সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী রাস মেলা শুরু
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
সুন্দরবনের দুবলার চরে তিনদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস মেলা শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এমেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বন বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দর্শনার্থীদের নামে বনে প্রবেশ করে কেউ হরিণ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারেও প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেছে বলে জানা গেছে। তবে অন্যান্য বার তীর্থ যাত্রীদের জ¦ালানী কাঠের অনুমতি দিলেও এবার তাতে নিষেজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে পাপ মোচনের লক্ষ্যে প্রায় শত বছর ধরে সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোল নামক স্থানে রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর কার্তিক ও অগ্রহায়ন মাসের শুকলা পক্ষে ভোরা পূর্ণিমা তিথির সময় জোয়ারের লোনা পানিতে স্নানে পাপ মোচন হয়ে মনের বাসনা পূর্ণ হবে এ আশা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা রাস মেলায় যোগ দেয়। এবছর তিথি নক্ষত্রের কারণে এমেলা কার্ত্তিক মাসে পড়েছে বলে শাস্ত্রীয় পন্ডিতরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া কেউ আসে সন্তান কামনায়, কেউ আসেন রোগ মুক্তির কামনায়। আগামি ২ নভেম্বর শুরু হবে মেলা ৩ নভেম্বর পূর্ণিমার জোয়ারের লোনা পানিতে স্নানের মধ্যদিয়ে এবং ৪ নভেম্বর এ মেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে বলে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে। রাস মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করেছে। রুটগুলো হল ঢাংমারী-চাঁদপাই-পশুর নদী হয়ে দুবলার চর আলোরকোল, বলেশ্বর নদী হয়ে দুবলার চর আলোরকোল, কচিখালী শেলার চর হয়ে দুবলার চর আলোরকোল, পশ্চিম বনবিভাগের বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা খাল-হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর আলোরকোল, ইছামতি নদী-দোবেটি-আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগা দোবেটি হয়ে আলোরকোল, মাদার গাং-খোবরাখালী ভারানী-দোবেটি-আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগা দোবেটি হয়ে আলোরকোল, খাসিটানা-বজবজা-আড়-য়া শিবসা-শিবসা নদী-মরজত হয়ে দুবলাচর আলোরকোল, শিবসা-মরজাদ হয়ে দুবলা আলোরকোল। এসব রুটগুলোতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের পাশাপাশি র্যাব, কোষ্টগার্ড, পুলিশ, বনকর্মীরা ও নৌবাহিনীর টহল থাকছে। এছাড়াও দর্শনার্থীদের নামে বনে প্রবেশ করে কেউ হরিণ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারেও প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। যার নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে ওই রুটগুলোতে বনবিভাগ টহল জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন। সুন্দরবনের পূর্বের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে জানা যায় মেলার সময় দর্শনার্থীদের আগ্নেঅস্ত্র বহন নিষিদ্ধ থাকলেও চোরা শিকারীরা ফাঁদ, বশিসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকারে মেতে ওঠে। তবে অন্যান্য বছর বনে তীর্থ যাত্রীদের জ¦ালানী কাঠের অনুমতি দিলেও এবার তাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বনবিভাগ। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক এস এম শোয়াইব খান বলেন,অন্যান্যবার তীর্থ যাত্রীদের জ¦ালানী কাঠের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এবার বিভিন্ন কারণে আর দেয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ এবার তাদের জ¦ালানী কাঠ নিয়ে বনে যেতে হবে। দর্শনার্থীদের নামে বনে প্রবেশ করে কেউ হরিণ শিকার সহ নানা ধরনের অপরাধ যাতে করতে না পারে সে জন্য বনবিভাগ এখন থেকে টহল জোরদার করেছে বলে তিনি জানান। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও মোঃ বশিরুল-আল-মামুন বলেন,রাশ মেলাকে ঘিরে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সকল ষ্টেশন কর্মকতা ও টহল ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন টিম এক সপ্তাহে ধরে টহল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজেও টহল কার্যক্রম চালাবে বলে জানিয়েছে।