ছাতক প্রতিনিধিঃ
ছাতকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ২৭শতক ভূমি জবর-দখল করেছে দূর্বৃত্তচক্র। চক্রটি শুধু ভূমি দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি নিজেদের দখল প্রক্রিয়া নিরাপদ করতে সাজানো মামলা দিয়ে স্কুলের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। ফলে জনমনে চরম অসন্তেুাষ ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, উপজেলার সিংচাপইড় ইউপির ১একর ৪৫শতক দানকৃত ভূমির উপর ১৯৬৮সালে প্রতিষ্ঠিত ৯২নং সদুখালী-নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭শতক ভূমি একই গ্রামের চেরাগ আলীর পুত্র আজিজুর রহমান জবর-দখল করে রেখেছে। ৩৭৫জেএলস্থিত পূর্ব ঝগঝাপ মৌজার এসএ রেকর্ডে ৫৭৬৬দাগের ৭একর ৮০শতক লায়েক পতিত ভূমির মধ্যে ২একর ১৯শতক ভূমি ১০৫৭নং খতিয়ানে ও ১একর ৭১শতক ভূমি ৮৯০নং খতিয়ানে রেকর্ডভূক্ত হয়। ১০৫৭খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক আজমান আলীর দানকৃত ১৯৬৯সালের ৩১মার্চ ৩৮১৩নং দলিলে ৫৫শতক ভূমি ১৯৬৮সালে প্রতিষ্টিত নোয়াগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দান করেন। একই দাগের আরো ৯০শতক ভূমি রেকর্ডিয় মালিক আব্দুর রহিমও বাতির আলী তৎকালিন সরকারের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার সিলেট বরাবরে ১৯৭২সালে ৮৯৪৭নং রেজিষ্ট্রি কবালামূলে দান করেন। ৫৭৬৬দাগের উত্তরে প্রায় ২৬শতক ভূমির উপর দিয়ে সেটেলমেন্ট জরিপের পর হতে গোপাট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। গোপাট ভূমির দক্ষিণে আজমল আলীর দানকৃত ৫৫শতক ভূমির একাংশে পাকাভবন নির্মাণ করে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম চলে আসছে। ২০০০সালে এভূমির উপর সরকারি ব্যয়ে দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পুরাতন পাকা গৃহ অকেজো হওয়ায় ২০১১সালে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৫৭৬৬দাগে আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণ করে। ঠিকাদার ২০১২সালের আগষ্ট মাসে ভবনের কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করেন। ৫৭৬৬নং দাগে বিদ্যালয় ভবনও ভোগদখলে থাকায় হাল জরিপে (রিভিশনাল জরিপ) এক ১একর ১৮শতক ভূমি স্কুলের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়। তবে ভবনের উত্তরে এখন স্কুলের নিজস্ব আরো ১১শতক থাকলেও এর উত্তরে কথিত গোপাট সংলগ্ন এলাকায় আরো ১৬শতক ভূমি জবর-দখল করে নিয়েছে আজিজুর। তার জবর-দখলে চলে গেছে সাবেক গোপাট হিসেবে ব্যবহৃত ৫৭৬৬দাগের প্রায় ২৬শতক ভূমি। গোপাটের উত্তরে ৫৭৬৪দাগে তার বসত বাড়ি থাকায় আজিজুর গোপাটসহ স্কুলের ভূমি জবর-দখল করেছে বলে জানা গেছে। ফলে তার জবর-দখলে থাকায় চলতি ভূমি জরিপে ২৭শতক ভূমি স্কুলের নামে রেকর্ড হয়নি। এদিকে স্কুলের ৩৮১৩/১৯৬৯নং দলিলের ভূমি জবর-দখলের উদ্দেশ্যেই আজিজুর রহমান ৫৭৬৬দাগে ২০১১সালের ১১অক্টোবর ৪০২৩নং রেজিষ্ট্রি কবালা সৃজন করে মনগড়া চৌহদ্দি দিয়ে ১৯শতক ভূমির মালিকানা দাবি করে স্কুলের বিরুদ্ধে আদালতে একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেন। যদিও দলিল দাতা সালেতুন নেছার এ দাগের ভূমিতে কোন রেকর্ডিয় মালিকানা এমনকি ভোগ-দখলিয় স্বত্ব নেই। এছাড়া ভূঁয়া ব্যক্তিদের নাম দেয়া হয়েছে দলিল দাতা, সাক্ষি ও সনাক্তকারির তালিকায়। সালেতুন নেছার কথিত দলিলের ভূমিতে ২০০০সাল থেকে স্কুলের একাধিক ভবন নির্মাণ করে পাঠদান চলে আসছে। জানা গেছে, ৫৭৬৬দাগের ৭একর ৮০শতক ভূমিসহ অন্যান্য দাগের ৫৩একর ৭০শতক ভূমির বাটোয়ারা দাবিতে ১৯৭৫সালে সিলেটের ১ম সাব-জজ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা (নং ১৫০/১৯৭৫ইং বর্তমানে সুনামগঞ্জ আদালতে ৮৮/১৯৮৫ইং) বিচারাধিন রয়েছে। মামলার ৩৩নং বিবাদি চেরাগ আলীর মৃত্যুর পর পুত্র আজিজুর রহমান এ মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। কিন্তু এ বাটোয়ারা মামলায় ৫৭৬৬দাগে ২একর ৪০শতক ভূমির মালিকানা দাবি করলেও স্কুলের ভূমির উপর আজিজুরের কোন দাবি (ছাহাম) ছিলনা। ছাতক শিক্ষা অফিসের স্মারক নং ৫১৪, তাং ১৭.০৫.২০১৫ইং মূলে এসএমসির সাবেক সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম তালেব ৯২নং সদুখালী-নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্থ ও জবর-দখলিয় ভূমি উদ্ধারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ২০১৭সালের ৮নভেম্বর সিলেট শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সুনামগঞ্জ এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী ও ছাতক এলজিইডির প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা স্কুলটি পরিদর্শন করে গাছের শাখা-প্রশাখা প্রসারিত হয়ে স্কুলের ছাদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হওয়ায় এগুলে কাটার জন্যে এসএমসির উপর দায়িত্ব দেন। পরে ২০১৭সালের ৯নভেম্বর সভাপতি লিখিতভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে ডাল কাটার আবেদন করলে নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে এটি উপজেলা বিট অফিসারের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে বিট অফিসার এব্যাপারে ব্যবস্থা নেননি। এব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানিক চন্দ্র দাস জানান, প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের সাথে জড়িত একটি অসাধুচক্র স্কুলের মালিকানা ভূমি জবর-দখল করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানি করছে। উপজেলা বন কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন গাছের ডাল-পালায় স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্থ করার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে এব্যাপারে দ্রুত আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণে আশ্বাস দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাছির উল্লাহ খান জানান, স্কুলের বিরুদ্ধাচরণকারিরা হচ্ছে সমাজ ও জাতির শত্রু। তিনি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান বকুল বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির উন্নতি আশা করা যায়না। তাই শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদ্বেষি লোক হচ্ছে সমাজের শত্রু। সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে এসব সমাজের কীটদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ জন্যে তিনি স্কুলের ২৭শতক জবর-দখলিয় ভূমি উদ্ধারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৪ মার্চ ২০১৮/রুহুল আমিন