সম্পত্তির মালিকানা নিয়েছেন। তার বাড়ি সংলগ্ন বিশাল বাগান বাড়ির অধিকাংশ জমি এ কায়দায় দখল করা। যেসব অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে করা হচ্ছে, সেগুলো আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে কি না- এ প্রশ্নে আরজু বলেন, এসব কথা সবাইকে বলেছি। সবাই বলছেন, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এসব অভিযোগের বিষয়ে নিজাম হাজারীর বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে ফেনী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহার বলেন, অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে নিজাম হাজারী বর্তমানে সিঙ্গাপুর রয়েছেন। আর নিজাম হাজারী পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন বলে যে অভিযোগ এসেছে, তা অস্বীকার করেন ফেনী জেলার পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।