January 3, 2025, 10:38 am

সংবাদ শিরোনাম
সেনাপ্রধান খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় হিলিতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় সমাজসেবা দিবস পালন কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা নেই দুদিন, বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা লামায় তিনদিন পর নিখোঁজ স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার চিলমারীতে কৃষক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত বামনায় নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে বিএনপি’র ৩১ দফার বিকল্প নেই -ব্যারিস্টার জামান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত নিম্নআয়ের মানুষ শিবচরে বিআরবি ক্যাবল বিক্রয় কেন্দ্রে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ; প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট বনার্ঢ্য আয়োজনে নীলফামারীতে ছাত্রদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে খাল খননের নামে বরাদ্দ সরকারী অর্থ ভুয়া মাষ্টারোলের মাধ্যমে আত্নসাতের অভিযোগ

মোঃ জুলহাজুল কবীর নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ এলজিইডি এবং নলশীষা খাল ও পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের (এনকেবিএসএল) কার্য নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে শ্রমিকের পরিবর্তে মেশিন দিয়ে  খাল খনন করে ভুয়া মাষ্টাররোল তৈরী  এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সমিতির টাকা আত্মসাতের  অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনায় নলশীষা খাল, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের ৭৩ জন সদস্য গত  ১৮ এবং ২৫ এপ্রিল দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা প্রকৌশলী এবং সমবায় কার্যালয়ে  পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্র, সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এলজিইডির অধিনে অংশগ্রহনমূলক  ক্ষুদ্র সেচ  প্রকল্পের অধিনে    উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ নলশীষা খাল খনন কাজ শুরু হয়। ব্যায় ধরা হয় ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।  প্রকল্পের বিধি অনুযায়ী গঠন করা হয় নলশীষা খাল, পানি ব্যববস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড।
সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, বিধি অনুযায়ী এ খাল শ্রমিকদের দিয়ে খনন করার কথা। কিন্তু এলজিইডির কতিপয় কর্মকর্তা এবং সমিতির নির্বাহী কমিটির সভাপতির বিনোদনগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল রানা যোগসাজোশে শ্রমিকদের পরিবর্তে স্কেভেটর যন্ত্র দিয়ে নামমাত্র খাল খনন করেন। পরে তারা জানতে পারেন যে, স্কেভেটর মেশিন দিয়ে খাল খননে ব্যায় হয়েছে মাত্র ২৫ লাখ টাকা।  বরাদ্দের বাকিঁ টাকা এলজিইডির কর্মকর্তা এবং সমিতির সভাপতি সোহেল রানা যোগসাজোশে  শ্রমিকদের ভুয়া মাষ্টাররোল তৈরী করে আত্মসাত  করেছেন।
লিখিত অভিযোগে আরো জানানো হয়, খাল খননে শ্রমিকদের ২৬ টি গ্রুপ তৈরী করা হয়েছিলো। এসব গ্রুপের সদস্যদের নামে বিরামপুর জনতা ব্যাংকে  হিসাব খোলা হয়। কিন্তু প্রত্যেকের হিসাবের বিপরীতে দেওয়া চেক বইগুলো সমিতির সভাপতি  সোহেল রানা এবং সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান কৌশলে নিজেদের কাছে রেখে দেয়। সমিতির সদস্যদের অজ্ঞাতে সেই চেক বইগুলোতে সইও নিয়ে রাখে সোহেল রানা এবং মনিরুজ্জামান। পরবর্তীতের  সেই চেকগুলো দিয়ে খাল খননের বরাদ্দের টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল বিরামপুর জনতা ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে ২০১৬ সালে বিভিন্ন সময়ে ২১ টি দলের নামে হিসাব খোলা হয়েছে। বেশিরভাগ হিসাবই বন্ধ।
অভিযাগকারী সদস্যরা আরো জানিয়েছেন, সমিতির মোট সদস্য ১ হাজার ৩০০। প্রতি সদস্যের কাছ থেকে ভর্তি ফি ২০০ টাকা এবং মাসিক ৫০ টাকা করে চাঁদা উঠিয়েছে কিন্তু কাউকে কোন রশিদ দেয়নি। ভর্তি ফি ২০০ টাকার পরিবর্তে উঠানো হয়েছে ১০০ টাকা।  বর্তমানে সমিতিতে ২৬ লাখ টাকা থাকার কথা। এর মধ্যে সমিতির ১৫ জন সদস্যকে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সে হিসেবে সমিতির হিসেবে ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা থাকার কথা । কিন্তু সমবায় কার্যালয়ের অডিটের সময়  সমিতির কোষাগারে কোন টাকা নেই বলে জানানো হয়েছে। প্রায় অর্ধেক সদস্যদের সমিতির বই দিয়ে টাকা উঠানো হলেও দেওয়া হয়নি সদস্য নাম্বার। টাকা আত্মসাতে ঘটনা ধামাচাপা দিতে সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা দেখানো হচ্ছে ৭৩২ জনকে।
সমিতির সদস্যরা লিখিত অভিযোগে আরো জানান, সমিতির নিয়ম অনুযায়ী সাপ্তাহিক ও মাসিক সভার বিধান থাকলেও গত তিন বছরে কোন সভা হয়নি এবং সদস্যদের কাছে আয় ব্যায়ের হিসাবও জাননো হয়নি। সমিতির হিসাব চাইলে প্রথম দিকে টালবাহানা পরে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে শুরু করে সমিতির সভাপতি সোহেল রানা। সমতির সভাপতি এবং সম্পাদক গোপনে নতুন কমিটি করারও পাঁয়তারা করছে বলে লিখিত অভিযোগে জানানো হয়।
গত ২৫ এবং ২৬ এপ্রিল সরেজমিনে এলাকাবাসী এবং অভিযোগকারীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, খাল খননে শ্রমিকদের নয় স্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। নারায়নপুর গ্রামের মামনুর রশিদ, রুহুল আমিন, মেহের আলী, মাবিয়া খাতুন, মোছলেমা, রাজিয়া নামের অনেককেই  সঞ্চয় ও ঋণ পাশ বই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সদস্য নাম্বার দেওয়া হয়নি। এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে  নেওয়া হয়েছে মাসিক চাঁদাও।

২৬ এপ্রিল সমবায় কার্যালয় থেকে দেওয়া নলশীষা খাল, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে সমিতির হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৮০ হাজার ৯৬০ টাকা এবং ব্যাংকে জমা রয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯০ টাকা।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা   অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, সহকারী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমকে অভিযোগের তদন্ত করে আগামী ১০ মে’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নলশীষা খাল, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভপতি ইউপি সদস্য সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানান, সমিতির সদস্য ১৩০০ জন নয়। ৭৩২ জন। সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান ২৫ হাজার টাকা সঞ্চয় উঠিয়ে ব্যাংকে জমা না দেওয়ার প্রমাণ পেয়ে তাকেঁ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। বর্তমানে সমিতিটি দেশের অন্যতম সেরা সমিতি দাবী করেছেন সোহেল রানা। খাল খননে শ্রমিকের পরিবর্তে মেশিন ব্যবহারের বিষয়টি এলজিইডির বিষয় বলে তিনি জানান।
উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের জানান, সমিতির বিষয়টি তাদেঁর বিষয় নয়। খাল খননে শ্রমিকের পরিবর্তে মেশিনের ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে  নীতিমালায় শ্রমিক দিয়ে খাল খনন করার কথা স্বীকার করে জানান, “বিভিন্ন কারনে” মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মশিউর রহমান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৫মে২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর