প্রাইভেট ডিটেকটিভ ডেস্কঃ
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন একেবারে শূন্য। তাদের উন্নয়ন খালি ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে। ঢাকার বাইরের মানুষের দুরবস্থা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। গ্রামে গেলে বোঝা যায় মানুষের কী অবস্থা। সোমবার মতিঝিলের এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির এক প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী ২৪ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে এই প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়। এরশাদ বলেন, আওয়ামী লীগ বলে- মধ্য আয়ের দেশ। তাহলে পানির মধ্যে বস্তি কেন? ৪০ লাখ গরিব লোক কেন বস্তিতে বসবাস করে। কেন বারবার বস্তিতে আগুন লাগে? অসহায় মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করে, কেউ তার খবর রাখে না। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, রিজভী সাহেব বলেছেন- জাতীয় পার্টি সমর্থিত মানুষের নাকি অনেক অভাব। আমরা বিএনপিকে দেখিয়ে দিতে চাই আমাদের সমর্থক কত। ২৪ তারিখে আমরা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ করে এ কথার উত্তর দেব। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি নিজেই ভেঙে পড়ছে। তারা আবার অন্য দলের শক্তি নিয়ে কথা বলার সাহস পায় কোথা থেকে। আমাকে এবং আমার দলকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপি অনেক অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। তারা আমাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, কিন্তু ধ্বংস করতে পারে নাই। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। কেননা সারা বিশ্বের নজরদারিতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দুর্নীতি করার সুযোগ খুব কমই থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় আসবে না। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি। তার প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি সাধারণ জনগণকে ভালোবাসে। তাদের পাশে থাকে। জাতীয় পার্টিকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না উল্লেখ করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি ৯ বছর দেশ পরিচালনা করেছি। একটি মানুষও হত্যা হয় নাই, গাড়ি পোড়ানো হয় নাই, দেশ শান্তিতে পরিচালনা করেছি। অনেক উন্নয়ন করেছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ক্ষমতায় আসব। তিনি বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন নেই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এসবের জন্য দায়ী সরকার। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। আমরা ক্ষমতায় এলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা, আইনের শাসন কায়েম করব। তিনি বলেন, যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পানের দোকানে, চায়ের স্টলে, এখন ইয়াবা পাওয়া যায়। দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত যুবক-যুবতী বেকার। সংসারের বোঝা বহন করতে না পেরে মাদকাসক্ত হয়ে নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এরশাদ বলেন, লেখাপড়া এখন টিকমার্ক পদ্ধতিতে। জিপিএ-৫ পদ্ধতিতে শিক্ষাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। জিপিএ-৫ পদ্ধতি বাদ দেয়ার জন্য আমি সংসদে অনেকবার বলেছি, কোনো লাভ হয় নাই। আমরা ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা পদ্ধতিকে যুগোপযোগী করব। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, ৭ মার্চ একটি স্কুলছাত্রীর ওপর কীভাবে মানসিক নির্যাতন চালানো হলো। তার কোনো বিচার নেই। আপনারা (সরকার) আমাদের মা-বোনদের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। লেখাপড়ার মান নেই, চাকরি নেই, নিরাপত্তা নেই। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকারও নেই। জাপার মহাসমাবেশে রিজভীকে হাওলাদারের দাওয়াত। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার রিজভীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, আপনি (রিজভী) বলেছেন, এরশাদের দল ছোট দল। তার সমাবেশে অল্পসংখ্যক লোক হবে। আমি বলতে চাই আপনি আমাদের সমাবেশে আসুন, দেখে যান কতসংখ্যক লোক এরশাদের মহাসমাবেশে যোগ দেয়। কাচের ঘরে বসে ঢিল মারবেন না। তিনি বলেন, ৯টি বছর আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। বাচালের মতো কথা বলবেন না। সাধারণ মাটি ও মানুষের সঙ্গে এরশাদের যে সম্পর্ক আছে তা বিএনপির নেই। জাতীয় পার্টি সব সময় সংবিধানের ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস করে। হাওলাদার বলেন, গত নির্বাচনে আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলে আমরাই সরকার গঠন করতে পারতাম। আগামী নির্বাচনে আমরা সে ভুল আর করব না। মানুষ বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতীয় পার্টিই এবার সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, মীর আবদুস সবুর, হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন, বেগম রওশন আরা মান্নান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ বক্তৃতা করেন। প্রতিনিধি সভায় অন্যদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মেজর খালেদ আখতার (অব.), উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, কারি হাবিবুল্লা বেলালী, ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির, মো. আরিফুর রহমান খান, আলমগীর সিকদার লোটন, সরদার শাহজাহান, নুরুল ইসলাম নুরু, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, আশরাফ সিদ্দিকী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. ইসহাক ভুইয়া, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, নির্মল দাস, খোরশেদ আলম খুশু, এমএ রাজ্জাক খান, সালাহউদ্দিন খোকা মোল্লা, হারুন অর রশিদ, মো. জামাল রানা, সৈয়দা পারভীন তারেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৩মার্চ২০১৮/ইকবাল