সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে নিউ জিল্যান্ডকে ৬ রানে হারিয়েছে ভারত। ৩ ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি হারলেও পরের দুটিতে জিতল বিরাট কোহলির দল। এই নিয়ে তারা জিতল টানা সাতটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ।
কানপুরে রোববার ৫০ ওভারে ভারতের ৩৩৭ রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ড থামে ৩৩১ রানে।
শেষ ৪ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান, হাতে ৬ উইকেট। ম্যাচ হেলে তাদের দিকেই। কিন্তু দুর্দান্ত বোলিং করলেন বুমরাহ। আর কিউইদের আশা হয়ে থাকা টম ল্যাথাম ফিরলেন রান আউটে। তাতেই জয় আদায় করে নিল ভারত।
ভারত শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টসে হেরে। শুরুতে হারায় তারা আগের ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক শিখর ধাওয়ানকে।
এরপরই রোহিত ও কোহলির অসাধারণ জুটি। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ রোহিত এদিন ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোহলি তো সিরিজের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে। দুজনের ব্যাটে মাথা কুটে মরে কিউই বোলারদের সব প্রচেষ্টা।
রোহিত ১৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১০৬ বলে। বরাবরের মতোই সেঞ্চুরির পর হয়ে ওঠেন আরও ভয়ঙ্কর।কোহলি ফিফটি করেছিলেন ৫৯ বলে। সেখান থেকে পরের পঞ্চাশ করেন আর ৩৭ বলে।
সপ্তম ওভারে জুটি বেঁধেছিলেন দুজন, আলাদা হন ৪২তম ওভারে। ততক্ষণ গড়ে ফেলেন ২৩০ রানের জুটি।
১৪৭ রানে রোহিতের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ১৩৮ বলের ইনিংসে ১৮ চার ও ২ ছক্কা মেরেছেন রোহিত। ১৬৫ ইনিংসেই ছুঁয়েছেন দেড়শ ছক্কার মাইলফলক।
মাইলফলকে অবশ্য কোহলি ছিলেন যোজন যোজন এগিয়ে। ৯৬ বলে করেন তার ৩২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ইনিংসের পথে গড়েছেন দ্রুততম ৯ হাজার রানের রেকর্ড। ১৯৪ ইনিংসে মাইলফলক ছুঁয়ে পেছনে ফেলেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের ২০৫ ইনিংসের রেকর্ড।
কীর্তির শেষ নয় এখানেই। গড়েছেন অধিনায়ক হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (৬) ও সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড (১ হাজার ৪২৪)।
১০৬ বলে ১১৩ রানে আউট হন কোহলি। শেষ দিকে ১৭ বলে ২৫ করেন ধোনি। ১০ বলে ১৮ কেদার যাদব। আরও বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ভারত। তবে মিচেল স্যান্টনার ও টিম সাউদি একটু রাশ টেনে ধরায় থামে তারা ৩৩৭ রানে।
রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ড শুরু করেছির ঝড়ের গতিতে। ভুবনেশ্বর কুমারের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই কলিন মানরো মারেন এক ছক্কা, তিন চার।
বড় ভরসা মার্টিন গাপটিল ব্যর্থ শেষ ম্যাচেও। তবে মানরো ফিফটি করে ফেলেন ৩৮ বলেই। ভারতের মতো দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই নিউ জিল্যান্ড দিতে থাকে জবাব। মানরোকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
ভারতকে ম্যাচে ফেরান যুজবেন্দ্র চেহেল। এই লেগ স্পিনার ফিরিয়ে দেন হুমকি হয়ে ওঠা দুই ব্যাটসম্যানকেই। ৬২ বলে ৭৫ করে ফেরেন মানরো, ৮৪ বলে ৬৪ উইলিয়ামসন।নিউ জিল্যান্ডের আশা নিয়ে তখন এগোতে থাকেন প্রথম ম্যাচ জয়ের নায়ক টম ল্যাথাম। সেই জয়ের আরেক নায়ক রস টেইলর খানিকটা সঙ্গ দিয়ে ফেরেন ৩৯ রানে।
শেষ ১০ ওভারে কিউইদের প্রয়োজন ছিল ৯১ রান। ল্যাথামের সঙ্গে তখন দারুণ এক জুটি গড়েন হেনরি নিকোলস। সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ৪ ওভারে ৩৫।
এরপরই দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে ভারত। ২৪ বলে ৩৭ রান করা নিকোলসকে বোল্ড করে দেন ভুবনেশ্বর। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট ৫২ বলে ৬৫ রান করা ল্যাথাম। শেষ দিকে বুমরাহর দারুণ সব ইয়র্কার। ঝড় তোলার কথা যার, সেই ডি গ্র্যান্ডহোম ১১ বলে অপরাজিত মাত্র ৮ রানে। সব মিলিয়ে কাছে গিয়েও নিউ জিল্যান্ডের হার।
১০ ওভারে ৯২ রান দিয়েছেন ভুবনেশ্বর। আরেক পাশে ৪৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলকে জিতিয়েছেন বুমরাহ।
১৪৭ রানের ইনিংসে যদিও ম্যাচ সেরা রোহিত। সিরিজে দুটি সেঞ্চুরিতে সিরিজ সেরা কোহলি।সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৩৭/৬ (রোহিত ১৪৭, ধাওয়ান ১৪, কোহলি ১১৩, পান্ডিয়া ৮, ধোনি ২৫, কেদার ১৮, কার্তিক ৪*,; সাউদি ২/৬৬, বোল্ট ০/৮১, মিল্ন ২/৬৪, ডি গ্র্যান্ডহোম ০/৫৭, স্যান্টনার ২/৫৮, মানরো ০/১০)।
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩১/৭ (গাপটিল ১০, মানরো ৭৫, উইলিয়ামসন ৬৪, টেইলর ৩৯, ল্যাথাম ৬৫, নিকোলস ৩৭, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮*, স্যান্টনার ৯, সাউদি ৪*; ভুবনেশ্বর ১/৯২, বুমরাহ ৩/৪৭, পান্ডিয়া ০/৪৭, আকসার ০/৪০, কেদার ০/৫৪, চেহেল ২/৪৭)।
ফল: ভারত ৬ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা
ম্যান অব দা সিরিজ: বিরাট কোহলি