ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনে খালেদা জিয়া বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে সরাতে ‘নর্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে ক্ষমতাসীনরা। ঢাকার বকশীবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে দেওয়া মিনিট বিশেকের বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী এবং দলীয় লোকজন মামলা শেষ হওয়ার আগেই বিচার নিয়ে কথা বলছেন, ‘মুখে মুখে রায়’ দিয়ে দিচ্ছেন। তারা বলছেন যে এই মামলায় আমার সাজা হয়ে যাবে এবং আমাকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হবে।… এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, আমি আদৌ এ মামলায় ন্যায়বিচার পাব না।
খালেদার অন্যতম আইনজীবী নুরুজ্জামান তপন বলেন, তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, তাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতারা। অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দিতে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা করছে তারা। তৃতীয় দিনেও নিজের বক্তব্য শেষ না করে খালেদা জিয়া ক্লান্তি ও অসুস্থতার কথা জানিয়ে পরবর্তী তারিখে বাকি বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি চাইলে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান তা মঞ্জুর করে ৯ নভেম্বর দিন রাখেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলাও ওই দিন একই আদালতে শুনানির জন্য উঠবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন গত ১৯ অক্টোবর। সেদিন তিনি দাবি করেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে এতিমদের জন্য আসা একটি টাকাও তছরুপ বা অপচয় করা হয়নি, তা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। এরপর ২৬ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থনের দ্বিতীয় দিনে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এ মামলা ‘ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। আর গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া স্থায়ী জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা নাকচ করে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। এদিন আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে গ্রেফতার হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তখন আমাদের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনো জাদুর কাঠির বলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে, অথবা আদালত থেকে খারিজ আদেশ দেওয়া হয়েছে! আর আমার বিরুদ্ধে মামলা চলছে রকেটের গতির মত। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এখন ক্ষমতায় থাকলে কোনো ‘জাদুর কাঠি’ ব্যবহার করতেন না। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার করাতেন না বা আদালতে ‘হস্তক্ষেপ’ করতেন না। স্বল্প সময় বক্তব্য দিয়ে কিছু সময় থেমে খালেদা জিয়া বলেন, আমার বক্তব্য কিন্তু শেষ হল না। আগামি তারিখে আমি আরও কথা বলব। এখন আমি ক্লান্ত ও অসুস্থ। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।