October 23, 2024, 1:41 pm

সংবাদ শিরোনাম
পেট্রাপোলে অমিত শাহ’র আগমন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৪ দিন আমদানি রপ্তানি বন্ধ আব্দুস সালাম বাবলা’র বাড়িতে হামলা ও পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগের ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেন এস এম জিলানী সিলেট তামাবিল মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তল্লাসি চলছে কুড়িগ্রামে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফুলবাড়ীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ শেরপুরে নদের পারে দুর্গন্ধ, কাছে যেতেই মিলল কবিরাজের মাটিচাপা দেওয়া অর্ধগলিত লাশ মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাকিব ভক্তদের উপর দূর্বৃত্তদের হামলা উখিয়ায় অস্ত্র ও এ্যামোনেশনসহ আরসা কমান্ডার আটক অমিত শাহ পেট্রাপোলে আসছেন তাই বেনাপোলে ৪ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে যুবকের মৃত্যু চিলমারীতে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু

কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ: তথ্যমন্ত্রী

কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ: তথ্যমন্ত্রী

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইনে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির উসকানি বন্ধ করতে হবে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলছেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সামরিক নয়, কূটনৈতিক তৎপরতায় বিশ্বাসী। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে গতকাল সোমবার তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ইনু বলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যাটি জাতিগত, কোনো ধর্মীয় সমস্যা নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে ফেরত পাঠানো এবং মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজ দেশে পুনর্বাসনই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করার জন্য দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করনে জাসদ সভাপতি ইনু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সামরিক নয়, কূটনৈতিক তৎপরতায় বিশ্বাসী। দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির সাথে আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় তথা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমাধানের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে পাচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আশা করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যুদ্ধকে আমরা সমাধান মনে করি না। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ইনু বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক এবং প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ সমস্যার ফলে উদ্ভূত উদ্বাস্তু সমস্যাকে কূটনৈতিক মুন্সিয়ানার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় হামলার ঘটনার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নতুন করে দমন অভিযান শুরু করলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। জাতিসংঘের হিসাবে এরইমধ্যে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেএবং পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তা দশ লাখে পৌঁছাতে পারে। মিয়ানমারে জাতিগত দমন-পীড়নের কারণে আরও চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি নয়, এমনকি তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতেও তারা নারাজ। রাখাইনের ঘটনাপ্রবাহকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং দাবি করেছেন, রোহিঙ্গা বলে কোনো জাতিসত্ত্বা তার দেশে কখনোই ছিল না। যারা নিজেদের রোহিঙ্গা বলছে, তারা আসলে ‘বাঙালি চরমপন্থি’। বিদেশি সংস্থাগুলো যা বলছে তাতে কান দিয়ে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যেই মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও ড্রোন প্রায়ই আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে, যা নিয়ে দুই দফা প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশ সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের দিকে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি সীমান্তের নিজেদের অংশে ভূমি মাইনও পুঁতেছে মিয়ানমার, যাকে উসকানিমূলক কর্মকা- হিসেবে বর্ণনা করে সতর্ক করে দিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া মানবিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এ সমস্যার সমাধানে সরকারের কূটনৈতিক কর্মকা-গুলোর কথাও জানান। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, অন্যের সমস্যা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। আমরা বর্ডার বন্ধ করে দিয়ে এ সমস্যা এড়াতে পারতাম। কিন্তু মানবতা ও মনুষ্যত্বকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে আমরা সমস্যাটা গ্রহণ করেছি, কারণ মানবিক সংকট নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার রাজনীতি করে না। অন্যরাও এ নিয়ে রাজনীতি করবেন না- সেটাই একান্ত কাম্য। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে ইনু বলেন, এই মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্ব এবং জাতিসংঘ যে ব্যাপক তৎপরতায় কাজ করছে তা খালেদা জিয়া ‘দেখতে পারছেন না বা দেখতে চাচ্ছেন না’। জঙ্গিদমন আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য রোহিঙ্গা সমস্যা ব্যবহার করাই তার চক্রান্ত। এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, কোনো সমাধান তার কাম্য নয় বরং রোহিঙ্গা সমস্যাকে কেন্দ্র করে সরকারকে ঘায়েল করার এক চক্রান্তের জাল বোনার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়া। সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ খুঁজছেন তিনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে ৭০ হাজার গর্ভবতী বা স্তন্যদায়ী বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সংবাদ সম্মেলনে ইনু বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে জানা গেছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭০ হাজার নারী গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী। এসব নারীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিশেষ যতœ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্তন্যদায়ীদের শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক উল্লেখ করে ইনু আরো বলেন, মিয়ানমার সরকার একটি জাতিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার চেষ্টা করছে। এদিকে অনেক বাংলাদেশি তরুণই মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গা তরুণীদের বিয়ে করছেÑএমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ইনু বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। তবে মানবিক কারণ থেকে রোহিঙ্গা তরুণীদের বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ সুযোগে কিছু অসাধু লোক অসহায় রোহিঙ্গা তরুণীদের বিয়ে করে পাচার করে দিতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তবে তারা সবাই আবার মিয়ানমারে ফিরে যায়। পরে ১৯৯২ সালে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন মিয়ানমারে ফেরত যায়। বাংলাদেশে থেকে যায় ৩৪ হাজার জন। তাদেরসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে চার লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে আরো চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার ছাড়াও তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর