সামাদ আজাদ সিলেট প্রতিনিধিঃ
ঘুম থেকে উঠে এক কাপ বেড টি দিয়ে শুরু হয় আজকের আধুনিক সমাজের দিন কিন্তু এই চা এর পেছনে যাদের অবদান কেমন আছে তারা? কেউ কি খোজ রাখে না এই চা শ্রমিকদের৷ দাস প্রথা রোহিত হয়েছে বহু আগেই কিন্তু মধ্যযুগীয় ভূমি দাসের মত চা-মালিকের বাগানের সাথে বাধা আছে এই চা শ্রমিকদের নিয়তি যুগের পর যুগ ৷নিজ দেশে প্রবাসী হয়ে রয়েছে চা শ্রমিকেরা ৷যুগের পর যুগ কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন৷ ২৬ ইঞ্চির বেশি বাড়তে না দেওয়া চা গাছের মত চা শ্রমিকদের জীবন আবদ্ধ আছে মালিকের দেওয়া ২২২ ফুট কুড়ে ঘরের মধ্যে ৷ চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প ৷ জাতীয় অর্থনীতিতে রয়েছে এর গুরুত্বপুর্ন অবদান৷দেশ বিদেশ রয়েছে এ চায়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা৷
অথচ মৌলভীবাজার সহ দেশের১৬৫ টি চা শ্রমিকেরা কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন৷ব্রিটিশ আমল থেকে মৌলভীবাজারের ৯২ টি চা বাগানে বংশ পরম্পরায় জীবন কাটাচ্ছে কয়েক হাজার চা শ্রমিক৷মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এ শিল্পের উন্নয়নে কাজ করলেও জীবন যাত্রার মানের কোন উন্নতি হয়নি এ সব অবহেলিত শ্রমিকদের৷কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন চা শ্রমিকের সাথে জানা যায় তাদের করুন জীবন যাত্রার কাহিনী৷দৈনিক ৮৫ টাকা মজুরী আর সপ্তাহে ৩কেজি আটার রেশনে চলে চা শ্রমিকদের জীবন৷
জীবনের তাগিদে দীর্ঘ দিন যাবৎ মজুরী বৃদ্ধি ,ভুমি অধিকার ,বাসস্থান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবী করে আসছে তারা কিন্তু বাস্তবায়নের অভাবে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে তারা ৷ সরকারী ভাবে তাদের আবাসস্থল নিজ নিজ নামে করে দেবার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চা শ্রমিকেরা রয়েছে ভিটে হীন এবং বাগান মালিকের দয়ায়৷
চিকিৎসা সেবা তো তাদের কাছে ডুমুরের ফুল৷ চা বাগান গুলিতে যে কয়েকটি ছোট ছোট হাসপাতাল রয়েছে সেখানেও রয়েছে ভাল ডাক্তার এবং প্রয়োজনীয় ঔষধের অভাব৷শিক্ষা ক্ষেত্রেও রয়েছে এরা বহু পিছিয়ে ৷ দু এক জনের সন্তান লেখাপড়া করলেও পাচ্ছে না চাকুরী৷
৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ স্বাধীনে অংশ গ্রহন করলেও অনেকে পায়নি তার যোগ্য সন্মান৷বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে তাদের দাবী তাঁর হস্তক্ষেপে যেন তারা নিজের নামে বাসস্থান টা পায়৷
সকালে চিনি ছাড়া এক মগ চা এবং দুমুঠো চাল ভাজা খেয়ে শুরু হয় তাদের দিন৷ সারাদিনে হাড় ভাঙা খাটুনিতে কমপক্ষে ২৩ কেজি চা পাতা অথবা ২৫০ টি গাছ কাটা অথবা এক একর কীটনাশক ছিটালে তবেই ধরা হয় হাজিরা৷ দুপুরে একটু চা পাতার চাটনী অথবা মুড়ি চানাচুর জোটে৷
জানা যায় ,চা শ্রমিকদের ২০ দফা দাবী লিখিত আকারে মালিক পক্ষের কাছে জমা দিলে কয়েক দফা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হলেও মালিক পক্ষের সময়ক্ষেপনের কারনে কোন সুফল পাওয়া যায়নি৷বিভিন্ন সময়ে সরকারী ও এনজিও মাধ্যমে সহযোগীতা পাওয়া গেলেও তা খুবই সামান্য৷
বাংলাদেশের চা বিশ্বের ২৫ টি দেশে রপ্তানী হয়৷ এই বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যারা সরাসরি জড়িত তারা যেন একটু ভাল ভাবে বাঁচতে পারে এটাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের একমাত্র চাওয়া৷
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৯এপ্রিল২০১৮/ইকবাল