ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
সবজি ও পেঁয়াজের বাজার দরের অস্থিরতা গত এক মাস ধরেই দেখে আসছেন ক্রেতারা। আবহাওয়ায় শীতের আমেজ পড়লেও কাঁচাবাজারে সবজির দও কমেনি। তবে চলতি মাসে প্রথম সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম না কমলেও মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে দাম। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ ও সবজির দর কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনও তার প্রতিফলন নেই বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল কাঁচাবাজার ও শুক্রাবাদ কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়। সর্বশেষ সবজির খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিকেজি ধনিয়াপাতা ২০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা থেকে ২০ টাকা, সিম ১৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৩৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, প্রতিপিস ফুলকপি ৩৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা ও আলু ২৫ টাকা থেকে ২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন,পাইকারি বাজারে শীতের সবজির আমদানির কারণে দাম কিছুটা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে দাম এখনও স্বাভাবিক হয়নি। কিন্তু আশা করা যায় চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সবজির দাম কমা শুরু হতে পারে। হাতিরপুল কাঁচাবাজার সবজি বিক্রেতা রবিউল আলম বলেন,শীতে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়, ফলে দামও কমে যায়। বাজারে শীতের সবজি আসার প্রভাব কিছুটা পড়ছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। তবে আশা করা যায় সামনের সপ্তাহ থেকে দাম কিছুটা কমবে। সর্বশেষ খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় ও ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি রসুন ৮০ টাকা, আমদানি রসুন ৮৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল ৬০ টাকা করে কেজি বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা লিটন বলেন, আমদানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। আশা করা যায় সামনে পেঁয়াজের দাম কমবে।
তবে খুব দ্রুত দাম স্বাভাবিক হবে না বলে জানান তিনি। এদিকে বাজারে চালের দামে লাগা আগুন এখনও নেভেনি। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বাজারে দর আটকে আছে এক জায়গাতে। প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা করে। এ ছাড়া প্রতিকেজি মিনিকেট ৬০ টাকা, বিআর–২৮ কেজিপ্রতি ৫০–৫৫ টাকা ও স্বর্ণা ও পারিজা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও মাছ মাংসের দাম। মাছের সর্বশেষ বাজার দর প্রতিকেজি কাতল মাছ ২৮০ টাকা, পাঙ্গাশ মাছ ১৩০ টাকা, রুই মাছ ২৩০–৩০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ টাকা ও চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা ও বোয়াল ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংসের বাজার রয়েছে গত সপ্তাহের দরে অনুযায়ী। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪৮০–৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০–৭৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগী ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কক মুরগি প্রতি পিস সাইজ অনুযায়ী ১৫০–২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস। এদিকে, কয়েক মাস ধরেই অস্থির চালের বাজার। বিদেশ থেকে চাল আমদানি করেও বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ ফেরাতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চালের দাম বৃদ্ধির সময় এক লাফে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে যায়। তবে কমার সময় সেই চিত্র পাওয়া যায় না। রাজধানীর চালের পাইকারি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়। পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১ থেকে দুই টাকা কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। চালের দাম বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেখতে বেশি দূরে যেতে হবে না। চলতি বছরের শুরু দিকে অর্থাৎ মার্চ–এপ্রিল মাসে যে মোটা চাল ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই চাল পরের মাসে অর্থাৎ মে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। পরে আরেক দফা দাম বেড়ে তা দাঁড়ায় ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায়। পাঁচ মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৪ টাকা। যা মণ প্রতি বেড়েছে ৫৬০ টাকা। এত গেলো শুধু মোটা চালের কথা। মোটা চালের সঙ্গে দাম বেড়েছে মিনিকেট, নাজির, চিনিগুড়াসহ প্রত্যেক প্রকারের চালের বাজার কয়েক মাস ধরে লাগামহীনভাবে বেড়েছে। গত সপ্তাহেও মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে। তবে বর্তমানে কিছুটা কমে আগের বাড়তি দামেই চলছে মোটা চাল বিক্রি। বর্তমানে মোটা চাল ৪৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কারওরান বাজারের চালের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পারিজাত ৪৩ টাকা, চিনিগুড়া ৮৫ টাকা, কাটারি ৬২, ছিদ্র কাটারি ৭৫ টাকা, বাসমতি ৭২ থেকে ৭৩ টাকা, নাজির ৬০ থেকে ৬৫, পাইজাম ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। সপ্তাহভেদে প্রত্যেক চাল কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা কমছে পাইকারি বাজারে। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। চালের দাম বাড়া ও কমার হারের এই পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়, দাম বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে আর কমছে জ্যামিতিক হারে। চালের দাম নিয়ে কথা হয় কারওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক নাজির আহমেদ তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের চাইতে প্রত্যেক চালের দাম কিছুটা কমেছে। সহসাই আরও কমবে কী না জানতে চাইলে বলেন, কমলেও খুব বেশি কমবে না। আর যদি বিদেশ থেকে অধিক পরিমাণ চাল আমদানি করা হয়, তাহলে হয়তো দ্রুতই চালে দাম পরে যাবে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের নাহার রাইস এজেন্সির মালিক আবু হোসেন বলেন, চালের দাম কমতে শুরু করেছে, তবে খুব বেশি কমবে না। তার যুক্তি এবার বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে, যে কারণে ধান উৎপাদন কিছুটা কম, সঙ্গত কারণেই দাম খুব বেশি কমবে না।