‘জজ আদালতের হিসাব শাখা থেকে দু’আইনজীবী ও জারিকারক তুলে নিলেন ২০ লাখ টাকা
সিলেট প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতের হিসাব শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে দু’আইনজীবী ও এক জারিকারক সংঘবদ্ধ হয়ে মামলার প্রায় ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। আদালত অর্থ জালিয়াতির বিষয়টি অবগত হয়ে দণষ্ফআইনজীবী ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে এর ব্যাখা প্রদানের জন্য আদেশ প্রদান করেছেন।’ আদালত পাড়ায় বৃহস্পতিবার এ ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি হয়ে উঠে টক অব দ্যা সুনামগঞ্জ।’ অবশ্য অভিযুক্ত আইনজীবীরা ঘটনা স্বীকার করলেও তারা জানিয়েছেন আদালতের হিসাব শাখায় তৎকালনীন সময়ে কর্মরত এক জারিকারক কৌশলে এ ঘটনার সাথে তাদেরকে জড়িয়েছেন।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অগ্রক্রয় মামলা ০৭/২০০৭ সোলেসূত্রে নিস্পত্তির পর প্রতিপক্ষের আইনজীবী আলী আহমদ মূল আদালতে দরখাস্তের সঙ্গে পেমেন্ট অর্ডার দাখিল করেন। মূল আদালতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর তা পরিশোধের জন্য জন্য হিসাব শাখায় প্রেরণ করা হয়। হিসাব শাখায় পেমেন্ট অর্ডার যাওয়ার পর পেমেন্ট অর্ডার রেজিস্টার পর্যালোচনা করে দেখা যায় ঐ অগ্রক্রয়ের মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অ্যাডভোকেট মাজাহারুল ইসলাম হিসাব শাখায় সরকারি পেমেন্ট অর্ডার দাখিলক্রমে ওই মামলার ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার চেক উত্তোলন করে নেন।’জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে অ্যাডভোকেট মাজাহারুল ইসলাম চেক গ্রহণ করেছেন এবং নিজ ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে তা নগদায়ন করেছেন। এভাবে একই পন্থায় বিবিধ অগ্রক্রয় মামলা নম্বর ১৬/২০০৯’এর ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০ টাকা, ০৩/২০১৩ নম্বর মামলার ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮২৫ টাকা, ৪১/২০০৫’এর ২ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা এবং ০৯/২০০৭’এর ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেয়া হয় এবং অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলামের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ওইসব চেকের টাকা নগদায়ন হয়।’
অপর আরো একটি বিবিধ অগ্রক্রয় মামলা ২২/২০১২’এর ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা একই কায়দায় উত্তোলন করা হয় এবং এই চেকটি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রেজাউল করিমের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নগদায়ন করা হয়।’
জেলা আইনজীবী সমিতিরএক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জানান, ‘ অগ্রক্রয় মামলার টাকা তোলার জন্য তোলার যে আদালতের মামলা, ওই আদালতে টাকা উক্তোলনের কোন দরখাস্তই নেই। রেকর্ডে পেমেন্ট অর্ডার পাসের আদেশও নেই। পেমেন্ট অর্ডার সমূহ জালিয়াতির মাধ্যমে সরাসরি আদালতের হিসাব শাখায় দাখিল করা হয়েছে এবং তা পাস করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি পেমেন্ট অর্ডার অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বুঝে নেন এবং একটি পেমেন্ট অর্ডার অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম বুঝে নেন।’
এই বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলী আহমদ বলেন,‘আমার একটি অগ্রক্রয়ের মামলার ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে। ২০১৫ ইংরেজিতে পিয়ন ছোবহানের সহযোগিতায় অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম ওই টাকা তুলে নিয়েছেন। হিসাব শাখা এবং মাজহারুল ইসলাম এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। আমরা ফৌজদারী মামলা দায়ের করবো।’
এই মামলার প্রার্থী পক্ষের অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাস রায় বলেন, ‘এই ঘটনায় আদালত এবং আইনজীবীর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুন্ন হয়েছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম শুক্রবার বললেন,‘ একজন আইনজীবী হিসাবে কেবল দরখাস্ত করেছি, দরখাস্তের ভিত্তিতে চেক ইস্যু হয় এবং আমার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। পরবর্তীতে টাকা উত্তোলন করে পক্ষকে প্রদান করেছি।, এখন দেখা যায় মামলার মিমাংসা হয়নি এবং হিসাব শাখার জারিকারক আব্দুছ ছোবহান জালিয়াতির মাধ্যমে ভুল মানুষকে পক্ষ করে আমাকে এ অপকর্মের সাথে যুক্ত করেছেন।’
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার, আমাকে হিসাব শাখার জারিকারক কৌশলে ব্যবহার করেছেন। স্বাক্ষর নিয়ে দুই লাখ ৩১ হাজার টাকার চেক আমার ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছেন। কিন্তু টাকা তিনিই নিয়েছেন।’
অবসরপ্রাপ্ত জারিকারক আব্দুছ ছোবহানের বক্তব্য জানতে শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করে বক্তব্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। ’
এদিকে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি অবগত হয়েই সুনামগঞ্জ সদর আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন টাকা উত্তোলনকারী দু’ আইনজীবী এবং তৎকালীন হিসাব রক্ষক বেনু চন্দ্র রায়কে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বুধবার আদেশ প্রদান করেছেন। এই আদেশের অনুলিপি অবগতির জন্য বিজ্ঞ জেলা জজ বরাবরেও পাঠানো হয়েছে।